জেলা পরিষদের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থেকে নির্বাচিত তৃণমূল সদস্য অমিত প্রধান। শুক্রবার দুপুরে তমলুকে জেলাশাসকের কাছে জমা দেওয়া পদত্যাগপত্রে পেশায় চিকিৎসক অমিতবাবু লিখেছেন, ‘সক্রিয় রাজনীতিতে এসে নিজেকে সম্মান করতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই জেলা পরিষদের সদস্যপদ থেকে সরে গেলাম।’
তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি পূর্ব মেদিনীপুরে এই ভাবে দলীয় সদস্যের পদত্যাগের ঘটনায় আলোড়ন পড়েছে রাজনৈতিক মহলে। বরাবরই ডানপন্থী হিসাবে পরিচিত অমিতবাবু অবশ্য বলেন, “সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেও এখনও একশো ভাগ তৃণমূল সমর্থক আমি। তবে, জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব যে ভাবে দল চালাতে চাইছে, তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। তাই সরে দাঁড়িয়েছি।” তাঁর ক্ষোভ, “এলাকায় একটা টিউবওয়েল, গেঁওখালিতে কাঠের পুল করতে চেয়েও পারিনি। সব কিছুই আগে থেকে ঠিক থাকে জেলা পরিষদে।” |
নন্দীগ্রাম-কাণ্ড পরবর্তী ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের ৩৬টি আসনে তৃণমূল-এসইউসি জোট ও ১৭টি আসনে বামফ্রন্ট জেতে। পরবর্তী কালে নন্দীগ্রাম ২ ব্লক থেকে নির্বাচিত সিপিএমের জেলা পরিষদ সদস্য ননীগোপাল কয়াল তৃণমূলে যোগ দেন। এ দিকে, খেজুরি থেকে বিধানসভা নির্বাচনে জিতে পদত্যাগ করেন সভাধিপতি রণজিৎ মণ্ডল। সেই আসনে নির্বাচন হয়নি এখনও।
এ বার অমিতবাবুর পদত্যাগের ফলে জেলা পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না হারালেও রাজনৈতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্যে সদ্য ক্ষমতায় আসা তৃণমূল। এই প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেনের বক্তব্য, “দলের সম্পর্কে ক্ষোভ থাকলে উনি দলের মধ্যে আলোচনা করতে পারতেন। ডাক্তারবাবু আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। রাজনীতিতে পরিমিত আবেগ প্রয়োজন।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলা পরিষদের একমাত্র এমবিবিএস চিকিৎসক অমিতবাবুকে স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ হিসাবে চেয়েছিলেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। কিন্তু আর একাংশের সুপারিশ অনুযায়ী রফিকুল হাসানকে স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ করায় সায় দেন রাজ্য নেতৃত্ব। এই ঘটনায় সামান্য ক্ষুব্ধ হন অমিতবাবু। জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য স্থায়ী সমিতিতে অমিতবাবুকে রাখা হলেও অধিকাংশ বৈঠকে অনুপস্থিত থাকতেন অমিতবাবু। ফলে জেলা পরিষদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর। মুখে ক্ষোভের কথা সরাসরি স্বীকার না করলেও অমিতবাবু বলেন, “যে ভাবে দল আমাকে দায়িত্ব দিয়েছে, তার সঙ্গে মানিয়ে চলা সম্ভব হচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে জেলা নেতৃত্বের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করি। তারপরেই পদত্যাগপত্র জমা গিয়েছি।” |