আন্দোলনে যাবে এসইউসি
মিছিল নিয়ে সিদ্ধান্তের যথাযথ প্রয়োগ চায় আদালত
স্কুল থেকে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়া ঠেকাতে রাজ্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শুধু কাগজে-কলমে আটকে না রেখে তা কঠোর ভাবে প্রয়োগ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
এসইউসি-র ছাত্র সংগঠন ডিএসও গত সপ্তাহে বেহালার সাহাপুর মথুরানাথ বিদ্যাপীঠের ৩৫ জন ছাত্রকে মিছিলে নিয়ে গিয়েছিল। ওই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার রাজ্য সরকার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জে এন পটেল ও বিচারপতি অসীম রায়ের ডিভিশন বেঞ্চে হলফনামা পেশ করে। তার প্রেক্ষিতেই আদালতের ওই নির্দেশ। পাশাপাশি, স্কুলশিক্ষা দফতর নিযুক্ত তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছে, তার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার কী ব্যবস্থা নিল, তা পূজাবকাশের পরে আদালতে জানানোর নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতিরা। প্রসঙ্গত, অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি রাজ্য সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েও বলেছেন, সরকার নানা ‘ভাল উদ্দেশ্যে’ অনেক আইন করে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলি ঠিক মতো কার্যকর করা হয় না। এ ক্ষেত্রে যেন বিধিটি কঠোর ভাবে প্রযুক্ত হয়।
তবে স্কুল চলাকালীন ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান ঠেকাতে রাজ্য সরকারের উদ্যোগ ও কলকাতা হাইকোর্টের অসন্তোষের তোয়াক্কা না করেই বৃহস্পতিবার ধর্মতলায় বামফ্রন্টের ছাত্র-যুব সমাবেশে ফের স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। যা নিয়ে এ দিন নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবার আগরপাড়ার নেতাজি শিক্ষায়তন স্কুলের কয়েক জন ছাত্রকে স্কুলে ঢোকার আগেই রাস্তা থেকে ধর্মতলার ওই সমাবেশে ধরে আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ। তারা বিকেলে বাড়ি ফেরার পরে অভিভাবকেরা জানতে পারেন, স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোলেও তাঁদের ছেলেরা রাজনৈতিক সমাবেশে গিয়েছিল। এ দিন সকালে প্রধান শিক্ষকের কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে ওই অভিভাবকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে স্কুল ও খড়দহ থানায় স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।
যাদের ছাত্র সংগঠনের মিছিলে বেহালার ওই স্কুলের পড়ুয়াদের যাওয়া নিয়ে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের সূত্রপাত, সেই এসইউসি এ দিন ‘সর্বাত্মক আন্দোলন’-এর হুমকি দিয়েছে। তাদের সাফ বক্তব্য, স্কুল চলাকালীন পড়ুয়া-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান ‘নিষিদ্ধ’ হলে তারা তা মানবে না। এমনকী, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকেও গ্রাহ্য করছে না তারা।
বেহালার ওই স্কুলের ছাত্রদের মিছিলে যাওয়া নিয়ে সরকারি আইনজীবী অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন জানান, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুলশিক্ষা দফতর তদন্ত করে রাজ্য সরকারের কাছে বেশ কয়েক দফা সুপারিশ করেছে। সব সুপারিশই সরকার মেনে নিয়েছে। অবিলম্বে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হবে। তদন্তে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও শুরু হয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, কাগজে-কলমে থেকে-যাওয়া অন্য অনেক সিদ্ধান্তের মতো এটিও যেন অবহেলার শিকার না হয়। রাজ্য সরকার যেন দায়িত্বের সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে। রাজ্য সরকার জানিয়েছে, স্কুল চলাকালীন ছাত্র, শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মীকেউই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে যোগ দিতে পারবেন না। ডিভিশন বেঞ্চ আশা করে, এই নিয়ম আক্ষরিক অর্থেই রূপায়িত হবে।
পাশাপাশি, হাইকোর্টে এ দিন আবেদনকারী তাপস ভঞ্জ বলেন, বেহালার ওই স্কুলের ঘটনার সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে জুভেনাইল (কেয়ার অ্যান্ড প্রোটেকশন) অ্য্যক্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। কিন্তু ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ওই ঘটনায় ওই আইন প্রয়োগের সুযোগ নেই। তবে হাইকোর্ট মামলাটির নিষ্পত্তি করেনি এখনও। তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হল, পূজাবকাশের পরে রাজ্য সরকারকে হাইকোর্টে রিপোর্ট দিয়ে তা জানাতে হবে।
প্রসঙ্গত, আগরপাড়ার ওই স্কুলের ছাত্রদের অভিভাবকেরা সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে লিখিত অভিযোগ করতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক ও তাঁর ছেলের (সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া) অভিযোগ, কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও ‘প্রায় জোর করেই’ তাদের বামফ্রন্টের ছাত্র-যুব সমাবেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। স্কুলের কয়েক জন শিক্ষকের ইন্ধনেই ওই ঘটনা ঘটেছিল।
সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা স্থানীয় সিপিএম নেতা উদয়শঙ্কর ভট্টাচার্যের অবশ্য সাফাই, স্কুলে না এলে কেউ মিছিলে গেলে তার দায় স্কুলের নয়। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি সঞ্জয় রাহার হুমকি, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ সদুত্তর না দিলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’’
এসএফআইয়ের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির সদস্য বিমান পাল বলেন, ‘‘ওরা স্কুলের বাইরে থেকে ওরা স্বেচ্ছায় আমাদের সঙ্গে গিয়েছিল। ডিএসও-র সমাবেশে যে ভাবে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে এর কোনও মিল নেই।’’ এসইউসি-র রাজ্য সম্পাদক সৌমেন বসু এ দিন বলেন, “স্কুল চলাকালীন ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান নিষিদ্ধ করার রাজ্য সরকারি নির্দেশ জারি হলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে প্রচারসভা শুরু করেছি।” কিন্তু, স্কুল ফাঁকি দিয়ে ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান সাধারণত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা সমর্থন করেন না। ফলে এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ‘ভাবাবেগ’ এসএউসি-র বদলে সরকার এবং কলকাতা হাইকোর্টের সঙ্গেই থাকার কথা। কিন্তু সৌমেনবাবুর চ্যালেঞ্জ, “আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন পালন অনুষ্ঠানে কলকাতার রাজপথ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আট-দশ হাজার শিশুকে কলকাতায় এনে আন্দোলন করব। তাদের অভিভাবকেরা সঙ্গে এসে বা শিশুদের পাঠিয়ে সমর্থন জানাবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.