সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে ঢুকে নেতাদের মারধর, অভিযুক্ত তৃণমূল
সিপিএমের জোনাল অফিসে ঢুকে একাধিক নেতা-কর্মীকে লাঠি, রড দিয়ে পিটিয়ে পালিয়ে গেল এক দল দুষ্কৃতী। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে খানাকুলে। স্বভাতই অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতৃত্ব এই ঘটনাকে ‘সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’ বলে দাবি করেছেন।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই আরামবাগ মহকুমা জুড়ে বাম নেতা-কর্মীদের উপরে একের পর এক আক্রমণের ঘটনা ঘটছে। খানাকুল, আরামবাগ, গোঘাট, পুড়শুড়ায় সিপিএমের বিভিন্ন পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। সিপিএমের গোঘাট জোনাল কমিটি অফিস ১৩ মে-র পর থেকে মাত্র এক দিনের জন্য খুলেছিল। পুলিশের ‘পরামর্শে’ সেটি ফের বন্ধ করে দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন পার্টি নেতৃত্ব। সিপিএমের অধিকাংশ লোকাল কমিটির অফিস এখনও বন্ধ। বহু বাম নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। প্রতিটি ঘটনাতেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
শুক্রবার কী হয়েছিল খানাকুলে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে?
স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বেলা তখন প্রায় ৩টে। পার্টি অফিসের অনতি দূরে খানাকুল ফুটবল মাঠ। সেখানে জনা ৩০-৪০ যুবক জড়ো হয় বাইক নিয়ে। তারপর মুখে রুমাল, কালো কাপড় বাঁধে বাঁধতে ওই যুবকেরা এগিয়ে যেতে থাকে সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ের দিকে। এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ না হলেও কিছু দোকানপাট আছে। ঢিল ছোড়া দূরত্বে ব্লক অফিস। এলাকার মানুষ জানিয়েছেন, খেলার মাঠ হওয়ায় এই এলাকায় বহু যুবকের নিত্য আনাগোনা। বিকেল থেকে ভিড় বাড়তে থাকে। ফলে, এ দিন ওই যুবকদের দেখে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ হয়নি কারও।
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে প্রহৃত সিপিএম নেতা-কর্মীরা। ছবি: মোহন দাস।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই দোতলা পার্টি অফিসের ভিতরে হুড়মুড়িয়ে ঢুকে পড়ে মুখ-ঢাকা ওই দুষ্কৃতীরা। শুরু হয় তাণ্ডব। নিমেষের মধ্যে তছনছ করা হয় পার্টি অফিসের আসবাব, কাগজপত্র। দোতলায় ছিলেন জনা পনেরো পার্টি কর্মী-নেতা। দুষ্কৃতী-দল সেখানে গিয়ে বেধড়ক মারধর শুরু করে। মিনিট দশেকের মধ্যে ‘অপারেশন’ শেষ করে হইহই করে বেরিয়ে যায় তারা। মাঠের ধারে রাখা বাইক নিয়ে চম্পট দেয়।
এ দিনের ঘটনায় জখম খানাকুল ১ পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ নেপাল ভুইঁঞা, ঠাকুরানিচক পঞ্চায়েতের প্রধান গণেশ মিদ্যা, উপপ্রধান স্বদেশ চৌহান, পার্টি কর্মী ফেলু পাত্র, প্রদীপ সিংহ এবং বিশ্বনাথ সিংহকে খানাকুল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এঁদের মধ্যে নেপালবাবু ও স্বদেশবাবুর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে পুলিশ। সকলকে সন্ধ্যার দিকে ভর্তি করা হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। আরামবাগের এসডিপিও আকাশ মাগাড়িয়া বলেন, “কিছু অজ্ঞাতপরিচয় লোক সিপিএমের পার্টি অফিসে হামলা চালিয়েছে। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।”
সিপিএমের দলীয় সূত্রের খবর, হামলা চালানোর সময়ে দুষ্কৃতীরা নেতা-কর্মীদের বলে, “এই অফিসে তোদের যেমন আর না দেখি। এখানে বসা চলবে না। বসলে খুন করে দেব।” স্বভাবতই তৃণমূলের দিকেই এই ঘটনায় অভিযোগ তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের খানাকুল জোনাল কমিটির সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, “আমাদের দলের কিছু নেতা-কর্মী তৃণমূলের অত্যাচারে ঘরছাড়া। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছিলেন এই অফিসে। তাঁদের উপরে হামলা হয়েছে। তৃণমূল পরিকল্পনামাফিক এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। আমাদের সকলকে এলাকা-ছাড়া করতে চায় ওরা।” “ফেলু, প্রদীপ, বিশ্বনাথদের বক্তব্য, “আমাদের কোনও কথাই বলতে দিল না ওরা। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারধর করে চলে গেল। হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও ছিল।”
অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল নেতা শৈলেন সিংহ বলেন, “যা ঘটেছে, তা সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই ফল। দীর্ঘ দিন কাজে যাচ্ছেন না ওঁদের কিছু পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ জমেছে। ওঁদের দলের লোকও খুশি নয়। কারণ এলাকায় সমস্ত উন্নয়ন স্তব্ধ। এ সব কারণে সিপিএমেরই কিছু লোক আক্রমণ চালিয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.