...সময় এল কাছে
মাটির কলসি থেকে শতভুজা মা

‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে।’ সুন্দরীমোহন অ্যাভিনিউয়ের ২০ পল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বারের থিম এটাই। উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, মহিষাসুর নিজেকে অমর বলে মনে করলেও দুর্গার হাতে তার বিনাশ ঘটে। এই বিষয়টিই খড়িমাটি, থার্মোকল, প্যারিস এবং মডেলের সাহায্যে রূপায়িত হচ্ছে মণ্ডপে। এই পুজোর এ বার পঁয়ষট্টি বছর।
রাজশেখর বসু সরণি সংলগ্ন গোলমাঠ দুর্গাপুজো সমিতির থিম ‘বঙ্গের দুর্গা’। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার হবে বাঁশের তৈরি আটকোণা তেরোটি তারা। আলোকসজ্জায় ব্যবহার করা হচ্ছে প্রদীপ।
থিমে নেই, কিন্তু নজরকাড়া মণ্ডপ গড়ার লড়াইয়ে আছে আনন্দ পালিত রোডের এন্টালি শহিদস্মৃতি সঙ্ঘ। এন্টালি এলাকার পুরনো এই পুজোর মণ্ডপ হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের মীনাক্ষী মন্দিরের অনুকরণে। মণ্ডপ গড়ার কারিগরেরা এসেছেন নদিয়ার ফুলিয়া থেকে। সত্তর বছরে পা রাখল গোলপার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব। চেতলা সেন্ট্রাল পার্ক অ্যাসোসিয়েশন এ বার গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যে মণ্ডপ গড়ার পরিকল্পনা করেছে। এ ছাড়াও এই পুজোর মণ্ডপসজ্জায় থাকছে রবীন্দ্রনাথের আঁকা এবং
পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি।
কালীঘাটের নেপাল ভট্টাচার্য স্ট্রিটের সর্বজনীন দুর্গোৎসবের মণ্ডপ গড়ার পরিকল্পনা পুজো কমিটির সভ্যরাই করেছেন। মণ্ডপসজ্জার জন্য প্রয়োজনীয় মডেল পুরুষ শিল্পীরা তৈরি করলেও, প্রতিমা গড়ছেন কুমোরটুলির এক মহিলা মৃৎশিল্পী। এখানে দুর্গা দশভুজা নয়, শতভুজা। পুরাণ অনুসারে দুর্গা খাঁড়া দিয়ে মহিষের মুণ্ডচ্ছেদ করেন। মহিষের মৃতদেহ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছিল মহিষাসুর। ত্রিশূল দিয়ে তাকে বধ করেন দুর্গা। মণ্ডপে দেখা যাবে মহিষাসুর বধের দৃশ্যায়ন।
টালিগঞ্জ রোডের বেঙ্গল বয়েজ ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন ক্লাব তাদের মণ্ডপ সাজাচ্ছে মাটির কলসি দিয়ে। পুজোর উদ্যোক্তাদের কথায়: মাটির কলসি হল সুখ ও সমৃদ্ধির বাহক। তাই তাঁদের এ বারের থিম: কলসিভরা সুখ। চল্লিশের দশকে হাজরা এলাকায় কলকাতা পুরসভার কিছু কর্মী শুরু করেছিলেন শারদোৎসব। ধীরে ধীরে সেই পুজোই হয়ে ওঠে পুরসভার কর্মচারীদের পুজো। কলকাতা পুর কর্মচারী সর্বজনীন দুর্গোৎসবের এ বার ৬৯ বছর। প্রতি বছর পুরকর্মীরা যতীন দাস পার্কে এই পুজোর আয়োজন করেন। প্রতিমা আসে কালীঘাটের পটুয়াপাড়া থেকে।
এক সময়ে কলকাতার পুজোর অন্যতম আকর্ষণ ছিল চন্দননগরের আলোকসজ্জা। কিন্তু আজ মণ্ডপে তা কার্যত বিরল। তবে এ বার হাজরা স্পোর্টিং ক্লাব পরিচালিত ২২পল্লি সর্বজনীন দুর্গামণ্ডপে দেখা যাবে চন্দননগরের আলোকসজ্জা। ৬৫ বছরের পুরনো এই পুজোর প্রতিমা হচ্ছে একচালায় ডাকের সাজে।
নবমীর দিন পাড়ার বাসিন্দারা মণ্ডপে প্রীতিভোজে মিলিত হন। ৪১ বছরে পা রাখল শরৎ বসু রোড সংলগ্ন ল্যান্সডাউন প্লেসের শক্তি সাধনা সঙ্ঘ পরিচালিত সর্বজনীন দুর্গোৎসব। এই পুজোর মণ্ডপ গড়ার কারিগরেরা এসেছেন রানাঘাট থেকে। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হবে বিবেকানন্দের ছবি ও বাণী।
এ ছাড়াও আকর্ষণীয় পুজোর তালিকায় রয়েছে পার্কসার্কাস ময়দানের পুজো, দেশপ্রিয় পার্কের পুজো, এন্টালি মর্নিং অ্যাথলেটিক্স ক্লাব, প্রসন্নময়ী ঘাটের চেতলা সর্বসাধারণের দুর্গোৎসব এবং কলকাতার অন্যতম পুরনো বারোয়ারি মুখার্জি ঘাটের সর্বজনীন ধর্মপ্রসারিণী সমিতির পুজো।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.