গ্রাহক-স্বার্থে রবিবারেও দরজা খুলবে স্টেট ব্যাঙ্ক
মূল লক্ষ্য একটাই গ্রাহকদের ভাল থেকে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া।
আর সেই লক্ষ্য অর্জনে এ বার স্টেট ব্যাঙ্কের সব শাখা খোলা থাকবে রবিবারেও।
গত এপ্রিলে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছেন প্রতীপ চৌধুরী। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির এই বাঙালি শীর্ষকর্তা নতুন দায়িত্ব পেয়েই সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে একের পর এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। রবিবারে ব্যাঙ্ক খোলা রাখা যার অন্যতম দৃষ্টান্ত।
ওই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে ঋণ প্রক্রিয়াতেও বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। স্টেট ব্যাঙ্কের ঋণ পেতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয় প্রচলিত এই ধারণাটাই ভেঙে ফেলতে চাইছেন প্রতীপবাবু। তাই বাড়ি-গাড়ি কিনতেই হোক কিংবা ব্যবসার পুঁজির সংস্থান সব ক্ষেত্রে আরও তাড়াতাড়ি ঋণ অনুমোদনে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

চেয়ারম্যান প্রতীপ
চৌধুরী নিজস্ব চিত্র
পাশাপাশি অন্য ব্যাঙ্কের ঋণ স্টেট ব্যাঙ্কে সরিয়ে আনাটা যাতে সহজ হয়, সে ব্যবস্থাও হচ্ছে। নয়া চেয়ারম্যান স্থির করেছেন, এ ক্ষেত্রে পুরনো ব্যাঙ্ক গ্রাহকের উপরে যে জরিমানা ধার্য করে, সেটা তাঁরাই সহজ কিস্তিতে গ্রাহককে ঋণ হিসেবে দিয়ে দেবেন। এমনিতেও অন্য ব্যাঙ্কের তুলনায় সুদের হার কম হবে। ফলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষ স্টেট ব্যাঙ্কের দরজায় কড়া নাড়বেন বলে আশা করছেন প্রতীপবাবু।
কিন্তু সেটা কি সত্যিই হবে? স্টেট ব্যাঙ্কের কর্মচারীদের একাংশের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ যে তাঁরা গ্রাহকদের সঙ্গে অনেক
সময়ই ভাল ব্যবহার করেন না। পরিষেবা দেওয়ার প্রশ্নে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির থেকে বিদেশি বা অন্য বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি বরং কয়েক যোজন এগিয়ে। সে ক্ষেত্রে লোকে স্টেট ব্যাঙ্কে আসবে কেন? এই সমস্যার সমাধানেও উদ্যোগী প্রতীপবাবু। ইতিমধ্যেই নির্দেশ জারি করে তিনি বলেছেন, ব্যাঙ্কের সর্বস্তরের কর্মীকে গ্রাহকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি শাখায় অভিযোগ জানানোর বাক্স রাখতে হবে। কারও বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ উঠলে বরদাস্ত করা হবে না। দেশের বাণিজ্যনগরীর সাগরপাড়ে যে বহুতলে প্রতীপবাবুর অফিস, তার নাম ‘স্টেট ব্যাঙ্ক ভবন।’ ১৯৭০ সালে তৈরি ইমারতটির নাম কোনও ব্যক্তির নামে রাখা হয়নি। প্রতীপবাবুও নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে প্রচারবিমুখ। তবে স্টেট ব্যাঙ্কের নতুন উদ্যোগ নিয়ে প্রচারে কসুর নেই। যেমন তিনিই জানিয়ে দিলেন, স্টেট ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের জন্য মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে পাঁচ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা-বিমা চালু করার চেষ্টা হচ্ছে। নজর দেওয়া হচ্ছে আরও বেশি ‘স্যালারি অ্যাকাউন্ট’ খোলায়। এমনিতে পুলিশ-সেনা-রেলকর্মীদের স্যালারি অ্যাকাউন্ট স্টেট ব্যাঙ্কেই। এখন অন্যান্য সংস্থার কাছেও আবেদন করছেন এসবিআই-কর্তৃপক্ষ। চালু হচ্ছে মাল্টি-সিটি চেকবই।
নতুন নতুন উদ্যোগ তো স্বাগত, কিন্তু ঋণ-পদ্ধতির জটিলতার সঙ্গে নিয়মনীতির কড়া ফাঁস স্টেট ব্যাঙ্কের এই দু’টো বৈশিষ্ট্যকে সামলানো হবে কী করে? ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ আমলে গভর্নর জেনারেল উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এক বার তদানীন্তন ব্যাঙ্ক অফ বেঙ্গলে একটা চেক পাঠিয়েছিলেন বেন্টিঙ্কের অ্যাকাউন্টে জমা থাকা টাকার তুলনায় চেকের অঙ্কটা মাত্র চার আনা বেশি ছিল বলে তা বাউন্স করে। বেন্টিঙ্ক যদিও এ হেন ‘কঠোরতা’র প্রশংসাই করেছিলেন। সেই কড়া নিয়মের ঐতিহ্য এখনও স্টেট ব্যাঙ্ক বহন করে চলেছে। প্রতীপবাবুর ব্যাখ্যা, “আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। নয়তো বাজারে দুর্নাম হয়ে যাবে। নন-পারফর্মিং অ্যাসেটের পরিমাণ বাড়বে। তখন বিদেশে বন্ড কিনতে গেলেও সমস্যা হবে।”
তবে ‘কড়াকড়ি’ সত্ত্বেও চটজলদি ঋণ মঞ্জুরির লক্ষ্যে উদ্যোগ শুরু হয়েছে। যেমন, দেশ জুড়ে স্টেট ব্যাঙ্কের শাখাগুলোর সঙ্গে ভিডিও-কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে। ছোট ব্রাঞ্চের প্রধানেরা হাতে আরও বেশি ক্ষমতা পাবেন, যাতে আগের তুলনায় বেশি পরিমাণ ঋণ দিতে পারেন। প্রতীপবাবু বলেন, “ঋণের বদলে আমাদের হাতে বন্ধক তো থাকছেই। তাই ঋণগ্রহীতার ঝক্কি যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। আগে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যক্তি, যিনি আমাদের মূল্যবান গ্রাহকও, তাঁকে বড় ব্রাঞ্চ অফিসে এসে বসে থাকতে হত। এখন তা হবে না।”
অন্য ভাবনা
• সহজে, দ্রুত ঋণ প্রদান
• গ্রাহকদের দুর্ঘটনা-বিমা
• মাল্টি সিটি চেকবই
• ছোট শাখাকে ক্ষমতা
• রাজ্যে ব্যাঙ্কিং প্রশিক্ষণ
• লাভের ১% জনকল্যাণে
একই সঙ্গে চলছে বিকেন্দ্রীকরণের প্রয়াস। স্টেট ব্যাঙ্কের এক-একটা সার্কলে অনেকগুলো শাখা। দিল্লি সার্কলেই যেমন ১৪০০! এ বার সার্কলগুলোকে ভেঙে দিয়ে নতুন নতুন সার্কল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নতুন চেয়ারম্যান।
দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের এই প্রবাসী বাঙালি পশ্চিমবঙ্গের জন্যও সুখবর শোনাচ্ছেন। সেটা কী?
প্রতীপবাবু বলেন, হায়দরাবাদ-গুড়গাঁওয়ের মতো পশ্চিমবঙ্গেও একটা ব্যাঙ্কিং প্রশিক্ষণ কলেজ গড়তে স্টেট ব্যাঙ্ক আগ্রহী। উদ্দেশ্য, পূর্বাঞ্চলের কর্মীদের আরও ভাল করে প্রশিক্ষণ দেওয়া। তাঁর বক্তব্য, “পূর্বাঞ্চলের গ্রাহকদের সঞ্চয়ের পরিমাণ বেশ ভাল। কিন্তু ওখানে শিল্পতালুক সে ভাবে তৈরি হচ্ছে না। শিল্প-কারখানা হলে ব্যাঙ্কের শাখাও বেড়ে যাবে। এ বিষয়ে রাজ্যকে অনুরোধ করা হচ্ছে।”
এত সব কিছুর পরে সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও ভুলছেন না স্টেট ব্যাঙ্কের নয়া চেয়ারম্যান। তাঁর সিদ্ধান্ত, ব্যাঙ্কের মোট লাভের এক শতাংশ অর্থ জনকল্যাণে ব্যয় হবে। গত বছর তার অঙ্কটা ছিল আশি কোটি টাকা, কিন্তু সাকুল্যে কুড়ি কোটির বেশি খরচ করা যায়নি। এ বার অনুমোদিত পুরো তহবিলই সমাজকল্যাণে লাগাতে চাইছেন প্রতীপবাবু। এর অঙ্গ হিসেবে ব্যাঙ্কের বারো হাজার শাখাকে বলা হয়েছে বারো হাজার স্কুলে দশটা করে পাখা লাগাতে। সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার পাখা! এতে প্রায় কুড়ি লক্ষ ছাত্রছাত্রী উপকৃত হবে।
“মণিপুর থেকে গুজরাত, তামিলনাড়ু থেকে কাশ্মীর, সর্বত্র এই কাজ হবে।” জানাচ্ছেন প্রতীপ চৌধুরী।
স্টেট ব্যাঙ্কের এই নতুন সর্বোচ্চ কর্তার নতুন সব উদ্যোগের দিকে তীক্ষ্ন নজর রাখছে অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। কারণ প্রবল প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যবসা বাড়ানোর দায় তো তাদেরও রয়েছে। এমনই এক কর্তার মন্তব্য, “আমরা নজর রাখছি। স্টেট ব্যাঙ্কের চেষ্টায় ফল মিললে একই পথে হাঁটতে হবে আমাদেরও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.