উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) ১৫০০ জন কর্মীর নিয়োগ সংক্রান্ত ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সিউড়ি ডিপোরও কয়েক জন কর্মী রয়েছেন। শুক্রবার শান্তিনিকেতনে কলকাতা-শান্তিনিকেতন ‘সংস্কৃতি যাত্রা’ বাসের উদ্বোধন করতে এসে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা জানান এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি জানান, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বাম জমানায় প্রায় ১৫০০ কর্মীর বোঝা এনবিএসটিসি’র ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বেশিরভাগেরই নিয়োগপত্র নেই। কী কাজ করেন জানি না। অথচ, মাসের শেষে ঠিক বেতন তুলে নিয়ে যান। ওদের আর্থিক দায়িত্ব পরিবহণ দফতর নেয়নি। এনবিএসটিসি’কে বহন করতে হয়।” তিনি বলেন, “ওই কর্মীদের নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। তারপরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এনবিএসটিসি’র সিউড়ি ডিপোর দুরাবস্থা দেখে তিনি স্তম্ভিত হয়ে যান। তিনি জানান, এই ডিপোর ৩৬ জন কর্মীর নিয়োগের কাগজপত্র নেই।
শান্তিনিকতন-কলকাতা সংস্কৃতি যাত্রা বাসের সূচনা নিয়ে উৎসাহ ছিল আম জনতার। উদ্বোধন করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য উদয়নারায়ণ সিংহ। আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পৌষমেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান হয়। প্রতিদিন দুপুর ৩টায় কলকাতার উদ্দেশে বাস রওনা দেবে। কলকাতা থেকে ফেরার বাস পাওয়া যাবে সকাল সাড়ে ৬টায়। উদয়নারায়ণবাবুর প্রস্তাব,“শান্তিনিকেতন থেকে শিলিগুড়ি বাস চালু অনুরোধ জানাচ্ছি।” পাশাপাশি চন্দ্রনাথবাবু বোলপুর-বহরমপুর দুটি বাস চালু করার দাবি জানান। |
পরে রবীন্দ্রনাথবাবু সিউড়ি বাস ডিপো পরিদর্শনে যান। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এনবিএসটিসি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডন বস্কো লেপচা ও অন্যান্য আধিকারিকরা। সবকিছু খুঁটিয়ে দেখে রবীন্দ্রনাথবাবুর প্রতিক্রিয়া, “এই ডিপোর অবস্থা দেখে আমি স্তম্ভিত। ভালো পরিকাঠামো থাকা সত্বেও প্রতিদিন যেখানে ৩০টি বাস চলাচাল করা উচিত, সেখানে এই ডিপোয় মাত্র ৭-৮টি বাস চলাচল করে। ফলে লোকসানের বোঝা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বেশ কয়েকটি বাস পড়ে রয়েছে, সেগুলি অল্প সংস্কার করলেই চলাচলের যোগ্য করে তোলা যায়।” এই ডিপোর কর্মীদের মধ্যে ৩৬ জনের নিয়োগপত্র নেই বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, “নিয়োগপত্র ছাড়াই সিউড়ি ডিপোয় ৩৬ জন কাজ করছেন। কী ভাবে তা সম্ভব হল তা নিয়ে আমার মনেই প্রশ্ন রয়েছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব।” তাঁর আশ্বাস, “যত শীঘ্র সম্ভব এই ডিপো থেকে আরও বেশি বাস চালানো হবে।” তিনি জানান, বীরভূমের সাংসদ শতাব্দী রায়ের অনুরোধে স্থানীয় চারটি রুটে বাস চালালনোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সিউড়ি-দুবরাজপুর ভায়া বক্রেশ্বর (উষ্ণ প্রস্রবন), ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে বোলপুর-শিলিগুড়ি রুটে বাস চালানো হবে। শান্তিনিকেতনে তিনি বলেন, “অনেক ডিপোয় প্রয়োজন ও কর্মীর সংখ্যার মধ্যে বৈষম্য রয়েছে। তাই, প্রায় ৭০০ জন কর্মীকে বদলি করা হবে।” তাঁর খেদ, ১৯৭৭ সালে এনবিএসটিসি’র ৯৫৮টি বাস ছিল। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০৫টি। তার মধ্যে ৫০০টি বাস যাত্রী পরিবহণ করে। বাকি বাসগুলি পড়ে রয়েছে। রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেওয়ার পরেও প্রতি মাসে প্রায় আড়াই কোটি টাকা করে ঘাটতি হচ্ছে। সংস্থার আয় বাড়াতে তাঁরা কয়েকটি নতুন রুটে বাস চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন। বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, বিহার এবং অসমে বাস চালানো হবে। এ ব্যাপারে পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা চলছে বলে তিনি জানান। |