রাজ্যের বেহাল আর্থিক অবস্থার ছায়া পড়ল এ বার মাওবাদী মোাকবিলাতেও। কেন্দ্রীয় বাহিনী রাখার বিনিময়ে পি চিদম্বরমের মন্ত্রক যে বিরাট অঙ্কের বিল ধরিয়েছে, তা কমানো বা মকুবের আর্জি জানাল রাজ্য। সেই সঙ্গে জঙ্গি উপদ্রুত এলাকায় পরিকাঠামো উন্নয়নের টাকা যাতে আগাম পাওয়া যায়, তার আবেদন জানানো হল।
অর্থ সঙ্কটের বিষয়টি নতুন নয়। বামফ্রন্ট জমানায় রাজ্য বার বার কেন্দ্রের কাছে ঋণের সুদ মকুবের আর্জি জানাত, অথবা অর্থ সাহায্যের জন্য হাত পাতত। পট পরিবর্তনের পরেও পরিস্থিতিটা বদলায়নি। আগে অসীম দাশগুপ্ত যে কাজ করতেন, এখন সেই কাজই করতে হয় অমিত মিত্রকে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সম্মেলনে এসে রাজ্যের বকেয়া টাকা মকুব করে দিতে পীড়াপীড়ি করছেন খোদ পুলিশের ডিজি, এমন ঘটনা বিরল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে।
আজ ডিজি-আইজিদের সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বিরাট অঙ্কের বিল দিয়েছে, তা কমানো হোক। পুরোটাই মকুব করে দিলে আরও ভাল। কারণ এত টাকা দেওয়ার সাধ্য রাজ্য সরকারের নেই। নিরাপত্তা পরিকাঠামো নির্মাণের টাকাও খরচের পরে না দিয়ে, আগাম মিটিয়ে দেওয়া হোক। ডিজি যুক্তি দিয়েছেন, মাওবাদী সমস্যা কোনও একটি রাজ্যের সমস্যা নয়। গোটা দেশের সমস্যা। তাই মাওবাদী দমনের আর্থিক দায় পুরোপুরি রাজ্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়াটা অনুচিত। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, মাওবাদী এলাকায় সুরক্ষা পরিকাঠামো তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলিকে একশো শতাংশ অর্থ সাহায্য দেয়। এর কোনও ঊর্ধ্বসীমা নেই। শর্ত হল, রাজ্যকেই আগে টাকাটা খরচ করতে হবে। পরে কেন্দ্র পুরো টাকা মিটিয়ে দেয়। কিন্তু ভাঁড়ার শূন্য বলে পশ্চিমবঙ্গ ওই ক্ষেত্রে টাকাই খরচ করতে পারছে না। রাজ্য তাই দাবি তুলেছে, পরে না দিয়ে প্রথমেই টাকাটা তাদের হাতে দিক। রাজ্য সেই টাকা খরচ করবে।
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, মুখে না বললেও অনেক রাজ্যেরই একই দশা। তাই আজ ডিজি-সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে মাওবাদী সমস্যা নিয়ে আলোচনায় নপরাজিতবাবুর দাবিগুলিকে আরও কয়েকটি রাজ্য সমর্থন জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দেওয়া বিল মকুবের দাবি তুলেছে তারাও। এক দিকে অর্থের অভাব, অন্য দিকে লাল ফিতের ফাঁস। টাকা খরচ হতেও আঠারো মাসে বছর। পুলিশি আধুনিকীকরণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যের পুলিশ বাহিনীগুলিকে টাকা দেয়। সেই টাকা খরচ করার জন্য আবার পুলিশ-কর্তাদের রাজ্যের স্বরাষ্ট্র বা অর্থ দফতরের অনুমতি নিতে হয়। এত জটিলতা কাটানোর জন্যও আজ রাজ্য পুলিশের ডিজি-রা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। রাজ্য সরকারের বেহাল আর্থিক অবস্থার কারণে পুলিশ-কর্মীদের প্রশিক্ষণ ও গোয়েন্দা-ব্যবস্থাও মার খাচ্ছে বলে তাঁরা নালিশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও আজ ডিজি-সম্মেলনে গোয়েন্দা-ব্যবস্থা ও পুলিশকর্মীদের প্রশিক্ষণের উপরে জোর দিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলি তাই কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছে, রাজ্যের জন্য যোজনা বরাদ্দের আওতাতেই পুলিশ-প্রশিক্ষণের বিষয়টি আনা হোক। এর ফলে যোজনা কমিশনই ওই খাতে অর্থ বরাদ্দ নির্দিষ্ট করে দেবে।
দাবি দাওয়া মানা হবে, এমন স্পষ্ট আশ্বাস অবশ্যই মেলেনি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, মাওবাদী মোকাবিলায় এমন অভিনব সমস্যার কথা তাঁদের জানা ছিল না। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ সমস্ত দাবির একটি তালিকা তৈরি করেছেন। এ বার একটি একটি করে তা খতিয়ে দেখা হবে। |