...সময় এল কাছে
রং না-মিলান্তি

রশির সামনেই ক্যানভাস। মানানসই জিনিসগুলো বেছে নিপুণ ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে।
হাতে সবুজ সুতো দিয়ে বানানো চুড়ি। সঙ্গে গোলাপি বটুয়া, গলায় কালো পাথরের মালা আর পায়ে তামাটে রঙের ফ্ল্যাট হিলড্ চটি। এর কোনও রং-ই না থাকতে পারে পোশাকে। তাতে কী?
ভয় নেই, এমনটাই এ বারের ফ্যাশন ট্রেন্ড। পোশাকের রং যা-ই হোক, অ্যাক্সেসরিস হবে রং-বেরঙের। জামার রঙের সঙ্গে ‘ম্যাচিং’ হার-দুল-চুড়ি-জুতো-ব্যাগের ফ্যাশন জেন-এক্সের কাছে ইতিহাস। এখন সাজ হতে হবে শুধু ‘চার্মিং’ নয়, ‘বোল্ড’ও। ভিড়ের মধ্যে আলাদা হতে তাই চাই হরেক রং।
অষ্টমী মানেই যে পরতে হবে সব চেয়ে ঝলমলে পোশাকটা, সে দিন আর নেই। সারা বছরের ক্যাজুয়ালস্ও বেশ পরা যায় উৎসবের দিনে। কিন্তু, পুজোর সাজ তো হতেই হবে রোজের থেকে আলাদা।
তার জন্যই দিন দিন বাড়ছে সাজের আনুষঙ্গিক অর্থাৎ, ‘অ্যাক্সেসরিসের’ দিকে নজর। একই পোশাক পরা হবে নানা অনুষ্ঠানে। তবে অনুষ্ঠানের সঙ্গে মানানসই গয়না, ব্যাগ, জুতো দিয়ে গুছিয়ে নিতে হবে সাজটা। একই পোশাকের সঙ্গে কখনও বটুয়া তো কখনও চলবে ক্লাচ পার্স। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বেছে নেওয়া যায় কুন্দন, মুক্তো বা কাঠের গয়না।
খুঁজে নেওয়া যায় এমন কিছু, যা চলতে পারে ট্র্যাডিশনাল থেকে পশ্চিমি, সব সাজের সঙ্গেই। গয়নার ডিজাইনার রোহিতা ভাস্করন জানালেন, ‘বোল্ড’ গয়নাই এই বছরের ট্রেন্ড। তাই কোনও ইভনিং ড্রেস-ই হোক বা শাড়ি রূপের রহস্য ধরে রাখবে কানের স্টোন-সেটিং ড্যাংলারটাই। তিনি বলেন, “বড়সড় কোনও নেকপিসও খুব ট্রেন্ডি দেখায় যে কোনও ধরনের পোশাকের সঙ্গে। নানা রঙের পাথর, কাঠ বা কোনও ধাতুর তৈরি জমকালো মালা বদলে দিতে পারে লুকটাই।” ধাতুর মধ্যে রোডিয়াম রং খুব চলছে এই উৎসবের মরসুমে। ফ্যাশনে ইন মুক্তো, কাঠ, ঝিনুক আর কাপড়ের গয়নাও, জানালেন রোহিতা।
সোনার গয়না ছেড়ে নানা রঙের গারনেট আর তামার কস্টিউম জুয়েলারি এ বার হিট বৌদিদের অষ্টমীর ঢাকাই আর গরদের সঙ্গেও। সাজ যদি হয় সাবেক ধাঁচের তবে সোনালি, রুপোলি, তামাটে ধাতুর উপরে নানা রঙের পাথর বসানো গলা ভরাট নেকলেস আর কানে ভারী দুল সবচেয়ে ট্রেন্ডি বলে মনে করছে ডিজাইনার মহল। সল্টলেকের এক শপিং মলে গয়না বিক্রেতা সোমু অগ্রবাল জানালেন, শাড়ির পাড়ের সঙ্গে মানানসই রঙের গারনেট আর কুন্দনের গয়না এ বার অনেক বিক্রি হয়েছে। সালোয়ার-কামিজ বা লহেঙ্গা-চোলির সঙ্গে বিভিন্ন ধাতুর তৈরি মানানসই ঝুমকা আর মিনাকারি কাজের গয়না হিট পুজোর ফ্যাশনে।
ধর্মতলা চত্বরের এক দোকানের তরফে মাধবী সিংহ জানালেন, পুজোর সাজের জন্য সব চেয়ে বেশি বিকোচ্ছে নানা ধরনের হাতের গয়না। বড় বড় পাথর সেটিং আংটি আর চুড়ি বেশ হিট এই মরসুমে। অনেক রঙের কাঠের মোটা বালা, রঙিন সুতোর চুড়ি আর কোনও ধাতুর তৈরি নানা ধরনের চুড়ির সেটও খুব জনপ্রিয় ক্রেতাদের মধ্যে।
ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালের টিপস্ও একই কথা বলছে। তিনি জানালেন, বড় কানপাশা, ঝুমকো, শ্যান্ডেলিয়ার দুল এ বার ফ্যাশনে ইন। সঙ্গে অবশ্যই চাই বড়সড় নজর কাড়া আংটি। ব্রেসলেট বা চুড়ির সঙ্গে ঘড়ি পরতে গেলে ভাল দেখায় না। তাই সাজ সাবেক হোক বা পশ্চিমী ঘেঁষা, তার সঙ্গে পরা যেতে পারে ব্রেসলেটের মতো ডিজাইনের একটা বড় ডায়ালের ঘড়ি।
‘ঘরে-বাইরে সমান তালে’র আধুনিকাদের সাজ কিন্তু শেষ হয় না শুধু পোশাক আর গয়নাতেই। এ বার পুজোয় সে সবের সঙ্গে অবশ্যই চাই একটা রং বাহারি সাইড ব্যাগ। এ ক্ষেত্রেও ‘বোল্ড’ ডিজাইনই হয়ে উঠেছে এই মরসুমের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট। নানা রকমের টোটে ব্যাগ বেশ মানাতে পারে উৎসবের সাজের সঙ্গে। হরেক রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি নানা আকারের ঝোলার পাশাপাশি চামড়া বা জুটের তৈরি কিছু শকিং রঙের ব্যাগ এ বার খুব বিকোচ্ছে বলে জানালেন দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলের ব্যাগ-বিক্রেতা সঞ্জয় গুপ্ত। আর সাজ যদি হয় একটু ক্যাজুয়াল তবে তার সঙ্গে দিব্যি চলতে পারে রঙিন ছোটখাটো ব্যাকপ্যাকও। ঝলমলে ট্র্যাডিশনালের সঙ্গে বেছে নেওয়া যায় মানানসই ছোট্ট একটা বটুয়া বা ক্লাচ পার্স। নকল নখের ডিজাইন আর হাত ভর্তি আংটিগুলোর সঙ্গে মানানসই কিছু রঙিন পাথর বসানো সেই পার্স আনতে পারে সাজে নতুন মাত্রা।
রঙিন সাজে সুসজ্জিত বঙ্গললনাদের পাদুকাযুগল কিন্তু এ পুজোয় ‘এথনিক’ নকশাই পছন্দ করছে। পরনে হোক শাড়ি বা জিনস্ পায়ে থাকতে পারে কাচ বা সুতো দিয়ে রাজস্থানী কাজ করা চপ্পল। সেখানেও ট্রেন্ড ‘মাল্টিকালার্ড’। হাইহিল জুতোর ফ্যাশন এখন আর নেই বলে জানালেন অগ্নিমিত্রা। তবু যাঁরা হিল পছন্দ করেন, তাঁরা বেছে নিচ্ছেন কাচ, পুঁতি, রঙিন পাথরের কারুকাজ করা ‘এম্বেলিশড্’ হিল। এমনই জানালেন উত্তর থেকে দক্ষিণ, নামী ব্র্যান্ড থেকে ছোট দোকানের জুতো-বিক্রেতারাও।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য ও পিন্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.