অতিথি আপ্যায়নে খুশি হয়ে
পদোন্নতি ঘটালেন সাহেবরা

পুজো শুরু সেই ১৮৪৯ সালে। সাবেকি ঢঙে প্রতিমা তৈরি হয় ঠাকুরদালানেই। বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে গত ১৬২ বছর ধরে ঐতিহ্যের এই পুজো হয়ে আসছে বেলডাঙার চট্টোপাধ্যায় পরিবারে। নিয়ম মেনে পুজোতে বলি দেওয়ার রীতিও ছিল প্রথম থেকেই। তবে এখন সে সব বন্ধ। প্রায় লটারি করে সেই প্রথা ভেঙে বন্ধ করা হয়েছে বলি। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বলি বন্ধে মতানৈক্য থাকলেও মানবিকতার খাতিরে বন্ধ হয়েছে বলি।
বলি বন্ধের সেই আশ্চর্য গল্প শোনালেন আনন্দময় চট্টোপাধ্যায়। পরিবারের প্রবীণদের মুখে শোনা যায় আজ থেকে প্রায় ৯১ বছর আগে এই পরিবারের পুজোয় বলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাও আবার লটারি করে। তিনি বললেন, “বাবা আর দাদুর কাছে আমাদের পুজোয় বলির কথা শুনেছি। কিন্তু ৯১ বছর আগে বাড়ির এক সদস্য স্বপ্ন দেখেন, দেবী চান না তাঁর সমনে বলি দেওয়া হোক। স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর থেকে বলি বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। তবে সেই সময়ে প্রাচীন এই রীতি বন্ধে দ্বিমত তৈরি হয়েছিল।” তিনি জানান, অবশেষে লটারি করার সিদ্ধান্ত হয়। ঠিক হয়, দেবীর পায়ের কাছে কয়েকটি বেল পাতায় সিঁদুর দিয়ে বলি বন্ধ বা বলি চালু রাখার প্রস্তাব লেখা হবে। তার পরে একটি শিশুকে পর পর তিন বার সেই বেলপাতার কোনও একটি বাছতে বলা হবে। কথিত আছে, শিশুটি তিন বারই বলি বন্ধের পক্ষে লেখা বেলপাতা বেছেছিল। তার পর থেকেই পরিবারের পুজোয় বলি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
লোক মুখে প্রচলিত আছে, এই পরিবারের কর্তা অশ্বিনী চট্টোপাধ্যায় এক সময়ে কলম ফেরি করে সংসার চালাতেন। পরে ব্রিটিশ কোম্পানিতে চাকরি পান। তখন থেকেই বাড়িতে দুর্গাপুজোর শুরু। অশ্বিনীবাবুর আমন্ত্রণে ব্রিটিশ অফিসারেরা পুজো দেখতে আসেন। পুজো দেখে এবং পরিবারের আপ্যায়নে সন্তুষ্ট হন অফিসারেরা। পদোন্নতি হয় অশ্বিনীবাবুর। মাইনে এক লাফে ৪টাকা থেকে বেড়ে ৪০ টাকায় ওঠে। ক্রমশ পুজোর জৌলুস বাড়তে শুরু করে।
প্রাচীন কাল থেকেই সাবেকি আদলে প্রতিমা তৈরি হয়। বেলডাঙার মহুলা গ্রামের বিশ্বনাথ ঘোষ আগে এই পুজোর প্রতিমা তৈরি করতেন। তার পর থেকে বংশানুক্রমিক ভাবে ওই পরিবারই প্রতিমা গড়ে আসছে। অষ্টমী পুজো শুরুর আগে বাড়ির কর্তা বন্দুকে ‘ফায়ার’ করতেন। ষষ্ঠী ও সপ্তমীতে ধাতুর ঘটে জল ভরা হয়। দশমীর সিঁদুর খেলার রোওয়াজও চলে আসছে প্রথম থেকেই। সিঁদুর খেলার পরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় কড়ি। বলা হয়, সেই কড়ি যে পাবে তার ঘরই অর্থে-সমৃদ্ধিতে ফুলে ফেঁপে উঠবে। দশমীর সন্ধ্যায় বেয়াড়ার কাঁধে চেপে দেবীর বিসর্জন হয়।
কেবলমাত্র চট্টোপাধ্যায় পরিবারই নয় বহুদিনের এই পুজোয় মেতে ওঠেন গ্রামবাসীরাও। গ্রামের এই পুজো ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে ওঠে ছোট-বড় সকলেরই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.