মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে ফের
সুদ বাড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ জারি রাখল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের আকাশছোঁয়া দামে রাশ টানতে ফের এক বার সুদ বাড়ানোর পথেই হাঁটল তারা। গত দেড় বছরে এই নিয়ে মোট ১২ বার। তবে এর জেরে এখনই গ্রাহকদের উপর সুদের বোঝা বাড়বে কিনা, তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির মধ্যে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক চেয়েছিল, শুক্রবার রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি একান্তই সুদ বাড়ায়, তবে তা যেন অন্তত এ বছরের মতো শেষ দফার বৃদ্ধি হয়। কিন্তু এ দিন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্কের ইঙ্গিত, প্রয়োজনে ফের সুদ বৃদ্ধির পথ খোলা রাখছে তারা। শুধু তাই নয়। মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে শুধু সুদ বাড়ানোর বদলে বিকল্প পথের সন্ধান করা উচিত বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্পষ্ট ইঙ্গিত, এর পরেও আগুন বাজারে রাশ টানা সম্ভব না-হলে, ফের সুদ বাড়াবে তারা। ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তকে এ দিন স্বাগত জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। তবে একই সঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, ক্রমাগত সুদ বাড়লে, বসে যাবে শিল্পের রথের চাকা। শ্লথ হবে বৃদ্ধির গতিও।
হাতছানি এড়িয়ে
মুম্বইয়ের রাস্তায় একটি ব্যাঙ্কের ঋণের বিজ্ঞাপণের পাশ দিয়ে হেঁটে চলেছে এক স্কুল
ছাত্র। ঋণের হাতছানি কমাতে শুক্রবার ফের এক দফা রেপো রেট বাড়াল
ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এই নিয়ে আঠারো মাসে বারো বার। নিজস্ব চিত্র
শুক্রবার ঋণনীতি পর্যালোচনায় রেপো রেট (স্বল্পকালীন মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ঋণ পায়) আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে ৮.২৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও। রিভার্স রেপো রেট-ও (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে হারে ঋণ নেয়) ২৫ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে হয়েছে ৭.২৫ শতাংশ।
তবে এ জন্য এখনই গ্রাহকদের উপর সুদের বোঝা আর বাড়ানো উচিত হবে কিনা, তা নিয়ে দু’টি ভিন্ন মত রয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির। কয়েকটি ব্যাঙ্কের মতে, এখনই ফের সুদ বাড়ালে, আরও কমবে ঋণের চাহিদা। ফলে কমবে ব্যাঙ্কের আয়ও। ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর এস এল বনসল জানাচ্ছেন, “চট করে সুদ বাড়ানোয় সমস্যা রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই ঋণের চাহিদা অনেক কম।” আবার ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্তের মতে, “ব্যাঙ্কগুলি যেন আর সুদ না-বাড়ায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হবে কেন্দ্র।”
ঠিক একই রকম জোরালো এর উল্টো মতও। যেমন, ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্কের সিএমডি এম নরেন্দ্রের মতে, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ বাড়ানোয় তহবিল সংগ্রহের খরচ বাড়বে। তাই ওই অতিরিক্ত বোঝা গ্রাহকদের উপর চাপানো ছাড়া উপায় থাকবে না।” সে ক্ষেত্রে অবশ্য শিল্পঋণ, গৃহঋণ, গাড়িঋণ এবং ভোগ্যপণ্য ঋণ-সহ প্রায় সমস্ত ঋণের ক্ষেত্রেই ফের বাড়বে সুদের হার। তবে আমানতে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও এর ফলে উজ্জ্বল হল বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। সুদ-নির্ভর মানুষের পক্ষে যা একমাত্র রুপোলি রেখা।
নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই অবশ্য মনে করছে, এক সঙ্গে দু’দিক থেকে সমস্যার মুখে পড়বেন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনতে আগ্রহী সাধারণ মানুষ। যেহেতু, এক দিকে সুদ বৃদ্ধির ফলে ফের বাড়বে গৃহ ঋণের মাসিক কিস্তির অঙ্ক। আবার তার সঙ্গেই আরও বাড়বে ফ্ল্যাট বা বাড়ির দাম। কারণ, আবাসন প্রকল্প গড়তে নেওয়া ঋণে সুদ বাড়ায়, বাড়ির দাম বাড়াতে বাধ্য হবে নির্মাণ সংস্থাগুলি। ফলে মাথার উপর ছাদ জোগাড় করা মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তের নাগালের আরও বাইরে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। মাসিক কিস্তি বেড়ে বিক্রি আরও কমলে, জোরালো ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা করছে গাড়ি শিল্পমহলও।
সার্বিক ভাবে শিল্পমহলেরও আশঙ্কা, এই সুদ বৃদ্ধির বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে উৎপাদনের উপর। কারণ, শিল্প ঋণে সুদ বাড়লে সংস্থাগুলির খরচ বাড়বে। টান পড়বে সংস্থা চালাতে প্রয়োজনীয় নগদের তহবিলে। বৃদ্ধি পাবে শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা। বিশেষত গত জুলাইয়েই যেখানে ৩.৩ শতাংশের তলানিতে (২১ মাসে সব থেকে কম) নেমে গিয়েছে শিল্প বৃদ্ধির হার। তাই প্রত্যাশিত ভাবেই এ দিন শীর্ষ ব্যাঙ্কের সুদ বৃদ্ধির সমালোচনা করেছে তারা।
ক্রমশ ঢিমে হয়ে পড়া শিল্প বৃদ্ধির হার আর্থিক বৃদ্ধির গতিকেও শ্লথ করে দেবে বলে বার বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে অর্থমন্ত্রকও। সাধারণ ভাবে অর্থনীতির যুক্তি বলে, আমানতে সুদ বাড়লে, অপেক্ষাকৃত বেশি টাকা গচ্ছিত রাখেন সাধারণ মানুষ। এই সঞ্চয়ের দরুন খরচের জন্য হাতে রাখা টাকার পরিমাণ কমে। ফলে টাকার জোগান কমে বাজারে। রাশ টানা যায় মূল্যবৃদ্ধিতে।
কিন্তু এই যুক্তিতে খুব একটা সন্তুষ্ট নন প্রণববাবু। কারণ, অনেক অর্থনীতিবিদের মতোই অর্থ মন্ত্রকও মনে করে মূল্যবৃদ্ধির কারণ শুধু অতিরিক্ত চাহিদা হলে, এই দাওয়াই খাটতো। কিন্তু এখন মূল সমস্যা জোগানে ঘাটতি। তাই সেখানে ধাপে ধাপে সুদ বৃদ্ধি সমাধান হিসেবে আদৌ কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই শুধু সুদ বাড়ানোর পরিবর্তে বরং জোর দেওয়া উচিত জোগান বৃদ্ধির পথ খোঁজার উপর।
এমনিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে স্বাধীন সংস্থা হওয়ায় প্রত্যক্ষ ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতিকে প্রভাবিত করতে পারে না অর্থ মন্ত্রক। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে সুদ বৃদ্ধিই একমাত্র পথ কিনা, সম্প্রতি তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলেছে তারা। এ দিন অবশ্য প্রণববাবু বলেন, “আশা করি এই পদক্ষেপ মূল্যবৃদ্ধির হার দ্রুত কমাতে সাহায্য করবে। তার পর জোর দেওয়া যাবে আর্থিক বৃদ্ধির উপর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.