পুলিশ সেজে চাকরির টোপ দিয়ে নিজেই জালে
গায়ে কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক কনস্টেবলের পুরোদস্তুর উর্দি। মাথায় সাদা হেলমেট। তাতে কলকাতা পুলিশের প্রতীকও সাঁটা রয়েছে। নীল মোটরসাইকেলের সামনেও সেই প্রতীক চিহ্ন লাগানো।
কার সাধ্য বোঝে, নকল পুলিশ!
পুলিশ সেজে হয়তো আরও কয়েক দিন অবাধে ছড়ি ঘোরাত লোকটি। কিন্তু বাদ সাধল টাকার লোভ। এবং এমনই লোভ যে, পুলিশকর্তার সই নকল করতে শুরু করল সে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিমের সই নকল করে বেশ কিছু বেকার যুবককে হোমগার্ডের চাকরির জাল নিয়োগপত্র দিয়ে প্রচুর টাকা পুরেও ফেলল পকেটে। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার বিকেলে বৌবাজার থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেল কালীপদ বর নামে বছর আটত্রিশের ওই যুবক। তার বাড়ি সোনারপুর থানা এলাকার খিয়াদহ বাজবরণতলায়। পুলিশের অভিযোগ, বিধানগর (দক্ষিণ), যাদবপুর, বাঘা যতীন এলাকার অন্তত ২৫ জন যুবকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়েছে সে।
ঠিক যে-ভাবে পুলিশ সেজে মোটরসাইকেল ছিনতাই থেকে শুরু করে নানা ধরনের দুষ্কর্ম করত হাবরা-মসলন্দপুরের মহিষ গ্রামের রবিউল ইসলাম। তিন তারা লাগানো খাকি পোশাক পরে আমডাঙা থানার ওসি সেজে দুষ্কর্ম করত সে। ডিএসপি পরিচয় দিয়ে তেঁতুলিয়ায় পাত্রী দেখতে গিয়ে অগস্টে ধরা পড়ে সে।

কালীপদ বর। নিজস্ব চিত্র
কিন্তু কী ভাবে বেকারদের ফাঁদে ফেলত সোনারপুরের কালীপদ?
পুলিশ জানায়, কালীপদ কখনও সাদা পোশাকে, কখনও বা ট্রাফিক পুলিশের উর্দি পরে মোটরসাইকেলে চড়ে বেলেঘাটা, পার্ক সার্কাস, ই এম বাইপাস এলাকায় ঘুরে বেড়াত। সেখানকার ট্রাফিক গার্ডের কর্মীদের ফাইফরমাশও খাটত। ওই সব এলাকার যুবকদের সঙ্গে ভাব জমিয়ে তাঁদের চাকরির টোপ দিত সে। বেকার যুবকেরা মনে করতেন, সে কলকাতা পুলিশের কর্মী। মাঝেমধ্যে ট্রাফিক কনস্টেবলের পোশাক পরেই যুবকদের পাড়াতেও যেত কালীপদ।
নানা কথার জাল ফেলে তাঁদের বলত, কয়েক হাজার টাকা খরচ করলেই কলকাতা পুলিশের হোমগার্ড বিভাগে চাকরি মিলতে পারে। কারও কাছ থেকে পাঁচ, কারও কাছে ১০, আবার কারও কাছে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে বলত, চাকরি হয়ে গেলে আরও কয়েক হাজার টাকা দিতে হবে কিন্তু।
বাসিন্দারা বা বেকার যুবকেরা যাতে তাকে নকল পুলিশ বলে সন্দেহ করতে না-পারে, সেই জন্য লালবাজার বা চাঁদনি চক এলাকার দোকান থেকে কাউকে কলকাতা পুলিশের পোশাক, কাউকে জুতো, কাউকে হোমগার্ডের ব্যাজও কিনে দিত কালীপদ। ভুয়ো নিয়োগপত্র দিয়ে অনেককে বলেছে, পুজোর আগেই, ১ অক্টোবর চাকরিতে যোগ দিতে হবে। তার আগে জোগাড় করে রাখতে হবে পুলিশের পোশাক, ব্যাজ, জুতো, টুপি। শুধু বলা নয়, নিজেই সেই সব জিনিস কিনে বিলি করছিল সে। প্রায় দেড় বছর ধরে এ ভাবে প্রতারণা চালাচ্ছিল কালীপদ।
ধরা পড়ল কী ভাবে?
শুক্রবার চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য কয়েক জন যুবককে চাঁদনি চক এলাকার একটি দোকানের সামনে ডেকে পাঠিয়েছিল কালীপদ। টাকা নিয়ে নিয়োগপত্র বিলোতে শুরুও করেছিল। কিন্তু নিয়োগপত্র দেখে বাসুদেব দাস নামে বিধাননগর দক্ষিণ থানা এলাকার নবপল্লি সুকান্তনগরের এক যুবকের সন্দেহ হয়। কথা কাটাকাটি শুরু করে দেন তিনি। এক সময় রীতিমতো ঝগড়া বেধে যায়। দোকানদার পুলিশে খবর দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে কালীপদকে ধরে ফেলে। খবর পেয়ে সন্ধ্যায় প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বৌবাজার থানায় হাজির হন যাদবপুর, বাঘা যতীন এলাকার যুবকেরাও।
চাকরি দেওয়ার নামে পুলিশ সেজে এমন প্রতারণা কেন? কালীপদ বলে, “অনেকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম। কিন্তু শোধ করতে পারছিলাম না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.