মুখোমুখি ২...
অনামের লোভে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলে...
ত্রিকা: হঠাৎ রবীন্দ্রসঙ্গীত কেন?
অভিজিৎ: আপনি হঠাৎ বলছেন, আমি বলব সাহস করে দুঃসাহস।

পত্রিকা: সাহস কেন?
অভিজিৎ: আমার মতো কানপুরের বাঙালির রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম করা মানে বুঝতে হবে এর পেছনে অনেক সাহস, অনেক পরিশ্রম, মেহনত রয়েছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত করব কি করব না, এই নিয়ে দোলাচল ছিল অনেক দিনের। নিজেকে মানসিক ভাবে কনভিন্স করতেই অনেক বছর চলে গেল। তার পর মন ঠিক করলাম।

পত্রিকা: কী ভাবে?
অভিজিৎ: আসলে আমি কখনওই ভাবিনি যে বিশ্বভারতীর নজরদারি উঠে গেছে বলে চলো একটু রবীন্দ্রসঙ্গীত গেয়ে ফেলি। বরং আমি মনে করে এসেছি, বিশ্বভারতীর এখনও যে কোনও শিল্পীর গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত অ্যালবাম রিজেক্ট করার ক্ষমতা থাকুক। যে দিন আমার মনে হল যে এখন আমি রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইলে সেটা বিশ্বভারতীর অনুমোদন পাবে সে দিন আমি আমার অ্যালবাম ‘ওই আসনতলের’ কাজ শুরু করলাম।

পত্রিকা: রবীন্দ্রসঙ্গীতে কনসেনট্রেট করতে নাকি অস্ট্রেলিয়ায় চলে গেছিলেন?
অভিজিৎ: ঠিকই। দেখলাম মুম্বইতে বসে এটা হবে না। এত বাধা, এত রকমের কাজ, ব্যস্ততা। চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়া ১৫ দিনের জন্য। ওখানে বসে মন দিলাম রবীন্দ্রসঙ্গীতে। তার পর তো রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে চর্চা করতে করতে নেশা ধরে গেল প্রায়। রেকর্ডিং-এর সময় অনেকে বলল, রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়ার সময় একটু ডিফারেন্ট কিছু করো, একটু নতুন কিছু করো। এখন এটা চলছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করো। আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিলাম আমার এত সাহস বা এত ধৃষ্টতা নেই যে কবিগুরুর গানে আমি নিজের ‘কালার’ দেব।

পত্রিকা: তার মানে আপনি রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার বিরোধী?
অভিজিৎ: আমার শুধু হাসি পায় তাদের দেখে, যারা রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে। কবিগুরুর কম্পোজিশনে নিজেদের মতো পাকামি করাটা কেমন ব্যাপার জানেন? ধরুন ২০১১-তে পুজো হচ্ছে, অতএব মা সরস্বতীর হাতে বীণার বদলে গিটার ধরিয়ে দাও। তাতে আধুনিকতা হয় না, ধৃষ্টতা হয়। অমার্জনীয় অপরাধ হয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট তারা করে যাদের মধ্যে সহজে নাম করার লোভ আছে। অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য এ সব করে। সেটা আমি কেন করব? আমি অভিজিৎ। আমার ও সব দরকার হয় না। সবাই আমাকে চেনে।

পত্রিকা: বাবুল সুপ্রিয়, শান এবং অভিজিৎ-- বলিউডের তিন বাঙালি প্লে-ব্যাক সিঙ্গারের পর পর রবীন্দ্রসঙ্গীতের অ্যালবাম...
অভিজিৎ: আমি জানি না কে কী অ্যালবাম করছে। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কে কী করছে খবর রাখি না ভাই।

পত্রিকা: ওঁদের অ্যালবাম শোনেননি এটা মানতে হবে?
অভিজিৎ: হ্যাঁ, হবে। আমি যাঁদের রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেছি তাঁরা হলেন সাগর সেন, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, কিশোরদা, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। এঁদের মতো গ্রেট রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়কদের বাইরে কেন শুনব আমি অন্যের গান?

পত্রিকা: বলিউডের অবস্থাটা কেমন বুঝছেন? সোনু নিগম ক’দিন আগে পত্রিকা-কে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন কেউ আজকাল গান গাইতে ডাকে না। কাজ নেই...
অভিজিৎ: কাজ আর প্লেব্যাক, দু’টো ব্যাপার আলাদা। যখন আমি পরের পর বলিউড মুভিতে প্লেব্যাক করতাম, তখন আমার কাজ কম ছিল কিন্তু প্লেব্যাক বেশি ছিল। এখন আমিও ফিল্মে এক্কেবারে কম গাই, প্রায় গাই-ই না বলা যায়। কিন্তু আমার হাতে কাজ এখন অ-নে-ক বেশি।

পত্রিকা: সেটা কী কাজ?
অভিজিৎ: যখন বড় বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় দেশে-বিদেশে, তখন কারা ডাক পায়? এই আমরা। যখন বিশাল বাজেটের শো হবে তখন তো উদ্যোক্তারা বড় নাম চাইবেন, ভাল শিল্পী চাইবেন। তখন অভিজিৎ, শানু, সোনু নিগম, শানের নামই আসবে। আগে প্লেব্যাক শিল্পীদের একটা বনেদি ঘরানা ছিল, যা রফি-মুকেশ-তালাত মামুদ-লতা-আশা-কিশোর কুমারের মতো লেজেন্ডদের নিয়ে তৈরি। সেটা কুমার শানু-আমি, উদিত নারায়ণ হয়ে শেষ হয়ে গেছে শানে। আমাদের পরে এই কুলীন প্লেব্যাক প্রজন্মের শেষ প্রতিনিধি এক দিকে শান, অন্য দিকে শ্রেয়া আর সুনিধি। তার পরে আর কোনও গায়ক-গায়িকা নেই। আর হবেও না।

পত্রিকা: অথচ কিশোর কুমারের গান এখনও লোকে শোনে
অভিজিৎ: ঠিক। রাজেশ খন্নাকে মানুষ ভুলে গেছে। কিশোরের গান বলেই সেগুলো অমর হয়ে গেছে। শাহরুখ খানকেও মানুষ ভুলে যাবে, আমার ‘ইয়েস বস’এর গান অমর হয়ে থাকবে। মনে থেকে যায় গায়ক-গায়িকার গলা আর গানের কথা আর সুর। মনে থাকে এটা মুকেশজির, শানুর, অভিজিতের, শানের গান। সে দিন আর নেই। এখন তো কেউ গায়কের গলা চিনতেই পারবে না। আমি বাজি রেখে বলছি, ‘রোজা’, ‘গুরু’, বা ‘ছাঁইয়া ছাঁইয়া’র মতো কিছু গান বাদে এ আর রহমানের কম্পোজ করা গানও কেউ শোনে না। কিন্তু আর ডি বর্মনের গান মানুষ জীবনভর শুনবে। আমার ‘ইয়েস বস’ যতটা লোকে শোনে, এ আর রহমানের গান ততটা না। ফলে আমার কিছু এসে যায় না। আমার নাম বেড়েছে। আমি লেজেন্ড হয়ে গেছি। এটাই শেষ কথা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.