|
|
|
|
|
|
|
বেড়ানো: পুজোর বাকি ১৫ দিন... |
|
দেরি হয়নি... |
পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করা হয়নি তো কী? মন খারাপের কোনও কারণ
নেই। বুকিং এখনও পেতে পারেন। লিখছেন সন্দীপন মজুমদার |
বড়ন্তি |
নামকরা, বিখ্যাত জায়গার বদলে একদম অচেনা জায়গাই তো এমন সময়ে ‘চান্স’ নেওয়ার পক্ষে সেরা। সুতরাং বড়ন্তি। সে আবার কোথায়? আসানসোলের পরে মুড়াডি স্টেশনে নেমে ট্রেকার বা রিকশাতে ছ’ কিলোমিটার গেলেই সে জায়গা। মুড়াডি পাহাড় আর বড়ন্তি পাহাড়ের মধ্যে বড়ন্তি নদীকে বাঁধ দিয়ে তৈরি হয়েছে এক বিশাল জলাধার। তার পাশেই ছোট্ট, সুন্দর গ্রাম বড়ন্তি। লাল মাটির দেশ, সেগুন, মহুয়া, শিশু, পিয়ালের জঙ্গল। পুজোর হইহট্টগোল থেকে অনেক দূরে, একেবারে শান্ত পরিবেশ। দেখার মতো হল জলাধারের জলে সূর্যাস্তের রং। পূর্ণিমা যদি পান, তা হলে মনে হবে আপনার সামনে ছড়ানো রুপোর থালা পড়ে আছে।
কী করবেন, কী দেখবেন: নিজেই নিজের রুটিন তৈরি করুন। পায়ে হেঁটে যত খুশি বেড়ান। প্রাণ ভরে অক্সিজেন নিন। কাছের সাঁওতাল গ্রামে ঘুরে আসতে পারেন। সঙ্গে গাড়ি থাকলে ১৯ কিমি দূরে রঘুনাথপুরে তসর শিল্পের গ্রামে দেখতে পারেন গুটিপোকার চাষ। আর আছে ২২ কিমি দূরে পাঞ্চেত বাঁধ আর ২১ কিমি দূরে জয়চণ্ডী পাহাড়। এখানেই শু্যটিং হয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’র। হাতে ক’দিন থাকলে শুশুনিয়া পাহাড় (৪০ কিমি), কাশীপুর রাজবাড়ি (৩০ কিমি) বা মাইথন বাঁধও দেখে আসা যায়।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে চড়ে বসুন। আসানসোলে নেমে অন্য লোকাল ট্রেন ধরে চতুর্থ স্টেশন হল মুড়াডি। সেখানে থেকে ট্রেকার বা রিকশায় বড়ন্তি। আসানসোল থেকে সোজা গাড়িও নিয়ে নিতে পারেন। গাড়িভাড়া পড়বে ৬৫০ টাকা। আর কলকাতা থেকে টানা গাড়িতে গেলে ঘন্টা ছ’য়েক লাগবে। দূরত্ব ২৭১ কিমি। আসানসোল থেকে নিয়ামতপুর পেরিয়ে বাঁহাতি পথে দিশেরগড় ব্রিজের রাস্তা ধরুন।
কোথায় থাকবেন: কোনও সরকারি জায়গা নেই। বড়ন্তি ওয়াইল্ড লাইফ অ্যান্ড নেচারস্টাডি হাট হল বড়ন্তিতে থাকার সবথেকে ভাল জায়গা। ঘরভাড়া ৪৫০ টাকা। কেয়ারটেকারকে বললে রান্নাবান্না করে দেবে (পারিশ্রমিক প্রতিদিন ৮০ টাকা)। বাজার আলাদা। ওয়েরসাইট: barantiblog.blogspot.com. ফোন: ৯৮৩০০৮৫৪৮৩।
মনে রাখুন: শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। যেহেতু যানবাহন বাড়ন্ত, সঙ্গে গাড়ি রাখলে ভাল হয়। নিজের ড্রিঙ্কটা কলকাতা থেকেই কিনে নিয়ে যান। আদিবাসী প্রধান জায়গা। এমন কিছু করবেন না, যাতে তারা ক্ষুণ্ম হয়। জলাধারে স্নান না করাই ভাল। আর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই ফোন করে নিন। |
|
সুন্দরবন |
গড়পঞ্চকোট |
ছোট্ট ছুটিতে পাঞ্চেত পাহাড়ের নীচে গড়পঞ্চকোট ঘুরে আসতে পারেন। পাঞ্চেত পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে রয়েছে পঞ্চকোট দুর্গ বা গড় পঞ্চকোট। বন উন্নয়ন নিগমের বনবাংলো থেকে মাত্র ১৭ কিমি দূরে। শোনা যায়, এখানকার সিংহদেও রাজত্বের এস্টেট ম্যানেজার ছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
কী করবেন, কী দেখবেন: গড়ের ধ্বংসাবশেষ তো আছেই, সঙ্গে আছে বেশ কিছু মন্দিরও। পাহাড়ের দক্ষিণ ঢালে পঞ্চরত্নশৈলীর ন’টি টেরাকোটা মন্দির কিছুতেই মিস করবেন না। নেচার স্টাডি সেন্টার আছে একটা। তার থেকে ১০ কিমি দূরে পাহাড়ের দক্ষিণ-পূর্ব ঢালে কাশীপুর রাজার তৈরি বিরিঞ্চিনাথের মন্দির আছে, ঘুরে আসতে পারেন। পাঁচ কিলোমিটার দূরে পাঞ্চেত বাঁধটিও দেখে আসতে পারেন। আর নয়তো ঠিক বড়ন্তির মতোই পায়ের ওপর পা তুলে রেস্ট নিতে পারেন গড়পঞ্চকোটেও।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ব্ল্যাক ডায়মন্ড, কোলফিল্ড, শক্তিপুঞ্জ যে কোনও এক্সপ্রেসে। কলকাতা স্টেশন থেকে জম্মু-তাওয়াইতেও চড়ে বসতে পারেন। নামতে হবে কুমারডুবি স্টেশনে। সেখান থেকে অটোরিকশা বা ভাড়া গাড়িতে গড়পঞ্চকোট। কলকাতা থেকে গড়পঞ্চকোটের দূরত্ব হল ২৬০ কিমি। সরাসরি গাড়িতে গেলে সময় লাগবে সাড়ে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা।
কোথায় থাকবেন: পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের বাংলো। এটাই থাকার শ্রেষ্ঠ জায়গা। এসি, নন-এসি দু’রকম ঘরই আছে। ঘরভাড়া দিনপ্রতি ৯০০-১৬০০ টাকা। খাওয়াদাওয়ার খরচ প্রতিদিন মাথাপিছু ৩০০ টাকার মতো। ফোন: ৯৮৩০০৫১৫৫৪।
মনে রাখুন: শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। যেহেতু যানবাহন পাওয়া যায় না সহজে, সঙ্গে গাড়ি রাখলে ভাল হয়। নিজের ড্রিঙ্কটা কলকাতা থেকেই কিনে নিয়ে যান। ধ্বংসপ্রাপ্ত পুরাকীর্তি সাবধানে দেখবেন। আর এখানেও অবশ্যই যাওয়ার আগে ফোনটা সেরে নিন।
|
সোনাগাঁ, পাখিরালয় |
পুজোর সময়ে সুন্দরবন? নিরাপদ তো? প্রশ্নটা আসবেই। উত্তর হল সঙ্গে গাইড থাকলে অবশ্যই নিরাপদ। আর সেই সঙ্গে আশ্বিনের মিঠে আবহাওয়ায় লঞ্চের দুলুনি খেতে খেতে বিদ্যাধরী, মাতলা, দুর্গাদুয়ানি, রায়মঙ্গলকে দেখার অপূর্ব সুযোগ।
কী করবেন, কী দেখবেন: যদি কপাল ভাল থাকে তা হলে সজনেখালি, সুধন্যখালি, দোবাঁকি, নেতিধোপানির ওয়াচটাওয়ার থেকে বাঘমামার দেখা পেতে পারেন। তবে সোঁদরবনের বাঘ তো, সব সময় দেখা দেন না। তা হলেও বহু দূরের জঙ্গলের দৃশ্য দেখাসে-ও কি কম পাওনা নাকি? তা ছাড়া হরিণ, গোসাপ তো দেখতে পাওয়াই যাবে। আর আছে প্রচুর পাখি। লঞ্চে যেতে যেতে কুমির, কামট-এরও দেখা পেতে পারেন। এ ছাড়া সজনেখালি মিউজিয়াম, নেতিধোপানিতে চাঁদ সদাগরের তৈরি শিবমন্দিরের ধ্বংসস্তূপ, ভগবতপুর কুমির প্রকল্প তো আছেই। আর যদি হাতে কিছু দিন সময় নিয়ে যান, তা হলে ঘুরে আসতে পারেন বনি ক্যাম্প, কলসদ্বীপ কিংবা বুড়ির ডাবরি। বনি বা কলসে থাকার জায়গা আছে। তবে তার জন্য বন দফতরের আগাম অনুমতি প্রয়োজন।
কী ভাবে যাবেন: সুন্দরবন যাওয়ার সবচেয়ে সহজ পথ সায়েন্স সিটির সামনে দিয়ে বানতলা, ঘটকপুকুর, ধামাখালি হয়ে গদখালি। সায়েন্স সিটি থেকে গাড়িতে সময় লাগবে ঘণ্টা তিনেক। এ ছাড়া শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে ক্যানিং গিয়ে সেখান থেকে সোনাখালি, বাসন্তী হয়েও ঢুকে পড়তে পারেন সুন্দরবনের গভীরে।
কোথায় থাকবেন: সজনেখালির সরকারি ট্যুরিস্ট লজে ভিড় হবার সম্ভাবনা এ সময়টাতে রয়েছেই। তবুও চেষ্টা করতে পারেন। ফোন: ৯৭৩২৫০৯৯২৫। ওয়েবসাইট: http://app.westbengaltourism.gov.in/WBTBooking/wbtdc.html. বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থা প্যাকেজ ট্যুরের বন্দোবস্ত করে এ সময়টাতে। তার মধ্যে একটি গদখালি থেকে যাত্রা শুরু করে সোনাগাঁর রিসর্টে রাত্রিবাস করিয়ে শুরু করে ভ্রমণ। এক রাত, দু’দিনের প্যাকেজে মাথাপিছু খরচ ২৫৫০ থেকে ১৮৫০ টাকা, দু’রাত, তিন দিনের খরচ মাথাপিছু ৩৩৫০-৩৫৫০ টাকা। ফোন: ৯৮৭৪৪৫৯৬৪৭। ওয়েবসাইট: www.sundarbantigersafari.com। আর একটি প্যাকেজে গদখালি হয়ে পাখিরালয়ের হোটেলে থেকে সুন্দরবন ঘুরে আসা যায়। এক রাত, দু’দিনের খরচ ৩৫০০ টাকা মাথাপিছু। দু’রাত-তিন দিনের খরচ মাথাপিছু ৪২০০ টাকা। ফোন: ৯৪৩৩০১০৫৭৪। সব কটি প্যাকেজেই কলকাতা থেকে যাওয়া এবং কলকাতায় ফেরা পর্যন্ত থাকা, খাওয়া, ঘোরা সব কিছু ধরা আছে। অন্তত ৮ জনের দলের জন্য এই রেট।
মনে রাখুন: শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। সুন্দরবনে ঢুকতে স্টিল ক্যামেরার চার্জ লাগে না, ভিডিও ক্যামেরার চার্জ লাগবে ৩০০ টাকা। লঞ্চে ঘোরার সময় কোনও একদিকের পাড়ে জন্তু দেখতে পেলে সবাই মিলে একসঙ্গে লঞ্চের এক দিকে চলে আসবেন না। এতে লঞ্চের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে বিপদ হতে পারে। জঙ্গলের মধ্যে তুখোড় গাইড ছাড়া মোটেও ঢুকবেন না। ওয়াচ-টাওয়ারে উঠে যত কম কথা বলা যায় ততই ভাল। এবং এ ক্ষেত্রেও অবশ্যই আগে ফোন করে তবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেবেন।
|
পঞ্চলিঙ্গেশ্বর |
|
পুজোয় পুরীতে অনেকেই যান। আপনি চলুন পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। এ হল মহাভারতের দেশ। বিশ্বাস হচ্ছে না? এখানকার মানুষরা কিন্তু বলেন পঞ্চলিঙ্গেশ্বরই হল জরাসন্ধের জন্মস্থান। এবং এখানেই নাকি ভীম আর জরাসন্ধের সেই ভীষণ মল্লযুদ্ধ হয়েছিল।
কী দেখবেন, কী করবেন: পাথরের খাঁজে জলধারার মধ্যে আছে জরাসন্ধের আরাধ্য পাঁচটি শিবলিঙ্গ। চোখে দেখতে পাবেন না, কিন্তু ছুঁলে বুঝতে পারবেন। সেই থেকেই নাম পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। কাছেই জঙ্গলের মধ্যে বিরাট চ্যাটালো পাথরএখানেই নাকি ভীম আর জরাসন্ধের যুদ্ধ হয়েছিল। বনদেবীর থান আছে। তার পাশ দিয়ে পথ সোজা চলে গেছে চারপুরিয়া ঝর্নার কাছে। পথের চারদিকে কিন্তু ঘন জঙ্গল। পঞ্চলিঙ্গেশ্বরের আশপাশের জঙ্গলে ওয়াইল্ডলাইফ প্রচুর। হাতি তো আছেই, চিতাবাঘ, ভালুকও আছে। কাছেই কালাবোনিয়া গ্রামে শিল্পীরা ধান, চাল, মুগডাল দিয়ে দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করেন। সামান্য দামের এই হাতের কাজ সংগ্রহে রাখার মতো। ৭৪ কিমি দূরে দেবকুণ্ড মিস করবেন না। ৫০-৬০ ফুট ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পরা জল, দেখার মতো। আর একটু এগোলে অম্বিকামাতার মন্দির। তারপর আরও দুর্গম চড়াই। চড়লে পৌঁছে যাওয়া যায় সুরযকুণ্ড আর উষাকুণ্ড। চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ধুমকূট ড্যাম থেকেও। টেন্ডা অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে পথ দিয়েই হেঁটে যাওয়া। ড্যামের জলে শুধু চূড়া ভেসে থাকা ঠাকুরানী দেবীর মন্দির। নীলগিরি রাজাদের সময়ে নিয়মিত পুজো হত। এখন পরিত্যক্ত।
কী ভাবে যাবেন: হাওড়া থেকে ধৌলি, ফলকনামা, ইস্টকোস্ট বা জনশতাব্দী ধরে নামতে হবে বালেশ্বর স্টেশনে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। ২৮ কিমি দূর। কলকাতা থেকে দূরত্ব ২৯০ কিমি। গাড়িতে যাওয়াই যায়। পাঁচ-সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা মতো লাগবে। বেশি দূর তো নয়, বাংলা-ওড়িষার বর্ডারেই তো পঞ্চলিঙ্গেশ্বর।
কোথায় থাকবেন: ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস আছে। ঘরভাড়া ৭৫০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকা, নির্ভর করছে আপনি কী ধরনের ঘর নিচ্ছেন তার ওপর এসি না নন-এসি। খাওয়া, ঘোরা আলাদা। লেনিন সরণির উৎকল ভবন থেকে বুকিং হয়। ফোন: ২২৪৯৩৬৫৩। এ ছাড়া বেসরকারি রিসর্ট আছে। নানা রকম প্যাকেজের ব্যবস্থা। তিন রাত চার দিন (মাথাপিছু ৪৩৫০-৫৫৫০ টাকা) বা দু’রাত তিন দিন (মাথাপিছু ৩৬৫০-৪৫৫০ টাকা)। কটেজ এবং টেন্ট, দু’রকমই পাবেন। প্যাকেজে থাকা, খাওয়া এবং ঘোরাঘুরি ধরা থাকে। ওয়েবসাইট: www.roopark.co.in। ফোন: ৯৮৩০২২৪০৪৫।
মনে রাখুন: শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। জঙ্গলের মধ্যে শিক্ষিত গাইড ছাড়া একদম যাবেন না। নিজের ড্রিঙ্ক কলকাতা থেকে নেওয়াই ভাল। আদিবাসীদের সঙ্গে সদ্ভাব রাখবেন। রাতে যেখানে আছেন, তার চৌহদ্দির বাইরে একেবারে বেরোবেন না, সঙ্গে গাড়ি থাকলেও। আর এখানেও আগে ফোনে যোগাযোগ করে নিন। তারপর প্ল্যান করুন যাওয়াটা।
|
মুকুটমণিপুর |
|
এখানে নদীর ঢেউ অনেক গল্প বলে। চুপ করে বসে থাকলে শোনা যাবে সে গল্প। হইচই থেকে দূরে এই গল্প শুনতেই তো আসা।
কী দেখবেন, কী করবেন: কংসাবতী আর কুমারী নদীর সঙ্গম আর টিলাঘেরা নিঃশব্দ সবুজে হারিয়ে যাওয়াএটাই মুকুটমণিপুর। নদীতে ওঠে ছোট ছোট ঢেউ। করার বিশেষ কিছু নেইসুতরাং নৌকো চেপে ভেসে পড়ুন নদীতে। নদী চওড়া হচ্ছে এক পাড় দেখা যায়, তো অন্য পাড় দিগন্তে বিলীন। আপনি ভেসে চলেছেন। হয়তো তার মধ্যেই দেখলেন জলের মধ্যে মাথাতোলা পাথরে চুপচাপ একপায়ে দাঁড়িয়ে আছে বক। অথবা হঠাৎ নীল-কমলার চমকে উড়ে যাওয়া মাছরাঙা। জলে ভেসেই পৌঁছবেন বনপুকুরিয়া মৃগদাব দ্বীপে। ছোট্ট, টিলা ঘেরা দ্বীপ, সেখানে চিতল হরিণের দৌড়োদৌড়ি। আরেক দিন হয়তো বাঁধ ধরে হাঁটা লাগালেনছ’কিলোমিটার হেঁটে পৌঁছলেন পরেশনাথ পাহাড়ি টিলায়সেখানে দেখবেন পাশাপাশি পার্শ্বনাথ, শিব ও অন্যান্য দেবদেবীর প্রাচীন মূর্তিখোলা আকাশের নীচে। কাছেই অম্বিকানগর। সেখানে আছে রাজা রাইচরণ ধবলদেবের ভগ্নপ্রায় রাজবাড়ি। বাংলায় জৈন সংস্কৃতির এক পীঠস্থান। আছে দেবী অম্বিকার মন্দিরও। আর নয়তো কোনও কিছুই না করে, হোটেলের ঘরের বারান্দায় বসে গুনতে পারেন নদীর ঢেউ।
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে মুকুটমণিপুরের দূরত্ব ২৪৮ কিমি। বাসে বা গাড়িতে সময় লাগবে আট ঘণ্টার মতো। এসপ্ল্যানেডের স্ট্যান্ড থেকে বাস ছাড়ে। ট্রেনে এলে বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুরে নেমে আবার বাসে বা গাড়িতে পৌঁছতে হবে।
কোথায় থাকবেন: পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ‘সোনাঝুরি কটেজ’ আছে। গাছপালায় ছাওয়া দারুণ পরিবেশ। সাধারণ ঘর ভাড়া ৭০০ টাকা, এসি ঘর ১০০০-১২০০ টাকা। খাওয়া আলাদা। প্রতিদিন মাথাপিছু খরচ পড়বে ৩০০ টাকার মতো। এ ছাড়া নদীর প্রায় ওপরে আছে বেসরকারি রিসর্ট। পুজোর সময় আলাদা করে ঘর বুকিং হয় না। প্যাকেজ ট্যুরে ঘোরানো হয়। দু’রাত তিন দিনের মাথাপিছু খরচ ৪৩০০ টাকা, থাকা, খাওয়া, সাইট-সিয়িং সব নিয়ে। বাঁকুড়া স্টেশন থেকে শুরু হয় প্যাকেজ। ফোন (দু’ জায়গার জন্যই): ৯৪৩২৬৬৮০০০।
মনে রাখুন: বাঁধে বা রাস্তাঘাটে আলো নেই। শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। নিজের ড্রিঙ্ক নিয়ে যেতে চাইলে কলকাতা থেকে নেওয়াই ভাল। রাতে যেখানে আছেন, তার চৌহদ্দির বাইরে একেবারে বেরোবেন না, সঙ্গে গাড়ি থাকলেও। মৃগদাব দ্বীপে হরিণদের দেখবেন, কিন্তু তাদের বিরক্ত করার বা খাওয়াবার চেষ্টা করবেন না। এখানেও আগে ফোনে যোগাযোগ করে নিন। তারপর প্ল্যান করুন যাওয়াটা।
|
তাজপুর |
দিঘা, শঙ্করপুর, মন্দারমণিতে বুকিং পাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি। কিন্তু ওই পথেই ছোট্ট একটা জায়গা আছে, যার কথা এখনও সবাই জানেন না। সে কারণেই তাজপুর। সমুদ্র পাবেন, কিন্তু ভিড় পাবেন না। পুজোর ক’টা দিন চুপচাপ কাটিয়ে আসতে পারেন এই সমুদ্রতীরে।
কী দেখবেন, কী করবেন: দারুণ সমুদ্রসৈকত, লাল কাঁকড়ার দল জায়গায় জায়গায় সোনালি বিচ লাল করে রেখেছে, সৈকত বরাবর লম্বা ঘন ঝাউ জঙ্গল, বিচের কাছে অদ্ভুত দেখতে কেয়াগাছের সারি, আর অতি সুন্দর এক লেগুনএই নিয়ে হল তাজপুর। ঘন ঝাউবনে নানা রকম পাখির ডাক। দেখতেও পারবেন নানা ধরনের পাখি। হাতে কিছুটা সময় থাকলে ঘুরে নেওয়া যায় কাছেই জেলেদের গ্রাম জলদা। আর ঘোরাঘুরি করার ইচ্ছে না হলে লেগুনের ধার ধরে নিশ্চিন্ত হেঁটে চলা নয়তো ঝাউবনের ছায়ায় বসে সমুদ্রের ঢেউ গোনা। তাজপুর যেহেতু আশপাশের জায়গাগুলোর থেকে অনেক শান্ত, তাই কখনও কখনও এখানে শুশুকের দল উঁকি মারে। ভাগ্য ভাল হলে তারা আপনাকেও দেখা দিতে পারে। তাজপুরের আরেকটা আকর্ষণ হল বিচ স্পোর্টস মানে সৈকতক্রীড়া। গোয়ায় যেমন হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে রোমাঞ্চকর হল প্যারাসেলিং। প্যারাশুটে বাঁধা আপনাকে জিপ দিয়ে টেনে পাখির মতো আকাশে ওড়াবার ব্যবস্থা। ওপর থেকে পুরো সমুদ্রসৈকত দর্শন একেবারে অন্য অভিজ্ঞতা। তবে বৃষ্টি হলে প্যারাশু্যট উড়বে না। প্যারাসেলিং ছাড়াও এখানে কায়াকিং, র্যাফটিং, বিচ সাইক্লিং এ সবের ব্যবস্থাও আছে। রেসিং সাইকেলে চড়ে বিচ ধরে যত দূর যেতে চান চলে যেতে পারেন। অর্থাৎ স্রেফ বিশ্রামও হতে পারে, অথবা নানা মজা করেও কাটাতে পারেন পুজোর ক’দিন এখানে। অবশ্য বিচ স্পোটর্স করতে চাইলে আগে থেকে বলে রাখা জরুরি।
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে তাজপুর ১৭৫ কিমি। গাড়িতে লাগে ঘণ্টা চারেক। নয়তো দিঘাগামী যে কোনও বাসে বালিসাই মোড়ে নেমে বাঁ দিকে ঢুকতে হয়। ভ্যানরিকশা আছে। পাঁচ কিলোমিটার পথ। আর ট্রেন তো আছেই। কান্ডারি কিংবা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেসে দিঘার আগের স্টেশন রামনগরে নামতে হবে। দুরন্ততে গেলে নামতে হবে দিঘায়। তার পর রামনগর বা দিঘা থেকে ভ্যানরিকশা ভাড়া নিতে হবে।
কোথায় থাকবেন: সরকারি কোনও ব্যবস্থা নেই। বেসরকারি থাকার জায়গা আছে কয়েকটা। ভাড়া মোটামুটি ৮৫০ থেকে ১৫০০ টাকা প্রতিদিন। এসি, নন-এসি দু’রকমের ঘরই পাবেন। নির্ভর করছে আপনি কী ধরনের ঘর নিচ্ছেন তার ওপর। খাওয়া-দাওয়া আলাদা। মোটামুটি মাথাপিছু ৩৫০-৪০০ টাকা লাগবে তাতে, প্রতিদিন। ফোন: ৯৮৩০২৭১০৬৪, ৯৪৩৩১১৯৫৩৫, ৯৮৩১৭৬৯৭৯০, ৯৮৩১৬৩১৬৩০। ওয়েবসাইট: www.tajpurhotel.com।
মনে রাখুন: বিদ্যুৎ নেই। অজ পাড়াগাঁ। সন্ধে থেকে রাত, আর দুপুরবেলাটা জেনারেটর চালিয়ে হোটেলগুলি বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে। সুতরাং শক্তিশালী টর্চ, মশা তাড়াবার ধূপ বা ক্রিম সঙ্গে রাখুন। সমুদ্রে স্নান করতে পারেন, কিন্তু নুলিয়া জাতীয় কেউ নেই। সুতরাং সমুদ্রের বেশি গভীরে না যাওয়াই ভাল। লেগুনে একদম স্নান করবেন না। বালির পাড় এখানে পায়ের চাপে ধসে যেতে পারে। আর রাতে একা বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে যাবেন না। যেখানে থাকছেন, তার চৌহদ্দিতেই থাকবেন। অবশ্যই আগে যোগাযোগ করে
তারপর রওনা হবেন।
মনে রাখবেন ওপরের সবকটি জায়গাতেই প্লাস্টিক বর্জনীয়।
সব জায়গাতেই ডব্ল বেড ঘরের ভাড়া দেওয়া হয়েছে। |
|
|
|
|
|