‘তোমাদের বাড়ির গলিটা চিনতে পারছি না কেন?’ ট্যাক্সি থেকে হঠাৎ পুপুলের ফোন। মুম্বই থেকে কলকাতায় বেড়াতে এসেছে পুপুল। বললাম, ‘কেন? বাড়ি তো পাল্টায় নি! সেই মিষ্টির দোকানের পাশের গলিতেই তো!’ পুপুল তবু মানতে নারাজ ‘পুরো গলিটাই তো হাওয়া! সেখানে তো একটা টেরাকোটার মন্দির! আমি কি তবে অন্য পাড়ায় চলে এলাম?’
বেচারাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই অবশ্য। পুজোয় কলকাতায় বেড়াতে এলে অনেকেই চেনা শহরকে চিনতে পারে না। কোথাও গলি উধাও। কোথাও আবার আস্ত একটা মাঠই হাওয়া। সেখানেই কোথাও তৈরি হচ্ছে মন্দির অথবা রাজবাড়ি। পুপুলকে এই কথা বলতেই ওর চোখভরা বিস্ময়। বললাম, ‘নিজের চোখেই দেখে এসো না!’
বলামাত্রই পুপুল সটান চলে গেল ঘুরতে। ফিরে এসে খুবই উত্তেজিত। প্রথমে নাকি সে গিয়েছিল চেনাজানা যোধপুর পার্কে। সেখানে গিয়ে দেখে, সারি সারি পাহাড়-পর্বত। যোধপুর পার্কের ‘৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশন’ এ বারের পুজোয় বানিয়ে ফেলেছে পাহাড় ও পর্বত-সঙ্কুল অসুরদের দেশ। পাহাড়ের পাথরের খাঁজে লুকিয়ে রয়েছে অসুরেরা। আর দুর্নীতি, মাফিয়ারাজ বা সামাজিক দুষ্কর্মরূপী অসুরদের কী ভাবে বধ করছেন দেবী দুর্গা, সেটাই দেখানো হয়েছে তাদের পুজো মণ্ডপে।
আর সিংহি পার্কে গিয়ে পুরো পথটাই নাকি গুলিয়ে ফেলেছিল পুপুল। সিংহি পার্কে দক্ষিণেশ্বর মন্দির? তা-ও কি সম্ভব? হ্যাঁ, পুজোয় সবই হয়। অবিকল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের আদলে মণ্ডপ তৈরি করেছে ‘সিংহি পার্ক সর্বজনীন’। একচালা প্রতিমায় রয়েছে প্রাচীন সনাতনী প্রতিমার রূপ। আর মণ্ডপ জুড়ে ত্রিমাত্রিক এলইডি আলো।
ঢাকুরিয়ার ‘সেলিমপুর ক্লাব’-এ আবার তুষারাচ্ছাদিত পার্বতীর সাধনাস্থল। হীরক জয়ন্তী বর্ষে সেলিমপুরের এ বারের থিম হিমালয়কন্যা পার্বতী। পাহাড়-পর্বতে ঘেরা হিমাচলী কায়দায় কাঠের তৈরি প্যাগোডার আদলের এই মন্দির দেখতে চাইলে আর কষ্ট করে হিমাচল প্রদেশে যাওয়ার দরকার নেই। ঢাকুরিয়াতেই পাওয়া যাবে এর সন্ধান।
সেখান থেকে পুপুল গিয়েছিল ‘পদ্মপুকুর বারোয়ারি সমিতি’র পুজোমণ্ডপে। সেখানে আবার ডোকরার কাজ করা অদ্ভুত সুন্দর এক মন্দির। মন্দিরের সামনে ঝাড়লন্ঠন। সেই আলোয় তৈরি হয়েছে অদ্ভুত মায়াবী এক পরিবেশ। তবে এই আলোর দেখা মেলে শুধু শারদোৎসবেই। দেখে মনে হয় যেন বেশ কয়েক দশক আগের কলকাতায় এসে পড়েছি। ‘কেমন দেখলে পুপুল?’ পুপুলের ছোট্ট উত্তর, ‘টাইম মেশিনে চড়ে ঘুরে এলাম একটা অজানা শহর থেকে। এটা মোটেই চেনা কলকাতা নয়।’ |