সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে আরও দু’টি ইউনিট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ৮০০ মেগাওয়াট করে মোট ১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ওই দু’টি ইউনিট থেকে। শুক্রবার সাঁওতালডিহিতে এসে এ কথা জানান রাজ্যের বিদ্যুৎ এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত।
এ দিন সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ৬ নম্বর ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মণীশবাবু। পরে তিনি বলেন, “সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন ৭ ও ৮ নম্বর ইউনিট তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দু’টি ইউনিট চালু হলে রাজ্যের বিদ্যুৎ চাহিদা অনেকটাই মেটানো সম্ভব হবে।”
প্রসঙ্গত, এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ১২০ মেগাওয়াট করে মোট ৪৮০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন চারটি ইউনিটই পুরনো হয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম বা পিডিসিএলের ব্যাখ্যা, পুরনো ইউনিটগুলিতে উৎপাদন ব্যয় প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছিল। তারই পরিবর্তে ২৫০ মেগাওয়াট করে নতুন দু’টি ইউনিট নির্মাণ করা হয়েছে। ৫ নম্বরটি আগেই উৎপাদন শুরু করেছে। ৬ নম্বর ইউনিটে পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছিল। উৎপাদন শুরুর নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার দু’বছর পরে এ দিন থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে ৬ নম্বর থেকে। বিদ্যুৎমন্ত্রীর কথায়, “নতুন ইউনিট নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যেই অধিগৃহীত জমি আছে।” স্থানীয় ভাবে পুরনো ইউনটিগুলি সংস্কার করে চালানোর দাবি উঠলেও রাজ্য সরকার ওই ইউনিটগুলি রাখার পক্ষপাতী নয় বলেও মন্ত্রী জানান।
তবে সাঁওতালডিহির নতুন ইউনিট নির্মাণের পাশাপাশি রাজ্যের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার সাগরদিঘি ও বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নতুন ইউনিটের উপরেও ভরসা করছে। মণীশবাবু বলেন, “সাগরদিঘিতে ৫০০ মেগাওয়াট করে দু’টি ইউনিট তৈরি হচ্ছে। |
বক্রেশ্বরে ৫০০ মেগাওয়াটের নতুন ইউনিট তৈরি হচ্ছে।” পাশাপাশি গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন যোজনা নিয়ে পূর্বতন বাম সরকারের সমালোচনা করে বিদ্যুৎমন্ত্রী বলেন, “এ ক্ষেত্রে আগের সরকার নিজেদের কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী তিন বছরে রাজ্যের সমস্ত গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।” গ্রীষ্মকাল ছাড়া এ রাজ্যে ‘বিদ্যুৎ ঘাটতির সমস্যা বিশেষ নেই’ নেই বলেও দাবি করেছেন মন্ত্রী। যদিও ঘটনা হল, এ দিন মন্ত্রীর সাঁওতালডিহি সফরের মাঝেই মিনিট পনেরো-কুড়ির জন্য লোডশেডিং হয়েছিল। পিডিসিএলের দাবি, ৬ নম্বর ইউনিটে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য সামান্য সময় বিদ্যুৎ ছিল না।
৬ নম্বর ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরে মন্ত্রী যান টাউনশিপে বিদ্যুৎকেন্দ্রের হাসপাতাল পরিদর্শনে। ১০ শয্যার এই হাসপাতাল ১৯৭৩ সালে উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী। বর্তমানে হাসপাতালের পরিকাঠামো বেহাল। অপারেশন থিয়েটার বন্ধ আছে দীর্ঘদিন। পরিকল্পনা উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। দ্রুত সার্বিক উন্নয়ন হবে এই হাসপাতালের।”
মন্ত্রীর কাছে এই বিদ্যুৎকৎকেন্দ্রে কর্মসংস্থান-সহ একাধিক দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তাঁদের অন্যতম দাবি ছিল, এখানে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি। উল্লেখ্য, ৫ ও ৬ নম্বর ইউনিট তৈরির সময়ে বরাতপ্রাপ্ত বিভিন্ন ঠিকাদারি সংস্থায় কাজ পেয়েছিলেন এলাকার যুবকেরা। দু’টি ইউনিটে উৎপাদন শুরু হওয়ার পরে ওই ঠিকা শ্রমিকেরা কাজ হারিয়েছেন। মন্ত্রীর আশ্বাস, “নতুন ইউনিট দু’টি নির্মাণের সময়েও স্থানীয় যুবকেরা অগ্রাধিকার পাবেন। এলাকায় অনেক কর্মসংস্থান হবে।” এ ছাড়াও এলাকার ৭টি গ্রামের জমিহারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত কমিটি এ দিন মন্ত্রীর কাছে অভিযোগ করে, বিদ্যুৎকেন্দ্রে নির্মাণের জন্য প্রায় ৪০ বছর আগে জমি অধিগ্রহণ করা হলেও জমিহারারা ‘প্রাপ্য’ সুযোগসুবিধা পাননি। মণীশবাবু এ দিন অযোধ্যা পাহাড়ে পর্যটন শিল্প গড়ার বিষয়ে সরকারি পরিকল্পনার বিষয়টিও জানান। তাঁর কথায়, “পর্যটন মন্ত্রীর সঙ্গে অযোধ্যা পাহাড়ের পর্যটন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওরা আমাদের কাছে প্রস্তাব ও পরিকল্পনা দেবে। সেই প্রস্তাব কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হবে।” |