একেই রাস্তা বেহাল। তার উপর বাসের রেষারেষি। শুক্রবার দুপুরে খাস মেদিনীপুরে তারই বলি হলেন এক বাসযাত্রী। আহত হয়েছেন আরও কয়েক জন। তার মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সকলেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কেরানিচটি থেকে ধর্মার মাঝে তলকুইয়ের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে বেলা ১২টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানিয়েছে, মেদিনীপুর-ঘাটালগামী একটি বাস দ্রুত গতিতে আর একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী কেরানিচটির বিজ্ঞান সাঁতরা বলেন, “আমি ধর্মা গিয়েছিলাম। ফেরার সময় দেখি একটি বাস প্রচণ্ড জোরে আসছে। তাকে ওভারটেক করতে গিয়ে পিছনের বাসটি তার থেকেও জোরে চলছে। এমন সময় সামনে একটি লরি এসে পড়ে। প্রথম বাসটি জোরে ব্রেক কষেই উল্টে যায়।” ওই বাসেই ছিলেন কাশীনাথ বেরা (৩১)। বাড়ি চন্দ্রকোনা থানা এলাকার ঝাঁকরা গ্রামে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। |
পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই নানা রোগে ভুগছিলেন কাশীনাথবাবু। ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়েছিলেন। এ দিন সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর ফেরা হল না। কাশীনাথবাবুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। আকস্মিক দুর্ঘটনায় স্বামীকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েন তিনি। কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারান। পরে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে গিয়ে বাড়িতে খবর দেয়। কাশীনাথবাবুর বাসেই ছিলেন ঘাটালের বাসিন্দা মহুয়া মণ্ডল। মেদিনীপুরে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। তিনি বলেন, “হঠাৎ জোরে ব্রেক কষার শব্দ শুনলাম। তারপরই বাস উল্টে গেল।”
শহর জুড়ে খন্দ-পথ আর বেপরোয়া যান চলাচলের জেরে দুর্ঘটনা হচ্ছে মাঝেমধ্যেই। বর্ষা শুরু হতেই রাস্তা ভাঙতে শুরু করে। মেদিনীপুর-কেশপুর সড়কে দু: হাত অন্তর বড় বড় গর্ত। ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের অবস্থাও একই। কেরানিচটি থেকে খড়্গপুরের চৌরঙ্গি পর্যন্ত রাস্তার বেশিরভাগ অংশই খানাখন্দে ভর্তি। তার উপর রয়েছে বেপরোয়া যান চলাচল। বিশেষ করে যাত্রিবাহী বাসগুলি একে অপরকে টেক্কা দিতে রীতিমতো ‘রেস’ শুরু করে দেয়। প্রাণ হাতে যাতায়াত করেন যাত্রীরা। এ দিন দুর্ঘটনার পরে ধর্মায় বেশ কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করে কংগ্রেস। বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবি ওঠে। কংগ্রেস নেতা তীর্থঙ্কর ভকতের হুঁশিয়ারি, “১৫ দিনের মধ্যে রাস্তা সংস্কার না হলে ফের আন্দোলনে নামব।”
একই হুমকি দিয়েছেন মোহনপুরের বাসিন্দারা। সেখানেও খারাপ রাস্তার জন্য প্রায়ই গাড়ি বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তি হয় মানুষের। স্থানীয় বাসিন্দা আরণ্যক আচার্য বলেন, “আর কয়েকদিন দেখব। তারপরেও রাস্তা সংস্কার না হলে পথ অবরোধের পথেই যেতে হবে।” |