|
|
|
|
|
|
|
...সময় এল কাছে |
পুজোয় বিন্দাস
পাশ্চাত্যের ছোঁয়া, না কি চারটে দিন ফিরে যাওয়া সাবেকিয়ানায়,
কেমন হবে পুজোর সাজ? লিখলেন পরমা দাশগুপ্ত
|
|
জিন্স-কুর্তির ফুর্তিবাজ মেয়েটাই অষ্টমীর তাঁতের শাড়িতে আচমকা অপরূপা।
সারা বছরের ইঁদুরদৌড় থেকে ওই চারটে দিনই তো ছুটি নেওয়া। রোজকার জিন্স-টপ, ফর্মালওয়্যারকেও তাকে তুলে রাখা ওই চারটে দিনেই। সে শাড়ির বাঙালিয়ানাই হোক, বা সালোয়ার-কুর্তার উচ্ছলতা, ওই ক’টা দিনই প্রাণভরে সাজার পালা। শিউলির সৌরভে মিশে যাওয়া নতুন
জামার গন্ধ।
উৎসবের দিনগুলোয় এ শহরের নন্দিনীদের সাবেক শাড়িতেই দেখতে ভালবাসেন ডিজাইনার কিরণউত্তম ঘোষ। বললেন, “পুজোয় বাঙালি মেয়েদের শাড়িতেই ভাল দেখায়। তাঁত, কাঁথাকাজ, এমব্রয়ডারি যে কোনও শাড়িই এ দিনগুলির উপযোগী। শাড়ির সঙ্গে লেগিংসের মতো এক্সপেরিমেন্টাল সাজের কথাও ভাবা যেতে পারে। তবে তাতে স্বচ্ছন্দ হতে পারলে, তবেই। শাড়ি সামলাতে না পারলে কুর্তাতেও বেশ ‘এথনিক’ লাগবে। তবে পুজোর ফ্যাশনে আছে বলেই যা খুশি একটা পোশাক কিনে ফেলার আগে মাথায় রাখা উচিত তা পরে মানাবে কি না।” শাড়ি-কুর্তার সঙ্গে তাঁর পছন্দ ছিমছাম সাজের ‘সিম্পল’ লুক। বাজারচলতি জমকালো পোশাকের ভিড়ে যা নজর কাড়ে। কিরণের মতে, রঙের ক্ষেত্রে পুজোর ফ্যাশনে ‘ইন’ অ্যাসিড কালার্স বা ক্যাটকেটে রং, অর্থাৎ বিভিন্ন রঙের ফ্লুরোসেন্ট শেড। তবে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ওই রং নয়, বরং বাকি পোশাকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রংগুলি ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, অন্য রঙের পোশাকের সঙ্গে ওই ধরনের উজ্জ্বল রঙের স্কার্ফ সাজে বাড়তি আমেজ আনবে। ফ্লুরোসেন্ট শেড ছাড়া কমলা, হলুদ, লাইম গ্রিন, গোলাপি রংও ফ্যাশনে রয়েছে বলে জানালেন তিনি।
পোশাকে হাল্কা বা গাঢ় রঙের সঙ্গে অ্যাসিড কালার্সের যুগলবন্দির কথা বলছেন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পালও। বলছেন পুজো মানেই নানা রকম শাড়ির কথা। বললেন, “পুজোর সাজে থাক ঢাকাই, তসর, কাঞ্জিভরম, গাদোয়ালের মতো ট্র্যাডিশনাল শাড়ি। সঙ্গে আধুনিক ডিজাইনের সাহসী অফ শোল্ডার বা ওয়ান শোল্ডার, পোল্কা ডট্স, এবং রেট্রো ব্লাউজে ভাল দেখাবে। আশির দশকের লং স্লিম কুর্তা-চুড়িদারও ফিরেছে ফ্যাশনে। পশ্চিমী পোশাক পরতে চাইলে আছে হাঁটুঝুল পোশাক, ম্যাক্সি ড্রেস, উজ্জ্বল এবং স্ট্রাইপ, ফ্লোরাল এবং চেকের বোল্ড প্রিন্ট।” এ সবের পাশাপাশি অনারকলি সালোয়ারও এ মরসুমে তুমুল ভাবে ফ্যাশনে আছে বলে জানালেন তিনি। |
|
পুজোর বাজার অবশ্য আছে পুজোর বাজারেই। কড়া রোদ, বৃষ্টির তোয়াক্কা না করে শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ভিড়ে ঠাসা। আর শারদোৎসব মানেই শাড়ির প্রেমে হাবুডাবু আঠেরো থেকে আশি। আনোয়ার শাহ রোডের এক শপিং মলে শাড়ি-পাঞ্জাবির দোকানের এক কর্মী বাপ্পা বসু জানালেন, এ বার চাহিদা বেশি সাউথ কটন, কোরা সিল্ক এবং তসরের। ঝোঁক বেশি লাল এবং কালো রঙের দিকেই। গড়িয়াহাটের একটি পোশাক বিপণিতে অবশ্য দেদার চাহিদা রাজস্থানি বাঁধনি, নেট, লেহেঙ্গা শাড়ি, ফ্যান্সি গিচা সিল্ক এবং কোটার। ঝলমলে রঙের এই শাড়িগুলির চাহিদা বেশি কমবয়সীদের মধ্যেই। দক্ষিণ কলকাতার এক বুটিক রাখছে সুতির শাড়ি। তবে কদর বেশি কোটা এবং মটকারই। শহরের আর একটি শাড়ি বিপণিতে আবার দেখা গেল সুতি এবং দক্ষিণী সিল্কের শাড়িতে মজেছেন ক্রেতারা। আর এথনিক শাড়ির প্রেমেই মজে থাকেন যাঁরা, পুজোর বাজারে তাদের জন্য হাজির রাজা এস বিশ্বাসের তৈরি যোধপুরী মোটিফ এবং পিপলি-র কাজ করা ডিজাইনার শাড়ি এবং বনশ্রী রাও-এর হাতে আঁকা
কলমকারী শাড়িও।
অনভ্যাসের শাড়িতে না হয় কাটল একটা দিন। কিন্তু শাড়ি সামলানোর ভয়ে যাঁরা এখনও কাবু, তাঁদের বাকি দিনগুলো কাটবে কীসে? ফ্যাশন বলছে এ বার তুমুল ভাবে ফিরে এসেছে নানা রঙের পাতিয়ালা সালোয়ার। বাজারে ‘হিট’ অনারকলি কামিজের সঙ্গেই হোক বা নানা ধরনের কুর্তি, সবের সঙ্গেই ‘মাস্ট’ বড় ঘেরের এই রংবাহারি সালোয়ার।
শহরের একটি পোশাক বিপণি চেনের তরফে জানানো হয়েছে, ছোট-বড় সব মেয়েই চাইছেন জরির কাজ, সিকুইন বা এমব্রয়ডারি করা নানা ধরনের উজ্জ্বল শেডের অনারকলি কামিজ এবং পাতিয়ালার যুগলবন্দি। এ ছাড়া, নানা স্টাইলের কুর্তির পাশাপাশি টপের সঙ্গে প্রিন্টেড বা রংচঙে শ্রাগ বা কেপের চাহিদাও রয়েছে ভালই। আগের কয়েকটি মরসুমে বাজার মাতানো পিনটাক কুর্তি, হারেম প্যান্ট, লেগিংস ও স্কার্টের কদর বরং বেশ কিছুটা কম। সারা বছরের সঙ্গী জিন্সে অবশ্য এ বার এমব্রয়ডারির চেয়ে নানা শেডের ওয়াশেই মজেছেন সকলে। আর রঙের ক্ষেত্রে সকলেই বেছে নিচ্ছেন হলুদ, লাল, ফুশিয়া, বেগুনির মতো নানা ধরনের উজ্জ্বল শেড। |
|
গড়িয়াহাটের বিপণির কর্মীরাও জানালেন, কমবয়সীদের ক্রেতাদের একটা বড় অংশ ঝুঁকছে উজ্জ্বল রঙের ফুলহাতা বা ঘটি হাতা অনারকলি সালোয়ার সেট এবং নানা রঙের কাজ করা বা প্রিন্টেড কুর্তির দিকে। পশ্চিমি পোশাকে চাহিদা রয়েছে ঘেরওয়ালা বেলুন টপ, নানা ধরনের ফ্যান্সি ও সিন্থেটিক টপ, রংচঙে প্রিন্টেড লং স্কার্ট, ধোতি স্কার্ট, ফ্যান্সি হারেম প্যান্ট,
চেক প্রিন্টের শার্ট, সুতির ক্যাপ্রি এবং পাথর বসানো ফ্যান্সি স্টকিংসের। ঝলমলে রঙের পাশাপাশি সাদা এবং কালোরঙা পোশাকেরও চাহিদা রয়েছে ভালই। ধর্মতলার এক শপিং মলে আবার তুমুল চাহিদা নানা রঙের
হাঁটুঝুল পোশাক, কটন স্ট্রেচ, গ্রিক স্টাইল টোগা ড্রেস, হালফ্যাশনের টপ, জাম্পস্যুট এবং সুতি ও নেটের রঙচঙে কুর্তির। টপের ক্ষেত্রে ‘হিট’ চওড়া বেল্টওয়ালা টপ, অ্যাসিমেট্রিক কাট, কাফতান স্টাইল টপ, কাউল নেক এবং শ্রাগ বা কেপের সঙ্গে টপের যুগলবন্দি। এ ছাড়া প্রায় সকলেই চাইছেন নানা ওয়াশের আঁটোসাঁটো জিন্স, ক্যাপ্রি, স্কার্টের মতো দেখতে আফগান প্যান্ট এবং নতুন চেহারার সিকুইনের কাজ করা, মোবাইল পকেটওয়ালা হারেম প্যান্টেরও যে চাহিদা আছে ভালই, বিভিন্ন দোকানের তরফে তা জানালেন মারিও, জাহির, হরিশরা। ভারতীয় পোশাকের দোকানগুলিতে যথারীতি দেদার বিকোচ্ছে নানা রঙের অনারকলি সালোয়ার। অন্য দিকে, সব জায়গাতেই চাহিদা তুলনায় কম হলেও স্কার্টের প্রেমেই এখনও হাবুডুবু খাচ্ছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য অ্যাঙ্কল-লেংথ, নি-লেংথ বা শর্ট নানা রকম দৈর্ঘ্যের স্কার্ট এ বারও রয়েছে গড়িয়াহাটের একটি বুটিকের সম্ভারে। কর্ণধার ঊর্মি হাজরা জানান, সঙ্গে পরা যায় ছোট হাতা কিংবা সাহসী কাট-অ্যাওয়ে হাতার টপ। সঙ্গে একটা উজ্জ্বল রঙের পাতলা স্কার্ফ নিলেও ভাল দেখাবে।
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ট্রেন্ড মেনেই পুজোয় সাজতে চান যাঁরা, তাঁদের জন্য আনোয়ার শাহ রোড এবং ই এম বাইপাসের শপিং মল দু’টিতে রয়েছে বেশ কিছু দোকান। কর্মীরা জানালেন, নীল, হলুদ, কমলার মতো উজ্জ্বল শেড, আশির দশকের মতো ছোট ঝুলের টপ, নানা রঙের প্রিন্টেড টপ রয়েছে এ বারের ফল-উইন্টার ফ্যাশনে।
তবে শাড়িই হোক বা অনারকলি, জিন্স-টপ হোক বা স্কার্ট পুজোর চারটে দিনে যেন কোনও এক জাদুমন্ত্রে অনন্যা হয়ে ওঠেন বাঙালি কন্যা।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|