|
|
|
|
|
|
|
মুখোমুখি ১... |
|
অনেক বছর পর আমি হয়তো থাকব না তখন
লোকে বলবে পাওলিই প্রথম সাহসটা দেখিয়ে ছিল |
সেপ্টেম্বর ৯। কলকাতা বিস্ফারিত। সবচেয়ে চালু কয়েনেজহোয়্যার ইজ দ্য ক্লিপ? ইউ টিউবে একটা চার মিনিটের
ক্লিপ বদলে দিল বাঙালির
এত দিনের সিনেমা দেখার ধ্যানধারণা। বদলে গেল টালিগঞ্জের নায়িকার সংজ্ঞাও।
যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, যাঁর দেহের এতটুকুও আর কারও
অচেনা রইল না, তিনি কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও
একই রকম অবিচল আর আত্মদৃপ্ত। পাওলি দাম একান্ত সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে
গৌতম ভট্টাচার্য-কে জানিয়ে দিলেন ‘ভাল সিনেমার দাবিতে’ যা করেছেন বেশ করেছেন! |
পত্রিকা: বেশির ভাগ বলছে টালিগঞ্জের রাখি সাওন্ত! যারা সামান্য উদারমনস্ক তারা ভিন্নমত। বলছে টালিগঞ্জের মল্লিকা শেরাওয়াত!
পাওলি: কী বলছেন! এটা কোনও কথা? যাদের নামগুলো বললেন তারা কেউ ‘কালবেলা’ করেনি। ‘মনের মানুষ’-এ অভিনয় করেনি। ‘তখন ২৩’ করেনি। ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’-এও ছিল না। আরে ‘কালবেলা’র পর লোকে বলতে শুরু করেছিল মাধবীলতার চরিত্রটা পাওলি দারুণ করেছে। ভাবছিল বহুবছর পর একটা টিপিক্যাল বাঙালি মেয়ে এসেছে। ওকে এই রকম ট্র্যাডিশনাল বাঙালি বধূ দারুণ মানাবে। কিন্তু অ্যাক্টর হিসেবে আমার দায়িত্ব হল অভিনয়ের ফুল রেঞ্জটা দেখানো। মানুষকে বুঝতে হবে ক্যারেক্টর থেকে ক্যারেক্টর ভ্যারি করে। ফিগার বদলায়। মানসিকতা বদলায়। চরিত্রের প্রকাশভঙ্গি বদলায়।
পত্রিকা: কেউ এত কিছু বুঝতে রাজি নয়। বরং সরাসরি বলছে, আপনি বাঙালি নারীর ভূষণ যে লজ্জাতার শেষ বস্ত্রখণ্ডটাও প্রকাশ্যে জলাঞ্জলি দিয়েছেন।
পাওলি: এটা কেন বলা হচ্ছে জানি না। যাঁরা ওয়ার্ল্ড মুভি দেখেন তাঁদের কাছে এটা জলভাত। গ্রেট মাস্টার্স অফ ওয়ার্ল্ড সিনেমা -- সে তারকোভস্কি, ফেলিনি, বার্গম্যান যেই হন না কেন, তাঁরা পূর্ণ
নগ্নতা দেখিয়েছেন। এ বার আমায় বলুন ওঁরা বড় না বড় না?
আর লজ্জা আবার কী? অ্যাক্টরের লজ্জা বলে কিছু হয় না কি? হিরোকে যখন জড়াচ্ছে, ছোট পোশাক পরে যখন হিরোইন নাচছে তখন লজ্জা করে না? আমি মনে করি অ্যাক্টরের লজ্জা-ঘেন্না-ভয় থাকারই কথা নয়। আমি বিশ্বাস করি চরিত্র যা ডিমান্ড করে আমি ঠিক তাই করব। তাই করা উচিত। আর মনে করি ফিল্ম হল ডিরেক্টরস মিডিয়াম। শুধু ‘ছত্রাক’ বলে নয়, যখন যে ছবি করেছি, ডিরেক্টরের বিচার বুদ্ধির ওপর সম্পূর্ণ নিজেকে সঁপে দিয়েছি।
পত্রিকা: তবু নিশ্চয়ই মানবেন বাঙালি চরিত্রে পরিশীলন বলে একটা ব্যাপার আছে। আর সেটা সম্পূর্ণ বিসর্জিত।
পাওলি: শুনুন, শুনুন, আমার চেয়ে বেশি বাঙালি কেউ নেই। ব্যক্তিগত ভাবে আমি ভীষণ রক্ষণশীল। বাঙালিয়ানা মেনে জীবন কাটাই। কিন্তু একই সঙ্গে আমি অ্যাক্টর। যে কোনও অ্যাক্টরেরই দু’টো সত্তা। ফিল্মের আমিটা তো আর আমি নই। ওটা অন্য এক পাওলি। সিনেমাকে যে পাগলের মতো ভালবাসে। ফিল্মে যার ইনহিবিশন বলে কিছু নেই। চরিত্রের জন্য যে কতটুকু কাপড় খুলতে হবে-টবে নিয়ে ভাবে না। চরিত্র রূপায়ণটাকেই অন্ধের মতো অনুসরণ করে। ‘ছত্রাক’-এর সিনটার আগে যেমন। ‘ও বাবা এটা আমায় করতে হবে, সব খুলতে হবে’ এ সব ভাবিইনি। আমি একশো ভাগ সৎ আমার পেশায়।
আমি যে ছবি দেখে বড় হয়েছি, যে ভাবে বড় হয়েছি তাতে এটা কোনও ব্যাপারই না। আশ্চর্য লাগছে আপনি যে সব কথা তুলছেন।
পত্রিকা: সমালোচনা আরও বেশি হচ্ছে ইউ টিউবে ভেসে ওঠা ক্লিপটার মধ্যে কোনও রকম সৌন্দর্যবোধ না থাকায়। গরিষ্ঠ মত হল দৃশ্যায়নটা এত রগরগে যেন পরিষ্কার পর্নো।
পাওলি: প্রথমত গোটা ছবি না দেখে একটা তিন মিনিটের পাইরেটেড ক্লিপ থেকে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো উচিত নয়।
যখন আমি ঢাকাই শাড়ি পরে কান ফেস্টিভ্যালের রেড কার্পেটে হেঁটেছিলাম, লোকে বাহবা দিয়েছিল। আর আজ সবাই এসথেটিকস-এর মাস্টারমশাই হয়ে পড়েছে। কে বলবে ৫০ বছর পরে এসথেটিকস কোন চেহারা নেবে?
পত্রিকা: আপনি নিজে দেখেছেন ক্লিপটা?
পাওলি: ওটা দেখিনি। তবে সিন-টা করে উঠে মনিটরে দেখেছিলাম। একস্ট্রাঅর্ডিনারি কিছুই মনে হয়নি। অনেকের মেনে নিতে যদি সমস্যা হয়ে থাকে তা হলে এ জন্যই হয়তো হচ্ছে যে এটা তাদের কাছে সম্পূর্ণ নতুন কিছু। দেবিকা রাণি যখন ১৯৩৩ সালে প্রথম লিপ-টু-লিপ চুমু খেয়েছিলেন, লোকে কী না কী বলেছিল। আজ মনে হচ্ছে উনি কত প্রোগ্রেসিভ ছিলেন। আজ চুমু খাওয়াটা কোনও ব্যাপার? বাংলা ফিল্মেও সবাই চুমু খেয়ে বেড়াচ্ছে। এটাও বদলাবে। ৫০ বছর পর আজকের এই সমালোচনাটাও...
পত্রিকা: হাস্যকর মনে হবে?
পাওলি: একদম হাস্যকর মনে হবে। ‘কোমল গান্ধার’ যখন রিলিজ করেছিল, লোকে হলে আগুন দিতে গিয়েছিল। সেটা অবশ্য নগ্নতা জনিত কারণ ছিল না। কিন্তু সেই শহরের মানুষই তো আজ ঋত্বিক ঘটক নিয়ে ধন্য ধন্য করছে। ছবিটাকে ক্লাসিক বলছে। আমার কথা হল এই যে বলছেন, পাবলিক ভাল ভাবে নেয় নি। সেটা কে ঠিক করল?
পত্রিকা: পাবলিক ঠিক করল। শুধু আনন্দবাজার অফিসেই কমপক্ষে ৬০-৭০টা অ্যান্টি ফোন এসেছে।
পাওলি: তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। আন্তর্জাতিক ছবির সাবালক ভাষা যদি কেউ না বোঝে সেটা তাদের সমস্যা।
পত্রিকা: আপনি মনে করেন না শ্লীলতার সীমা কোনও ভাবে লঙ্ঘন হয়েছে বলে?
পাওলি: একেবারেই না।
পত্রিকা: কেউ কেউ ক্লিপটা দেখে মন্তব্য করেছেন এর পর কোনওদিন না আন্তর্জাতিক সিনেমার নামে পটি করাও দেখতে হয়!
পাওলি: পটি দেখানো হয়েছে তো ‘স্যালোঁ’ বলে একটা ছবিতে। পাসোলিনির বিখ্যাত ছবি। সেখানে দেখিয়েছে লোকে পটি খাচ্ছে। আমি নিজে দেখেছি ছবিটা ইওরোপে আজও ব্যানড। কিন্তু তাতে কী এসে যায়? ফিল্মের ভাষাটা সব সময় পরিচালক অনুযায়ী হেরফের হয়।
বিমুক্তি জয়সুন্দর যেমন। ওঁর স্টাইলটাই কাঠকাঠ, রাফ। কিন্তু ওটাই ওঁর স্টাইল। আমি নগ্ন হয়েছি ওঁর ছবি বলেই। ওঁর আগে ইতালো স্পিনালির অফার কিন্তু আমি ফিরিয়ে দিয়েছিলাম। সেটাও ইন্টারন্যাশনাল প্রজেক্ট ছিল। প্রচুর খোলাখুলির ব্যাপার ছিল। কিন্তু আমার মনোমত হয়নি। ওই চরিত্রটা করলে ফিল্মের প্রতি অসততা হত।
পত্রিকা: আমায় বলুন তো, বিমুক্তি জয়সুন্দরই বা এমন কে-- যার জন্য ভেসে যেতে হবে! বার্গম্যান না। ত্রুফো না। হিচকক না। সত্যজিৎ না। কে এমন। তরুণ পরিচালক হিসেবে টেক স্যাভি আধুনিক সমাজেও ওঁর বিশেষ গুরুত্ব আছে বলে মনে হয় না। গুগল সার্চে হিট দেখছি মাত্র ৫৬ হাজার ৮০০।
পাওলি: কী বলছেন এ সব! কেউ যদি ওঁর মতো পরিচালকের নাম না জেনে থাকে, সেটা তার সমস্যা। উনি হচ্ছেন কান ফেস্টিভ্যালের ক্যামেরা ডি’ওর উইনার। মারাত্মক ওঁর ফিল্মের ভাষা। কান-এ দেখেছি অনুরাগ কাশ্যপ থেকে বিধু বিনোদ চোপড়াসব ভারতীয় পরিচালকের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছিল, বিমুক্তির সঙ্গে কথা বলার জন্য।
পত্রিকা: আপনি যাই বলুন ময়দানের ভাষায় কোনও নম্বর নেই বিমুক্তির।
পাওলি: (কিছুটা রাগত) যদি নম্বরই না থাকে তা হলে আমরা এখানে বসে আছি কেন?
পত্রিকা: বসে আছি কারণ, এই পরিচালকের একটা ছবি নিয়ে জোর চর্চা হচ্ছে সেটা পর্নোগ্রাফি না ফিল্ম?
পাওলি: প্রবলেমটা কী জানেন এই ক্লিপটাতেই যদি দেখাত আমি রেপড হচ্ছি তা হলে বোধহয় মানুষের সহানুভূতি পেতাম। একটা মেয়ে যে নিজের শরীরী সুখের জন্য স্বেচ্ছায় জামাকাপড় খুলতে পারে সেটা টোয়েন্টি-ফার্স্ট সেঞ্চুরিতে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে সেটাই দুর্ভাগ্যের। প্রচণ্ড দুঃখেরও। বাঙালি নাকি গ্লোবাল হচ্ছে, আন্তর্জাতিক হচ্ছে। এই বুঝি আন্তর্জাতিকতার ছিরি!
আপাতত আমি একটা ব্যাপারে নিঃসন্দেহ যে পাবলিকের একটা বড় অংশ এই ধরনের সিনেমা দেখেনি। তাদের কাছে আন্তর্জাতিক সিনেমার জগৎটা সম্পূর্ণ অপরিচিত। তাদের তাই ওয়ার্ল্ড সিনেমা নিয়ে কথা না বলাই ভাল।
পত্রিকা: দিনের শেষে আপনি তো টালিগঞ্জের অভিনেত্রী। টালিগঞ্জে আপনার সিদ্ধান্তের কী রেশ হবে, চিন্তা করবেন না?
পাওলি: দেখুন, এ সব প্ল্যানট্যান করে কিছু হয় না। কার ভাগ্যে কী আছে কেউ বলতে পারে না। আমার ক্ষেত্রে অন্তত তাই। ‘কালবেলা’র অফার পেয়েছিলাম বাড়ি বসে। বিমুক্তির অফারও তাই। আমার হাতে এখনও পাঁচটা ছবি। ছেড়েছি যে ছ’-সাতটা ছবি সেগুলো এখন অন্যরা করছে। কারা করছে নামও বলে দিতে পারি। নম্বর দৌড়ে আমি নেই। আমি ছুটি আমার নিজের গতিতে।
এমনিতে তো টালিগঞ্জ খুব সুখ্যাতি করছে। ঝুড়ি ঝুড়ি এস এম এস পেয়েছি টিভির পুরনো সহকর্মীদের থেকে। সবাই বলছে, কী সাহস রে তোর। দারুণ করেছিস। ঋতুপর্ণ ঘোষ তো আমায় কলকাতা নামা মাত্র ফোন করেছিলেন। ঋতুদা বললেন, ‘‘কী রে ভয় পাচ্ছিস না তো? একদম ভয় পাবি না। লোকে কেন যে তোর পেছনে লেগেছে, কেন মিডিয়া লিখছে আমার অবাক লাগছে। তুই বলবি আমার কথা। দারুণ সাহস দেখিয়েছিস।’’ ঋতুদা প্রতিমা বেদির কথাও বললেন। প্রতীকী প্রতিবাদের জন্য সেই কবে নগ্ন হয়ে উনি জুহু বিচে দৌড়েছিলেন। এ রকমই টালিগঞ্জে আরও কেউ কেউ বলেছে ‘হ্যাটস অফ’।
পত্রিকা: আমাদের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য। টালিগঞ্জের অভিনেতা আমায় বলেছেন পুরো রেড কার্ড সিচুয়েশন। ফুটবল হলে রেফারি স্ট্রেট মাঠ থেকে বার করে দিত।
পাওলি: কী বলব? অজ্ঞতা! তাদের অশিক্ষা। তারা ভাল সিনেমা দেখেনি তো আমি কী করব?
আমায় বলুন না হিপোক্রেসিও কি নেই আমাদের সমাজের! আমি শুনেছি গত ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতার সর্বাধিক প্রচারিত কয়েনেজ ছিল, হোয়্যার ইজ দ্য লিঙ্ক? কোন লিঙ্ক দিয়ে ইউ টিউবে ‘ছত্রাক’ দেখা যাবে? আমাকে ফেসবুকে অবধি লোকে জ্বালিয়েছে, হোয়্যার ইজ দ্য লিঙ্ক।
তো লোকে পাগলের মতো দেখবে আবার সমালোচনাও করবে, দু’টো কী করে হয়!
পত্রিকা: আপনার বয়ফ্রেন্ড কী বললেন?
পাওলি: কোন বয়ফ্রেন্ড? আমার তো অনেক বয়ফ্রেন্ড (হাসি)। নামটা করুন।
পত্রিকা: বিশেষ যিনি বলে শোনা যায় বিক্রম!
পাওলি: ও বিক্রম! হান্ড্রেড পার্সেন্ট সাপোর্টিভ। ওর দারুণ লেগেছে। বলেছে তোমার এই সাহসের জন্য স্যালুট করা উচিত।
|
পত্রিকা: স্যালুট? মানে বাড়িতে বাবা-মা’রও তেমনই রিঅ্যাকশন?
পাওলি: ওঁরা আনন্দবাজার পড়েই প্রথম জানতে পারেন।
পত্রিকা: জানার পর?
পাওলি: ঠিক আছে। ওঁরা তো আমাকে বড়ই করেছেন খোলামেলা আবহাওয়ায়। ওঁরা জানেন ভাল সিনেমার জন্য আমার আকুতিটা কোন পর্যায়ের। ওঁরা জানেন আমি কতটা অনেস্ট।
পত্রিকা: দেখা হওয়ার আগে মনে হচ্ছিল, নগ্নতা বিতর্কের চাপে আপনাকে জবুথবু দেখব। এখন তো মনে হচ্ছে আপনি বেশ এনজয় করছেন বিতর্কটা!
পাওলি: কেন চাপে থাকব? আমি তো সজ্ঞানে একটা জিনিস করেছি। ভাল সিনেমার দাবিতে করেছি। ভাল পরিচালকের ওপর বিশ্বাস রেখে করেছি। আমি তো জানতামও না ক্লিপটা যে কেউ ইউ টিউবে না জানিয়ে পোস্ট করেছে। আমার বিন্দুমাত্র অস্বস্তি সেটা নিয়ে নেই। থাকলে প্রথম যে দিন আপনি আমায় মুম্বইতে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছিলেন ন্যুড সিনটা আমারই করা কিনা, আমি তো পরিষ্কার অস্বীকার করতে পারতাম। কেউ জানতেও পারত না। ছবির এই অংশটা যেহেতু সেন্সরের জন্য এখানে দেখা যাবে না, অস্বীকার করাটা তো আরও সহজ হত। এ-ও বলতে পারতাম বডি ডাব্ল দিয়ে করানো হয়েছে। ম্যানেজ করার কত রকম রাস্তা ছিল। করিনি তো!
পত্রিকা: করেননি ভাল কথা। কিন্তু আপনার যে অনুরাগীরা ফিল্মে ব্যবহৃত ভাষা শুনে বিস্ফারিত। তাদের সেন্টিমেন্টেরও তো একটা দাম আছে।
কেট উইন্সলেট বা জুলিয়া রবার্টস নিশ্চয়ই নগ্ন দৃশ্যে তাদের প্রেমিককে বলেননি, আমাকে চাটো!
পাওলি: পরিচালক সংলাপটা বাংলায় রাখতে চেয়েছিলেন। এখানে আমার কোনও বক্তব্য ছিল না। ডিরেক্টর ইজ দ্য কিং। তা ছাড়া আর একটা কথা বুঝতে হবে। চরিত্রটা পাওলি নয়। পাওলি চরিত্রটায় অভিনয় করছে মাত্র। এমন চরিত্র যারা প্রায় বস্তি বাড়িতে থাকে। তাদের মধ্যে কোনও সফিস্টিকেশন নেই। তারা আনকুথ। সফিস্টিকেটেড কথাবার্তা বলবে কেন? রাফ, কর্কশ হবে, সেই ভাষায় কথা বলবে এটাই তো স্বাভাবিক।
পত্রিকা: এমন অসাধারণ ক্লিপ তা হলে কেটে কান-এ দেখাতে হল কেন?
পাওলি: সেটা পরিচালক মনে করেছিলেন কেটে দেখাবেন তাই দেখিয়েছেন। টরন্টো ফেস্টিভ্যালে পুরোটা যাচ্ছে। অন্যগুলোতেও।
পত্রিকা: এত গুরুত্বপূর্ণ হলে কাটা হল কেন?
পাওলি: সেটা ডিরেক্টর-কে জিজ্ঞেস করুন না। আমার কাছে জানতে চাইছেন কেন? আমি পেশাদার। যা করতে বলেছেন করে দিয়েছি।
পত্রিকা: আপনারই তো ডিরেক্টরকে প্রশ্ন করা উচিত ছিল যে ওটা নেই কেন?
পাওলি: করেছিলাম। উনি বললেন, এখানে কেটেছেন এটাই ওঁর সিদ্ধান্ত। আমি সেটা মেনে নিই।
পত্রিকা: টালিগঞ্জের একটা অংশ আপনাকে নেওয়া বা প্রচারের কাজে লাগানো নিয়ে নতুন করে ভাবছে।
পাওলি: তাই বুঝি। শুনিনি তো।
এই ক’দিন মুম্বইতে ছিলাম তো। বলিউডে অনেকেই কিন্তু আমায় অভিনন্দন জানিয়েছেন। বড় পরিচালক থেকে শিল্পী, অনেকেই। মুম্বইতে এই সব ব্যাপার নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। এত চর্চাও করে না।
পত্রিকা: আপনার মতে সামাজিক ভাবমূর্তির কোনও ক্ষতি হয়নি?
পাওলি: মাই ইমেজ রিমেইনস দ্য সেম। বলতে পারেন সোসাইটিতে আমার প্রতি রেসপেক্টটা বেড়ে গেছে। মনোযোগটাই অন্য পর্যায়ে চলে গেছে। কত ফোন আসছে। অপরিচিত লোকেরা বলছে কথা বলতে চাই। এমনও বলছে পাওলি মুখে ফটর ফটর করে না। পাওলি কাজেও দেখাতে পারে। শি ক্যান ডু ইট।
পত্রিকা: বলা হয়ে থাকে নায়িকার জীবন হল কিছু আলো-কিছু আঁধার। সেটাই তার অ্যাট্রাকশন। আপনার জীবনে তো এর পর আঁধার বলে কিছু রইল না পাওলি। পুরোটাই প্রকাশ্য।
পাওলি: জুলিয়া রবার্টস, কেট উইন্সলেট। জুলিয়েট বিনোশে। এঁদের কি এক্সপোজ করার পর অ্যাট্রাকশন কমে গেছে বলে মনে হয়। নাকি সিনেমার জন্য ওঁদের দায়বদ্ধতাকে লোকে সম্মান জানিয়েছে! প্রাচীন এই ধ্যানধারণাগুলোই বদলাতে হবে। শুনুন। আর একবার শুনুন। আমার দেখাবার মতো শরীর আছে। আমার ইনহিবিশন ফ্রি একটা মন আছে। আমার সিনেমার প্রয়োজনীয় শিক্ষা আছে। আমার সিনেমার প্রতি ভালবাসা আছে। সবচেয়ে বড় কথাআমি হিপোক্রিট নই।
পত্রিকা: সুতরাং এই ধারণাটা আপনি আমল দিতে চান না যে আন্তর্জাতিক সিনেমার টোপে একটা ভুলভাল প্রকল্পে নিজেকে বিসর্জন দিলেন। স্রেফ হাওয়ায় চলে। আর বেঠিক পরামর্শ পেয়ে।
পাওলি: কী যে বলেন। পাওলি ইজ এডুকেটেড এনাফ। ইজ ইন্টেলিজেন্ট এনাফ। পাওলি যদি মনে করত সিনটা আরোপিত লাগছে, শুধুই শিল্পের নামে কাপড় খোলা হচ্ছে, তা হলে সে করত না। অতীতে করিওনি। কিন্তু একটা সিন যা ইউনিটের কারও বেখাপ্পা লাগল না। ডিরেক্টরের না। ক্যামেরাম্যানের না। স্ক্রিপ্ট রাইটারের না। সহকারী পরিচালকের না। সেটা একটা বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়াল সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে। ইন ফ্যাক্ট আমরা সে দিন একটা ফিল্মের সেটে এ নিয়ে হাসাহাসি করছিলাম।
পত্রিকা: জনতা বোধহয় হাসছে না।
পাওলি: হাসবে। আজ থেকে ৫০ বছর পর হাসবে। ভুল বললাম... তদ্দিনও বোধহয় লাগবে না।
|
টালিগঞ্জের মত |
অশোক ধানুকা
প্রযোজক |
আমার মনে হয় গোটা ব্যাপারটার মধ্যে রুচির অভাব। শুধুমাত্র সস্তা প্রচারের জন্য এটা করা হয়েছে। বাংলা ছবিতে এ সবের কোনও প্রয়োজন নেই। আমার মতে এ ধরনের প্রচারে পাওলির ক্ষতিই হবে। |
|
আমার মনে হয় ছবির এই ক্লিপটা অনেকটাই পাওলির পক্ষে যাবে। সবাই তো এখন এই ছবিটার জন্য অপেক্ষা করছে। একজন অভিনেত্রীকে নিয়ে এত আলোচনাএর থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে? ওর অ্যাচিভমেন্ট যদি বলেন, তা হলে এটাই। আমার ছবিতে পাওলিকে অবশ্যই নেওয়ার কথা ভাবব। কিন্তু সেটা ওই ক্লিপটার জন্য নয়। পাওলি অত্যন্ত শক্তিশালী অভিনেত্রী বলে। |
রাজ চক্রবর্তী
পরিচালক |
|
গৌতম ঘোষ
পরিচালক |
দুর্দান্ত ব্যাপার। একটি পুরুষ এবং একটি নারী যদি সম্পূর্ণ খালি গায়ে কোনও দৃশ্যে অভিনয় করেন, তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই। কোনও ছুঁৎমার্গ থাকাই উচিত নয়। যৌনক্রীড়ার সময়ে গায়ে জামাকাপড় না থাকাটাই তো স্বাভাবিক। আর এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগ। সবাই প্রাপ্তমনস্ক, সবাই ইন্টারনেটে সব কিছু দেখছে। শুধু ছবিতে দেখলেই কেন সমস্যা হবে? তা ছাড়া টেলিভিশনে যখন সেন্সর নেই, সিনেমাতেই বা থাকবে কেন? আমার তো মনে হয় সেন্সর বোর্ডটাই তুলে দেওয়া উচিত। যদি ওই ক্লিপটার কথা বলেন, বলব ওটা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কিছু নেই। এই দৃশ্যটার জন্যই কিছু মানুষ এই ছবিটা দেখবেন। ভণিতা করে লাভ নেই, যৌনদৃশ্য দেখতে সবার ভাল লাগে। |
|
মহেন্দ্র সোনি
প্রযোজক
এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না। |
|
|
|
|
|
|