বাগান অব্যবস্থার শিকার
ওডাফা ভারতের হয়ে খেলতে চান
মোহনবাগানে কি আজ শনিবার থেকেই শুরু হয়ে যাবে ওডাফা-ব্যারেটো জুটির বর্ণছটা?
ভারতে স্টিভ ডার্বির কোচিং জীবনের অভিষেক লগ্ন কি পুণের বৃষ্টির মতোই হঠাৎ শুরু হবে ঝমঝমিয়ে?
দুই বিদেশি মহা তারকার মাঝে পড়ে কতটা আলো ছড়াতে পারবেন দেশের সেরা স্ট্রাইকার সুনীল ছেত্রী?
রহিম নবির নতুন জার্সি ‘পয়মন্ত’ হবে? সস্ত্রীক এখানে আসা অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার সাইমন স্টোরি কি ‘খবর’ হবেন ম্যাচের পর?
এরকম অসংখ্য প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে ফেড কাপ অভিযান শুরু করতে চলেছে গতবারের ট্রফিহীন মোহনবাগান। শিলংয়ের নামগোত্রহীন একটি ক্লাব ওয়াইংডোর বিরুদ্ধে। যোগ্যতানির্ণায়ক ম্যাচের সাফল্য পেয়ে যাঁরা আজ ওডাফা-ব্যারেটো-নবি-প্রদীপদের মুখোমুখি। ধারে এবং ভারে কার্লটন চ্যাপম্যানের টিম ডার্বি বাহিনীর ধারেকাছে নয়। তবুও শুক্রবার সারাদিন মোহনবাগানকে দেখে মনে হল অদ্ভুত একটা ছায়া যেন পড়েছে পুরো টিমের উপর। ছায়াটা ভয়ের নয়, তীব্র চাপের। প্রত্যাশার চাপ। সবুজ-মেরুন জার্সির এগারোটা মুখই যেন, এক একটা থিম পুজোর কর্তার মুখের মতো। ‘পুরস্কার’ পাব কি পাব না সেই ভয়ে জড়সড়। মরসুমের প্রথম ম্যাচ বলে হয়তো?  সম্ভবত সে জন্যই ডিনার টেবিল থেকে মাঠ সর্বত্রই মজায় ব্যস্ত থাকা মোহন-কোচের মুখে সতর্কতা। “ওদের ভয় পাচ্ছি না, তবে গুরুত্বও কম দিচ্ছি না।” কোচের কথার প্রতিধ্বনি দেশের সবথেকে দামি ফুটবলার ওডাফা ওকোলির মুখেও। “নতুন ইনিংস শুরুর মুখে টেনশন নেই। তবুও সারাক্ষণ ম্যাচটা নিয়েই চিন্তা করছি। ছোট টিম কিন্তু বড় টিমের বিরুদ্ধে সব সময়ই ভয়ঙ্কর হয়।” এ দিনই তিনি আবার বলে দিয়েছেন, “ভারতের জাতীয় দলে সুযোগ পেলে নাইজিরিয়ার নাগরিকত্ব ছেড়ে দেবেন। জমা দিয়ে দেবেন পাসপোর্ট।”
পাহাড়ের কোলে যে কোনও আন্তর্জাতিক প্র্যাক্টিস স্টেডিয়ামের মতো আবহাওয়া পুণে এফ সি-র মাঠ ঘিরে। ঘাসের মাঠটা অবশ্য ময়দানের যে কোনও খোলা মাঠের থেকেও খারাপ। পাশেই আই পি এলের জন্য নির্মিত হচ্ছে চোখ ধাঁধানো ক্রিকেট স্টেডিয়াম। পুণের মাঠের শুধুই পাশে জনা পঁচিশেক লোকের বসার অস্থায়ী কাঠের গ্যালারি। নেই ড্রেসিংরুম, বাথরুম। গোলে জাল নেই। যে ছোট বাসটি মাঠে আসার জন্য দেওয়া হয়েছিল তার দরজা ছিল না। অনেক ফুটবলারকে মাটিতে বসে আসতে হয়। এতে ডার্বি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। জাল না থাকায় সেট পিস মুভমেন্ট করাতে পারেননি। ফেড কাপ খেলতে আসা আটটি দলই ভোর থেকে বিকেল এই মাঠেই অনুশীলন করছে। ফলে কাদায় মাখামাখি। অনুশীলনে নামার মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ডার্বি দৌড়ে চলে এলেন মাঠের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের কাছে। তার পর একহাত নিলেন ফেজারেশনকে। “গোলের পাশের ওই জায়গাটা একটু দেখে আসুন। যা গর্ত তাতে মানুষ পোঁতা যেতে পারে। এই মাঠে প্র্যাক্টিস করে কোনও দেশের ফুটবলে উন্নতি সম্ভব নয়। ফেড কাপের মতো টুর্নামেন্টেরই এই অবস্থা।” তাঁর দলের অনুশীলনে কিন্তু উন্নতির ছোঁয়া, চমকও। সম্ভাব্য টিমে ঢুকে পড়েছেন বজবজের জুয়েল রাজা। সুরকুমারকে বসিয়ে। রাইট উইং হাফে। সাত বছর আগে নাকি ওই পজিশনে খেলতেন জুয়েল, জানাচ্ছেন নিজেই। বাকি দলটা প্রত্যাশিতই। গোলে শিল্টনের সামনে তিন ব্যাক রাকেশ মাসি, সাইমন স্টোরি আর আনোয়ার। মাঝমাঠের চার-- জুয়েল রাজা, মুরলি, প্রদীপ এবং নবি। সুনীল-ওডাফা দুই স্ট্রাইকারের সামান্য পিছনে ব্যারেটো। রোমিং স্ট্রাইকার হয়েও মূলত পাসারের ভূমিকায়। মোহনবাগান মাঠে বসে ফেড কাপে ওয়াইংডোর ম্যাচ দেখেছেন ডার্বি। বলছিলেন, “আমি জানি ওয়াইংডোর বুদ্ধিমান কোচ কাউকে কাউকে মার্কিং করবেন। দু’জন আটকে গেলেও যাতে বাকিরা ফাঁকা থাকে সেটা দেখতে হবে।”
ডার্বি তাঁর টিমের সাফল্যের পথ তৈরির অঙ্ক কষবেন সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মোহনবাগানের যাবতীয় অঙ্ক বা প্রত্যাশা যে ব্যারেটোর সঙ্গে আবর্তিত হচ্ছে ‘গোলমেশিন’ ওডাফা ওকোলিকে ঘিরেও। অন্যরা মাঠে চলে যাওয়ার সামান্য পরে হেডফোনে গান শুনতে শুনতে অনুশীলনে নেমে পড়লেন ওডাফা। মুহূর্তে সব চোখ ও ক্যামেরা ঘুরে গেল সেদিকেই। হাল্কা অনুশীলনের পর আবার অধিনায়ক ব্যারেটোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। “ও হচ্ছে আমাদের বিগ বি, অমিতাভ বচ্চন। গ্রেট ফুটবলার। খেলার সময় ও পিছনে থাকবে এটা বিরাট প্রাপ্তি।” চার্চিলে থাকার সময় কোচেদের সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়া তাঁর অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এখানে আপাতত ডার্বির প্রশংসায় পঞ্চমুখ তিনি। বললেন, “বহু কোচের অধীনে খেলেছি। চার্চিলকে আই লিগে তোলা জর্জ কুশন এত দিন আমার কাছে সেরা ছিল। পাশে রাখব ডার্বিকে। চূড়ান্ত পেশাদার।” নতুন নয় নম্বর সবুজ-মেরুন জার্সিতে নতুন ইনিংসে টার্গেট কী জানতে চাইলে অবশ্য চটে যাচ্ছেন তিনি। “গোল পাব কি না সেটা ঈশ্বর জানেন। আমি আগে কী করেছি মনে রাখি না। সামনের দিকে তাকাই। জয় চাই জয়। কাল জয় দিয়ে শুরু করতে চাই।” শুধু ওডাফা-ব্যারেটোকে নিয়েই কেন সব উন্মাদনা তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুললেন সুনীল ছেত্রী। তারকা স্ট্রাইকার বলছিলেন, “খেলবে কিন্তু এগারোজন। আমাকে নিয়েই যদি এরকম হত বিরক্ত হতাম। সবাই মিলে জিততে হবে।”
সুনীল ভুল বলেননি। কিন্তু দুই ফুটবল মহানায়কের যুগলবন্দির মঞ্চে আসার মুখে ফেস বুক, টুইটারে উপচে পড়া প্রত্যাশার পারদ থামাবে কে? ওডাফা-ব্যারেটো জুটির সাফল্যের মাহেন্দ্রক্ষণের দিকে চাতক পাখির মতোই তাকিয়ে যে সবুজ-মেরুনের আসমুদ্র হিমাচল।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.