|
|
|
|
|
|
খেলা |
হার-না-মানার ফুটবল |
চন্দন রুদ্র |
মা-বাবা নেই। গত বছর বড় ভাইও মারা গিয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ফুটবলকে নিয়েই তাঁর যাবতীয় স্বপ্ন। ঠাকুমা ও কাকার আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা সদ্য ১৯ পেরনো পঞ্চাননতলার এই অমর হেলাই চলতি মরসুমে কলকাতার ময়দানে নজর কেড়েছেন। তাঁর গোলে ট্রেভয় কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হাওড়া ইউনিয়ন ক্লাব। চারটি গোল করে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছেন।
সালকিয়া ফুটবল কোচিং ক্যাম্পের হয়ে কলকাতায় নার্সারি লিগে খেলা দিয়ে অমরের ফুটবলার হয়ে ওঠার শুরু। এই ক্যাম্পেই কোচ তপন কর্মকার আর প্রদীপকুমার দে’র কাছে তাঁর ফুটবলে হাতেখড়ি। এর পরে হাওড়ারই বাণী নিকেতন ক্লাবের হয়ে পঞ্চম ডিভিশনে ফুটবল খেলার সুযোগ পান। অমরের কথায়: “ডুমুরজলা মাঠে ট্রায়ালে গিয়েই বাণী নিকেতনে খেলার সুযোগ পাই।” ওই সময় হাওড়া ফ্রেন্ডস-এর কোচ ছিলেন হীরালাল দাস। ট্রায়াল থেকে তিনিই অমরকে বেছে নেন। উইং থেকে নিয়ে আসেন স্ট্রাইকারের জায়গায়। সেই থেকে হীরালালবাবুই হয়ে ওঠেন অমরের ‘ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড’।
খুব ছোটবেলায় মাকে হারান। বাবা কৈলাসবাবু ছিলেন পুরসভার সাফাই বিভাগের কর্মী। মধ্য হাওড়ার জোলাপাড়ায় বাড়ির কাছেই সব্জির দোকানও চালাতেন তিনি। ২০০৬-এ বাবার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই দোকান চালাতে বাবাকে সাহায্য করতেন অমর। ভোরে ঘুম থেকে উঠে ট্রলি নিয়ে চলে যেতেন হাওড়া ব্রিজের কাছে। |
|
সেখান থেকে সব্জি কিনে বাড়ি ফিরে বেরিয়ে পড়তেন ফুটবল অনুশীলনে। ফিরে আবার দোকানদারি। দু’বছর বাণী নিকেতনে খেলার পরে মোহনবাগান অ্যাকাডেমিতে যাওয়ার সুযোগ করে দেন হীরালালবাবু। কালো ছিপছিপে চেহারার এই তরুণ ফুটবলারটি বললেন, “মোহনবাগান অ্যাকাডেমিতে এক বছর ছিলাম। সাবির আলি, জো পল আনচেরির কাছে অনেক কিছু শিখেছি। অনূর্ধ্ব ১৯ আই লিগ-সহ অনেক ম্যাচ খেলারও সুযোগ পেয়েছি।”
গত বছর কলকাতার রেলওয়ে এফ সি ক্লাবে নাম লেখান অমর। পাশাপাশি বি কলেজ মাঠে সহযাত্রী ক্লাবে চলতে থাকে অনুশীলন। দু’জায়গাতেই কোচ হিসেবে পান হীরালাল দাসকে। সহযাত্রী’র হয়ে বেশ কিছু টুর্নামেন্টে ভাল খেলার সুবাদেই এ বছর হাওড়া ইউনিয়নে ডাক পান অমর। হীরালালবাবু বললেন, “ছেলেটি খুব কষ্ট করে উঠে আসছে। গত বছর বড় ভাইকেও হারিয়েছে। পঞ্চাননতলায় কাকার সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকে।” কাকা বিষ্ণু হেলা বললেন, “আমরা চাই ও দেশের হয়ে খেলুক। ওর বাবাও তাই চাইতেন।” হাওড়া ইউনিয়ন ক্লাবের টেকনিক্যাল ডাইরেক্টর শঙ্কর মৈত্রের কথায়: “ছেলেটির গতি ভাল। বেশ ছটফটে। তবে উচ্চতা একটু কম। ওজনও বাড়াতে হবে। দোষত্রুটি কাটিয়ে পরিশ্রম করলে ভাল খেলোয়াড় হয়ে উঠবে।”
|
ছবি: রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|