নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
প্রায় দু’মাস ধরে টানা সওয়াল-জবাব চলার পর, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গুর মামলার শুনানি শেষ হল। এ দিন বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকার এবং টাটা মোটরস, দু’পক্ষকেই আগামী ২০ সেপ্টেম্বর মামলা সম্পর্কে নিজেদের জবাবের বয়ান লিখিত ভাবে আদালতের কাছে জমা দিতে বলেছেন। আইনজীবী মহল মনে করছে, হাইকোর্টে পুজোর ছুটি শুরু হওয়ার আগেই সিঙ্গুর মামলা নিয়ে বিচারপতি তাঁর রায় জানিয়ে দিতে পারেন।
কেন হল সিঙ্গুর মামলা?
গত ২১ জুন রাজ্য সরকার ‘সিঙ্গুর জমি পুনর্বাসন ও উন্নয়ন আইন’ প্রণয়ন করে সিঙ্গুরের প্রায় ৯৯৭ একর জমির দখল নেয়। ওই আইনকেই অসাংবিধানিক এবং অবৈধ বলে ২২ জুন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন টাটা মোটরস কর্তৃপক্ষ। বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে প্রায় এক মাস শুনানি চলার পর তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সরে গেলে নতুন করে মামলার শুনানি শুরু হয় বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে।
আদালতের কাছে টাটা মোটরস-এর মূল অভিযোগ হচ্ছে, সিঙ্গুর আইন অসাংবিধানিক। টাটার আইনজীবী সমরাদিত্য পাল বারবার দাবি করেছেন, রাজ্য সরকার আইনের জোরে ফের সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করে টাটা মোটরস-কে রাতারাতি উচ্ছেদ করে দিয়েছে। টাটা মোটরস আদালতে দাবি করে, শুধু জনস্বার্থেই জমি অধিগ্রহণ করা যায়। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়া জনস্বার্থ বলে গণ্য হতে পারে না। সমরাদিত্যবাবুর আরও যুক্তি, জমি অধিগ্রহণ করলে প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্তের ক্ষতিপূরণ মিটিয়ে দিতে হয়। কিন্তু সিঙ্গুর আইনে ক্ষতিপূরণের কোনও ব্যবস্থাই রাজ্য রাখেনি। টাটা মোটরস-এর বক্তব্য ছিল, সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা গড়েও, অশান্ত পরিবেশের জন্যই তারা শেষ পর্যন্ত চলে যেতে বাধ্য হয়। অথচ, কারখানা গড়া হয়নি, এই অভিযোগ তুলে রাজ্য সরকার ‘অবৈধ’ ভাবে একটি আইন প্রণয়ন করে তাদের উচ্ছেদ করে দিয়েছে।
জবাবে রাজ্য আদালতকে জানিয়েছে, ২০০৬ সালে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ করে টাটা মোটরস-কে লিজে দেওয়া হয়েছিল গাড়ি কারখানা গড়ার জন্য। কারণ, সরকার মনে করেছিল, কারখানাটি হলে রাজ্যে প্রচুর কর্মসংস্থান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে। অ্যাডভোকেট জেনারেল অভিযোগ করেন, রাজ্যের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। টাটা মোটরস শেষ পর্যন্ত ২০০৮ সালে প্রকল্প গুটিয়ে গুজরাতের সানন্দে চলে যায়। কারণ হিসাবে তারা সিঙ্গুরের অশান্ত রাজনৈতিক পরিবেশকে দায়ী করলেও, রাজ্য সরকার প্রকল্পের স্বার্থে সব রকম পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। এখন রাজ্যবাসীর স্বার্থেই তাই রাজ্য সরকার ‘সিঙ্গুর আইন’ প্রণয়ন করে ওই জমির মালিকানা স্বত্ব ফিরিয়ে নিয়েছে। কারণ, রাজ্য সরকারই ওই জমির মালিক, টাটা মোটরস নয়। রাজ্যের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে দাবি করা হয়, সরকার এখন ওই জমির কিছু অংশ সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক জমিদাতাদের ফিরিয়ে দেবে। বাকি অংশে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য কারখানা গড়া হবে। টাটা মোটরস-কে যদি কোনও ক্ষতিপূরণ দিতে হয়, রাজ্য তা দিতে রাজি আছে।
এক নজরে আদালতের কাছে এই হল দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব। এ বার বিচারপতি কী রায় দেন, তারই অপেক্ষা। |