|
|
|
|
|
|
|
...সময় এল কাছে |
অরণ্য-ভাবনা থেকে গঙ্গার সৌন্দর্য
পরিবেশ দূষণ, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়াস
থেকে বিবেকানন্দ-স্মরণ। পুজোকে ঘিরে
নানা প্রয়াস। দেখে এলেন শান্তনু ঘোষ |
|
হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন। তার পরেই পুজো। কিন্তু পুজো মানে কি শুধুই চমক দেওয়া থিম? একে অন্যকে টক্কর দিয়ে পুরস্কার জিতে নেওয়ার লড়াই? দক্ষিণ হাওড়ার পুজো উদ্যোক্তারা অবশ্য তা মনে করেন না। কুসংস্কার দূর করা, সামাজিক সচেতনতা থেকে শুরু করে অন্য অনেক অজানা বিষয় মানুষের সামনে তুলে ধরাটাই মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করেন তাঁরা।
যেমন, কালো রং অশুভ, এ কথা মানতে নারাজ ‘চাঁদমারী রোড মন্দির কমিটি’র উদ্যোক্তারা। আর তাই হাঁসখালি পোল বকুলতলার এই পুজোমণ্ডপে থাকছে কুমোরটুলির তৈরি কৃষ্ণবর্ণ প্রতিমা। এমনকী, প্রতিমার মাটির সাজসজ্জাও সব কালো। থার্মোকল, প্যারিস, রং ব্যবহার করে হাম্পির লক্ষ্মী-নরসিংহ মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে ৪৫ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ।
অনেকেই হয়তো বাঁকুড়ার লৌকিক দেবী ‘জিনাসিনী’র নাম শোনেননি। কিন্তু বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এক গ্রামে গাছের তলায় বাঁধানো বেদীর উপর চৌকো পাথরে সিঁদুর লেপা মূর্তিকেই জিনাসিনী বা দুর্গা রূপে পুজো করেন স্থানীয়েরা। বলাই মিস্ত্রি লেনের ইয়ুথ ক্লাব পরিচালিত ‘কল্যাণপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’র ৫৩তম বর্ষের নিবেদন, ‘জিনাসিনীর থান’।
|
|
খোলা আকাশের নীচে সিমেন্ট, খড়, প্লাস্টার অফ প্যারিস, ছোবড়া, মাটি এবং আসল গাছ ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। চাঁদের আলোয় মণ্ডপেই শোনা যাবে ধামসা-মাদল। দেখা যাবে আদিবাসী নৃত্য, তন্ত্রসাধনার বিভিন্ন প্রতীক। প্রতিমা ফাইবার গ্লাসের।
রবীন্দ্রনাথের অরণ্য-ভাবনাকে কেন্দ্র করে ৮২তম বর্ষের মণ্ডপ বানাচ্ছে শিবপুরের ‘নবারুণ সঙ্ঘ’। তাদের ভাবনায়, ‘প্রাণের খেলাঘর’। এখানে দেখা যাবে, ন’টি গাছ একসঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে। সেই গাছগুলির মাঝেই বেদিতে অধিষ্ঠিত অস্ত্রহীন দেবী দুর্গা। মণ্ডপে ঢোকার সময়েও পেরোতে হবে তিনটি গাছ। থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাচার উপরে বসে থাকা আদিবাসীদের ধামসা-মাদলের আওয়াজও শোনা যাবে। চট, খড়, দড়ি, প্লাস্টার
অফ প্যারিসের তৈরি গাছের পাশাপাশি আসল গাছও থাকছে।
দূষণে কলুষিত গঙ্গারও যে অপরূপ সৌন্দর্য আছে, তা বোঝাতেই ‘শিবপুর ষষ্ঠীতলা বারোয়ারি’ গঙ্গাকে প্রতীক রূপে সাজাচ্ছে মণ্ডপ। ৩৫ ফুট উচ্চতার পাহাড়ের উপরে থাকা শিবের জটা থেকে গঙ্গার জলধারা নেমে সোজা ঢুকে যাবে ৮৬তম বর্ষের পুজোর মণ্ডপে। মাথার উপরে ও চারপাশে কলকল শব্দে বয়ে যাওয়া জলরাশির মধ্যে ঢুকে তবেই দেখা মিলবে
সনাতনী প্রতিমার।
২৮তম বর্ষে রামরাজাতলার ‘কল্পতরু স্পোর্টিং ক্লাব’-এর ভাবনায় এ বার পরিবেশ দূষণ। পশুপাখি, কীট-পতঙ্গের মডেল এ বার দেখা যাবে এই মণ্ডপে। শুকনো পাতা, খড়, ডালপালা দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।
|
|
চাঁদের গায়ে কালো দাগগুলি কীসের? সত্যিই কি ওখানে কোনও বুড়ি বসে চরকা কাটে? শিশু মনের এই কৌতূহল মেটাতে গল্প কথায় উত্তর দিতে হয় বড়দের। আবার অনেকেই হয়তো জানেন না, চাঁদের মাটিতে কী আছে? যে মহাকাশযান চাঁদে যায় তার ভিতরে কী যন্ত্রাংশ আছে কিংবা কী ভাবে ভূপৃষ্ঠ ছেড়ে সেগুলি উড়ে যায় কয়েক হাজার মাইল দূরে। ছোট থেকে বড় সবার কৌতূহল মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে শিবপুর ‘নিমতলা বারোয়ারি’। চাঁদ নিয়ে শিশুদের কৌতূহল থেকে ছড়া-ছবিতে চাঁদ, চরকা কাটা বুড়ি, গবেষণাগার, রকেট সবই হাজির থাকছে
এই পুজোমণ্ডপে।
ঠাকুর রামকৃষ্ণ লেনের ‘কাজীবাগান লেন উন্নয়ন সমিতি’র এ বারের ভাবনায় ‘ধ্বংসের নেপথ্যে’। প্লাইবোর্ডের তৈরি মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে থাকবে পরিবেশ ধ্বংসের ও তা রক্ষার বিভিন্ন ছবি, মডেল। অস্ত্রের বদলে দুর্গার দশ হাতে চারা। তাঁর পায়ের নীচে থাকবে প্লাস্টিক সমেত নানা আবর্জনা থেকে তৈরি অসুর। অসুর এখানে দূষণের প্রতীক। ‘লালঝুঁটি কাকাতুয়া ধরেছে যে বায়না/চাই তার লাল ফিতে, চিরুণি আর আয়না’। ৩৩তম বর্ষে সেই কাকতুয়া, চিরুণি, ফিতে আর আয়না দিয়ে তৈরি বিনোদবিহারী হালদার লেনের ‘টর্পেডো ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’র মণ্ডপে থাকছে নানা রঙের টিপের তৈরি প্রতিমা। আন্দুল ‘কামরাঙ্গু তরুণ সঙ্ঘ’র সঙ্গে এ বারে সহজেই যেতে পারেন হিমালয়ের কোলে। সেখানে ৪৫ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের উপর কেদারনাথ মন্দির ও বরফের তৈরি শিবলিঙ্গ দর্শন করার পরে গুহার ভিতরে দেখা যাবে দুর্গাপ্রতিমা। |
|
স্বামী বিবেকানন্দের জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে ‘শরৎ চ্যাটার্জি রোড সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি’ তাদের ২৫তম বর্ষের মণ্ডপ সাজাচ্ছে বিবেকানন্দের জীবনের বিভিন্ন ছবি ও তথ্য দিয়ে। শিবপুর ৫৮ নম্বর বাসস্ট্যান্ডের কাছে, বেলুড় মঠের আদলে তৈরি মণ্ডপে থাকছে বাঁশ, বেত, কুলো, মাটির খুরির কারুকার্য। একই পথে হাঁটছে ‘ব্যাতাইতলা সর্বজনীন’ পুজো কমিটিও। মণ্ডপের ভিতরে থাকছে বিবেকানন্দের কর্মজীবনের উপর প্রদর্শনী। মণ্ডপের বাইরে ফ্লেক্সের মাধ্যমে থাকবে বিবেকানন্দের জীবনের বিভিন্ন ছবি ও তথ্য।
ধাড়সা মিলনী পাঠাগার পরিচালিত ‘ধাড়সা চৌধুরীপাড়া সর্বজনীন দুর্গোৎসব’ কমিটির পুজোয় দেখা যাবে প্রায় ১৫ ফুট গভীর এক জলাশয়ের মাঝে দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবোয়ের শিল্পকলায় তৈরি একটি গ্রাম। চ্যাটার্জিহাট শেখপাড়ার ‘ছাত্র যুবক সঙ্ঘ’, ব্যাতড় ‘সুভাষ সঙ্ঘ’, রামরাজাতলার ‘ভাইভাই সঙ্ঘ’র পুজোয় বজায় থাকছে সাবেকিয়ানা।
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|