আজ ইস্টবেঙ্গল বনাম মহমেডান
আক্রমণেই আগমনী মর্গ্যানের
ঢাক কোথা থেকে এল? পিছন পিছন আবার কাঁসির বদলে ম্যারাকাস। ঝুমঝুমি। জোড়া ঢাকের সঙ্গে বাজছে তালেতালে। ধুতি-পাঞ্জাবির এক ঝাঁকড়াচুলো মধ্যবয়স্ককে ঘিরে কচিকাঁচাদের ভিড়। তিনি, সব ফুটবলারের কাছে গিয়ে বলছেন, “হবে, হবে! চ্যাম্পিয়ন হবে!”
সত্যজিতের গুগাবাবা-র ভূতের রাজা স্টাইল! ইদানীং ইস্টবেঙ্গলের খেলা থাকলেই এই স্বঘোষিত জ্যোতিষী সেজেগুজে হাজির ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে।
হাস্যরসের পাশে বিষণ্ণতাও রয়েছে। প্র্যাক্টিস সেরে টোলগে, পেন, গাও, ওপারা-রা সবাই বেরিয়ে গেছেন। তার অনেক পরে এক ফুটবলারকে বেরোতে দেখা গেল। মাঠের ধারে সার দেওয়া টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড। কোনও ক্যামেরা নেই সেখানে। ওই জায়গা দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে বেরোনোর সময় কোনও ক্যামেরা তাঁকে ধরল না কেন কে জানে! ইস্টবেঙ্গল অধিনায়ক অভ্র মণ্ডল। প্র্যাক্টিস ম্যাচ চলাকালীন বাইরে দাঁড়িয়ে খেলা দেখছিলেন আমাদের মতো।
ভারতীয় ফুটবলের আগমনী নিয়ে হাজির ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান ম্যাচেও এক সঙ্গে কৌতুক ও বিষণ্ণ রস লেগে। কৌতুক, মেসি-মায়ার পরে যুবভারতীর প্রথম ম্যাচে ফুটবলাররা ভক্ত থেকে তারকা হতে পারবেন? গ্যালারিতে বসে এঁরাই আমজনতার সঙ্গে মিশে মেসিকে দেখেছেন। বিষণ্ণতা, মেসির ঘোর কাটিয়ে যুবভারতী আবার ফিরতে চায় পুরনো জঞ্জাল পর্বে। উদাহরণ চান? ক্রীড়ামন্ত্রীর ঘরের দু’ফুট দূরের বাথরুম উপচে পড়ছে জল ও ইউরিয়ার গন্ধে। কে দিব্যি দিয়েছে, পুজোর আগে সব জায়গায় শিউলির গন্ধ ছড়াতে হবে?
এ সবের মধ্যেই, বর্নমাউথ ক্লাবে জর্জ বেস্টের প্রাক্তন সতীর্থ ট্রেভর জেমস মর্গ্যান ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের স্বপ্ন-অর্গ্যান হাতে দাঁড়িয়ে। ফেড কাপে হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন।
মাঠে প্রস্তুতি দলের। মাঠের বাইরে অধিনায়ক অভ্র মণ্ডল। ছবি: উৎপল সরকার
মর্গ্যানের সমস্যা: গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে উগা ওপারা বলছিলেন, “গতবার ফেড কাপ খেলতে যাওয়ার আগে আমরা অনেকগুলো ম্যাচ খেলেছিলাম কলকাতা লিগে। বোঝাপড়া তৈরি হয়ে গেছিল ভাল।” মর্গ্যান ও তাঁর গোলকিপার কোচ অতনু মানছেন সেটা।
মর্গ্যানের সুবিধে: কলকাতা লিগে খেলা না হোক, অনেক দিন ধরে তো ট্রেনিং হয়েছে! দীর্ঘ দিনের কর্তা স্বপন বলের জোগানো তথ্য, “১৫টা প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলেছি এ বার। কোনও বার এত খেলে নামিনি।”
মর্গ্যানের নীতি: কেন? সেই এক ছক তো আছেই! ৪-১-২-১-২। উগা ওপারা আর নির্মল ছেত্রীর সামনে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন মেহতাব। টোলগে-বলজিৎ সাহনির পিছনে অ্যাটাকিং হোলে পেন ওরজি। সাহেব কোচের কথায়, “কিছু কিছু জিনিস না পাল্টানোই হল বুদ্ধিমানের কাজ।”
মর্গ্যানের চাল: প্রথম দলেই নেই, তবু ইস্টবেঙ্গলে সবার আলোচনায় আসছে স্কট অ্যালান গাওয়ের নাম। গতবারের সেরা মেহতাবের সার্টিফিকেট, “আমার দেখা সেরা বিদেশি। এমন ফ্রি কিক ভারতে কাউকে নিতে দেখিনি।” গাওতে মুগ্ধ মর্গ্যান কী করে তাঁকে তিন বিদেশির মধ্যে ঢোকান? প্র্যাক্টিসে দ্বিতীয়ার্ধে অ্যালান গাও এবং রাজু গায়কোয়াড়কে একসঙ্গে বদলি হিসেবে নামালেন। ওপারার জায়গায় রাজু, বলজিতের বদলে গাও। মর্গ্যান কি ভাবছেন, মহমেডানের বিরুদ্ধে বিদেশি ডিফেন্ডার ছাড়াই যথেষ্ট? হয়তো। তিনি কিন্তু সিকিম ইউনাইটেডের কাছে হেরেছেন!
মর্গ্যানের অস্ত্র: ঘামে ভেজা জার্সিটা দিয়ে মুখ মুছে টোলগের মুখে মৃদু হাসি, “আমরা সেরা তিনটে দলের মধ্যে আছি। লড়াই তো হবে পাঁচটা দলের। ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো, চার্চিল, মোহনবাগান, সালগাওকর।” মন দিয়ে দেখলাম, ‘মোহনবাগান’ উচ্চারণ হল চার নম্বরে। এই আক্রমণাত্মক আত্মবিশ্বাস দলের প্রত্যেকের অস্ত্র। পেন ওর্জি যেমন সটান, “মহমেডান সমর্থকদের কথা বলছেন? ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা মাঠে ওদের থেকে বেশি থাকবে।”
মর্গ্যানের পরিবর্তন: পরিবর্তনের বাজারে পরিবর্তন হবে না কী করে হয়? প্রথম এগারোর অবয়ব ঠিক রাখলেও দুই সাইডব্যাক বদলাতে পারে। প্রথম দলের প্র্যাক্টিসে গতবারের ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন দলের সাইডব্যাক সৌমিক দে, নওবা সিংহ বাইরে। মাঠে রবার্ট ও অভিষেক দাস। প্রথম থেকেই মাঝমাঠে বিকল্প অধিনায়ক সঞ্জু প্রধান। ওটাই কি প্রথম দল? মর্গ্যান মুখ টিপে হাসেন, “দেখুন না!”
এত ভারি শব্দগুচ্ছসমস্যা, নীতি, চাল, অস্ত্র, পরিবর্তন সাম্প্রতিক মহমেডানের ক্ষেত্রে বেমানান। তৃণমূলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আমেদের জমানাতেও কোনও পরিবর্তন আসেনি। বড় দলের বিরুদ্ধে এখনও টেনিস স্কোরের টিম। দাদার মৃত্যুর জন্য অনুশীলনে আসেননি কোচ অলোক মুখোপাধ্যায়। কিন্তু তাঁর সাহসের উৎস বোঝা গেল, নাইজিরিয়ান স্টপার হাসান ও কোরিয়ান মিডফিল্ডার হান উক। সুদর্শন হান উক থাকেন পার্ক স্ট্রিটে। কিন্তু কোরিয়ান খাবারের সন্ধানে প্রতি দিন যান সল্টলেকে। “এত ভাল এশিয়ান ফুটবলার ভারতে নেই”, টোলগে-সুওকা-আরাতাদের মনে রেখেই বলছিলেন অলোক।
যুবভারতীর প্রধান গেটের সামনেটা ফাঁকা। দীর্ঘকায় অ্যালান গাও প্র্যাক্টিস শেষে নীল টি শার্টে গাড়ির অপেক্ষা করছিলেন। সে ভাবে কেউ তাঁকে চিনতে পারছে না মরসুমের প্রথম ম্যাচের আগে। টোলগে-ওপারার অপেক্ষায় কচিকাঁচারা। ঢাক বাজছে ও দিকে।
কল্পনায় ভাসছিল, শনিবার ম্যাচটার পরে অ্যালান গাও কী ভাবে ওখান দিয়ে মাঠ ছাড়েন!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.