|
...সময় এল কাছে |
আবাহনে নারীশক্তি
কোথাও বাংলাদেশের রাজবাড়ি, কোথাও সবুজায়ন,
কোথাও বা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে চলা। বারুইপুরের নানা
পুজোমণ্ডপ ঘুরে এসে লিখলেন শুভাশিস ঘটক
|
|
বছর দু’য়েক আগে নিজেদের এলাকা থেকে খানিক দূরে অঞ্জলি দিতে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ঠেলাঠেলিতে অঞ্জলি দেওয়া তো দূরের কথা, ছিটকে পড়ে গিয়েছিলেন। এর পরেই ওই বারো জন গৃহবধূ কোমর বেঁধে নেমে পরলেন দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা করতে। সারা বছর ধরে একটু একটু করে টাকা জমিয়ে একেবারে নিজেদের পুজো। ঠিক হয়, পঞ্চাশ হাজার টাকায় পুজো করা হবে। কিন্তু শেষে বাজেট খানিক বেড়ে যাওয়ায় খরচ সামাল দিতে সাহায্য নেওয়া হয় স্বামীদের। বারুইপুর পঞ্চাননতলা পুজো কমিটির ওই পুজো এ বার দ্বিতীয় বছরে পড়ল। ওই ১২ জন গৃহবধূই পুজোর সমস্ত আয়োজন করেন। সঙ্গে পুজোর চার দিন ভুরিভোজের আয়োজন। তাতে আমন্ত্রিত পাড়ার সক্কলে।
এ দিকে, মাস ছ’য়েক আগে স্থানীয় স্কুলের মাঠে নানা ধরনের গাছ পোতা হয়েছিল। বাঁশ-প্লাইউড-কাপড় দিয়ে তৈরি মণ্ডপকে কংক্রিটের জগৎ থেকে একেবারে আলাদা করে রাখতে ওই গাছগুলি দিয়েই মণ্ডপে সাজানোর পরিকল্পনা করেছে বারুইপুর চম্পাহাটি বান্ধব সমিতি পুজো কমিটি। তাদের থিম ‘সবুজায়ন’।
প্লাইউড ও থার্মোকল দিয়ে ভুটানের থিম্পুর এক মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে বারুইপুর পুজো উৎসব কমিটি। মণ্ডপ গড়তে বাঁশ আনা হচ্ছে অসম থেকে। প্রতিমা এখানে একেবারে সাবেক। |
|
মহীশূরের চামুণ্ডাদেবীর মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে বারুইপুর সাউথ গড়িয়া যুবকবৃন্দ পুজো কমিটির মণ্ডপ। পাটকাঠি ও প্লাইউড দিয়ে তৈরি ৪০ ফুট উঁচু পাহাড়ের নীচের গুহায় হবে পুজো। মণ্ডপের ভিতরে পাটকাঠির উপরে সোনালি রঙের প্রলেপ দিয়ে মূল মন্দিরটির আদলেই কারুকার্য করা হবে। মূল মন্দিরের মূর্তির আদলে তৈরি হচ্ছে দুর্গামূর্তিও।
বারুইপুর পদ্মপুকুর ইয়ুথ ক্লাব পুজো কমিটি অবশ্য এ বার দর্শনার্থীদের সোজা নিয়ে গিয়ে হাজির করবে বাংলাদেশের কোনও এক রাজবাড়িতে। সেখানে পুজো হবে ৫১ দুর্গার। প্লাইউড-বাঁশ-চট দিয়ে রাজবাড়ির আদলে তৈরি মণ্ডপের এক একটি ঘরে থাকবে নানা আদলের ছোট ছোট সব দুর্গামূর্তি। আর দালানে থাকবে মূল মূর্তি। ওপার বাংলায় রাজবাড়িতে ঠিক কেমন পুজো হত, বর্তমান প্রজন্মের কাছে তা-ই তুলে ধরবে এই পুজো কমিটি।
নাগাল্যান্ডের প্রত্যন্ত এক গ্রামের মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করছে বারুইপুর পুরন্দরপুর মুক্তি সঙ্ঘ। মণ্ডপেই দেখা মিলবে ওই গ্রামের নানা ধরনের কুটির শিল্প এবং নাগাল্যান্ডের লোকশিল্পের। এমনকী, দুর্গামূর্তিও এ বার তৈরি হবে নাগাল্যান্ডের দেবদেবীর আদলেই। পুজো কমিটির তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে নাগাল্যান্ডের কয়েকটি গ্রামের অদিবাসীদেরও। |
|
বারুইপুর ফুলতলা বিধান স্মৃতি সঙ্ঘ মণ্ডপে একই সঙ্গে দেখা যাবে অজিণ্ঠা ও ইলোরা। মণ্ডপের বাইরের দিক অজিণ্ঠার আদলে এবং ভিতরটা তৈরি হচ্ছে ইলোরার আদলে। বাঁশ-চট-ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে ওই মন্দির। থার্মোকলের উপর খোদাই করে তার উপরে রং দিয়ে অজিণ্ঠা-ইলোরার ভাস্কর্য সৃষ্টি করা হবে বলে জানালেন পুজো কমিটির সদস্যেরা। প্রতিমা সাবেক।
শাসন বালক সঙ্ঘের পুজোর থিম ‘পরিবর্তনে শান্তির জঙ্গলমহল’। মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের এক আদিবাসী গ্রামের আদলে। পুজোর চার দিন ধামসা-মাদলের ছন্দে দেখা মিলবে ছো নাচেরও।
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|