অনশনের মুখে মোদী পেলেন আডবাণীর প্রশস্তি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সরাসরি সমর্থন করলেন না ঠিকই। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর বহু প্রচারিত অনশন শুরুর ঠিক আগের দিন তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত মার্কিন রিপোর্টকে পরোক্ষে সমর্থন করলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। একই দিনে অনশন শুরুর আগে ফের একটি খোলা চিঠি লিখেছেন মোদী। সেখানে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী স্বীকার করে নিলেন, ‘কোনও রাষ্ট্র, সমাজ বা ব্যক্তি নিখুঁত হতে পারে না’। গুজরাত দাঙ্গার কলঙ্ক-মেঘ সরাতে মরিয়া মোদীর এই চিঠি ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।
শনিবারের চিঠিতে মোদী লিখেছেন, “অনশনের সময় ঈশ্বর আমাকে এতটাই শক্তি দিন, যাতে আমার বিরোধীদের প্রতিও আমার কোনও তিক্ততা না থাকে। গত দশ বছরে যাঁরা আমার সত্যিকারের ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, তাঁদেরও আশীর্বাদ চাই। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রত্যেক নাগরিকের যন্ত্রণা আমার যন্ত্রণা। সকলের প্রতি ন্যায় বিচার হোক।”
সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন কংগ্রেসের এক রিপোর্টে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রস্তাবিত প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর নাম করা হয়েছে। আজ প্রায় এক মাস পরে ব্লগ লিখতে বসে সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন আডবাণী। সেই সূত্রেই একটি মার্কিন অনলাইন পত্রিকার প্রতিবেদনের অংশবিশেষও ব্লগে উদ্ধৃত করেছেন তিনি। যেখানে বলা হয়েছে, “এখন আমেরিকার আইন প্রণেতারা দিল্লির মসনদে বিজেপির প্রত্যাবর্তনের কথা বলছেন। এবং তাঁরা বলছেন নরেন্দ্র মোদী হবেন প্রধানমন্ত্রী।” ব্লগে রিপোর্টের এই অংশটি তুলে ধরলেও মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী করা নিয়ে কিন্তু আডবাণী সরাসরি কিছু বলেননি। বরং মোদীকে ভিসা দিতে না চাওয়ায় মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে তিনি কী ভাবে লড়ে গিয়েছিলেন, ব্লগে তার ঢালাও বর্ণনা করেছেন বিজেপির এই প্রবীণ নেতা।
আডবাণীর পক্ষে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী পদে মোদীর নাম করা সম্ভব নয়, কারণ আরএসএস বা বিজেপি নেতৃত্ব এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। তা ছাড়া, রথযাত্রায় বেরনোর কথা ঘোষণা করে আডবাণী বুঝিয়ে দিয়েছেন, আশির কোঠা পার করেও এই দৌড়ে তিনি নিজেও রয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও মার্কিন রিপোর্টে মোদীর প্রশংসার কথা উল্লেখ করলেন কেন তিনি?
বিশেষ করে আডবাণী নিজে যখন প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে থাকতে চান, তখন মোদীর প্রশস্তি কেন? এতে কি তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে আঁচ পড়বে না?
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, এর মধ্যে আডবাণীর একটি সুচিন্তিত কৌশল রয়েছে। বিজেপির এক নেতার মতে, নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, নেতা বাছাই নিয়ে উত্তেজনা তত স্পষ্ট হবে। মোদী যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তা হলে শুধু বিজেপি নয়, আপত্তি উঠবে এনডিএ-র শরিকদের মধ্যে থেকেও। জেডি (ইউ) নেতারা এখন থেকেই ঘরোয়া স্তরে বলতে শুরু করেছেন, মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁরা এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন। তাঁরা নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী করতে চান। নীতীশ নিজেও এই লড়াইয়ে থাকতে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলির সঙ্গে কথা শুরু করেছেন। এই পরিস্থিতিতে সঙ্ঘ ও দল মোদীর নাম বিবেচনা না-ও করতে পারে। কারণ, একক শক্তিতে বিজেপির ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। এনডিএ-র শরিক দলগুলিকে সঙ্গে নিতেই হবে। ফলে তখন আপনা থেকেই মোদীর নাম বাদ পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে যাঁর বাদ পড়ারই সম্ভাবনা, তাঁকে প্রশংসা করে উল্টে নিজের আখের গোছাতে সচেষ্ট হয়েছেন আডবাণী। কারণ গুজরাতের এই সাংসদ মোটামুটি ঠিক করে ফেলেছেন, গুজরাত থেকেই তাঁর রথযাত্রা শুরু করবেন। যদিও এ ব্যাপারে তিনি এখনও মোদীর সঙ্গে কথাই বলেননি। বিজেপির একটি সূত্রের অবশ্য খবর, গুজরাতের বদলে বিহার থেকে রথযাত্রা শুরু করবেন আডবাণী। কিন্তু এখনও পাল্লা ভারী গুজরাতের দিকেই। এই অবস্থায় মোদীকে বিশেষ দরকার আডবাণীর। |
প্রস্তুতি তুঙ্গে। এখানেই তিন দিন ব্যাপী অনশনে বসবেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আমদাবাদের কনভেনশন সেন্টারে। ছবি: পিটিআই |
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “কে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন, সেই ভবিষ্যৎবাণী করার সময় এখনও আসেনি। এখন সবে দৌড় শুরু হয়েছে। সকলেই নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন। কিন্তু যারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে, সেই সঙ্ঘ পরিবারই এখনও কোনও চূড়ান্ত পরিণতিতে পৌঁছয়নি।” বরং রথযাত্রা ঘিরে দলের মধ্যে বা বাইরে যাতে সমস্যা না ছড়ায়, সে জন্য আডবাণীর উপরেই চাপ রাখছেন সঙ্ঘ নেতারা। এ মাসের শেষে বিজেপির কর্মসমিতির বৈঠক আছে। একটি সূত্রের বক্তব্য, সঙ্ঘের চাপে ওই বৈঠকে আডবাণী স্পষ্ট করে দেবেন যে, তাঁর রথযাত্রার সঙ্গে নির্বাচন বা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাইয়ের কোনও সম্পর্ক নেই।
আপাতত বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মোদীর অনশন সফল করতেই ব্যস্ত। শরিকদের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতাও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মোদীকে। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দুই প্রতিনিধিকেও মোদীর অনশনে পাঠাচ্ছেন। বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের পাশাপাশি একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠনের প্রতিনিধিরাও তাঁর অনশনে সামিল হবেন বলে জানা গিয়েছে।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনশনের কর্মসূচিকে রীতিমতো কটাক্ষ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী তথা কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রী অম্বিকা সোনি। শুক্রবার কলকাতায় মোদির অনশন নিয়ে অম্বিকার তির্যক মন্তব্য, “একশো ইঁদুর মেরে বিড়াল এখন তীর্থে গিয়ে ধার্মিক সাজার চেষ্টা করছে!’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “মোদির অনশন নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না। ওই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ারও কিছু নেই।” |