একজন রাতে রিকশা চালান। অন্য জন রাতে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন। রাতে রিকশা চালিয়ে নারকেল, খেজুর পাতা দিয়ে দূর্গা প্রতিমা গড়ছেন সাহাপুরের রঞ্জিত দাস। মাধবনগরের সুশান্ত সরকার সারা রাত অফিস পাহারা দিয়ে দুপুরে মহামায়ার রুপ দিচ্ছেন ধানের তুষের গুঁড়ো, বিভিন্ন গাছের ছাল দিয়ে। পেটের টানে দুর্গা প্রতিমা গড়ার কাজে মগ্ন রঞ্জিত দাস। সুশান্ত দাস প্রতিমা গড়ছেন নেশার টানে। শহরের দুই প্রান্তের এই দুই শিল্পীর প্রতিমা এবার সকলের নজর কাড়বে। সাহাপুরের বিমল দাস ২ নম্বর কলোনির হতদরিদ্র ঘরের ছেলে রঞ্জিত। বাবা পেশায় রিকশাচালক। বাবার পাশাপাশি রাতের অন্ধকারে রিকশা চালিয়েও সংসারে দিন আনি দিন খাই অবস্থা। রিকশা চালিয়ে কোনও রকমে সংসারের অভাব ঘোচাতে রঞ্জিত হাতে তুলে নেয় মাটি, রঙ, তুলি। গত দুই বছর ধরে দেবী দুর্গা প্রতিমা গড়ছেন তিনি। তবে শুধু মাটি দিয়ে নয়। কখনও পাট দিয়ে, কখনও কাঠের টুকরো দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। এ বার নতুনত্বের টানে খেজুর গাছের পাতা, বীজ, নারকেল গাছের পাতা দিয়ে দুর্গা প্রতিমা গড়ছেন তিনি। কেন প্রতিমা তৈরির উপকরণ নারকেল ও খেজুর গাছকে বেছে নিয়েছেন তা জানতে চাওয়া হলে ওই শিল্পী বলেন, “আমাদের বাড়িতে কয়েকটি নারকেল ও খেজুর গাছ আছে। প্রতি বছরই নারকেল গাছ থেকে নারকেল ও ডাল পড়ে ঘরে টালি ভেঙ্গে যাচ্ছে। টালি সারাতে প্রচুর খরচ হচ্ছে। |
রাগে ভেবেছিলাম নারকেল গাছ কেটে ফেলব।” টালি সারানোর খরচ তুলতে নারকেল, খেজুর গাছের পাতা দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করে দেন রঞ্জিত দাস। তাঁর তৈরি দেবী দুর্গা এ বার দেখা যাবে মালদহ শহরের ঘোড়াপীড়ের এটি পুজো মন্ডপে। নারকেল গাছের পাতা, খেজুর গাছের পাতা ও বীজ দিয়ে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ। রিকশা ছেড়ে প্রতিমা তৈরিকেই পেশা হিসাবে আঁকড়ে ধরে বড় হতে চায় সাহাপুরে রঞ্জিত। এ বছরই প্রথম দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন এক সরকারি দফতরের নৈশ প্রহরী সুশাম্ত সরকার। তাও আবার মাটি দিয়ে নয়। মাটি বদলে ধানের তুষের গুঁড়ো, কলা গাছ, শিমূল গাছের বাকল আর আঠা দিয়ে তৈরি করছে দশভূজা। মাধবনগরের রাজ্য সরকারের এগ্রিমেক দফতরের নৈশ প্রহরী সুশান্তবাবু বলেন, “আগে কোনও দিন দুর্গা প্রতিমা তৈরি করিনি। কয়েক বছর ধরে কয়েকজন শিল্পীর কাছে ঘুরে প্রতিমা তৈরির কাজ শিখেছি। এ বার একাই দুর্গা প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছি।” প্রথমে খড় দিয়ে কাঠামো তৈরি করছেন। এর পর মাটির বদলে ধানের তুষের গুঁড়োর সঙ্গে আঠা মিশিয়ে তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে কাঠামো। কয়েক বছর ধরে গাছের ছাল, ফলের শুকনো অংশ সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। রঙিন হ্যান্ডমেড পেপারের ওপর সেই গাছের ছাল আটকে তৈরি করা হয়েছে নানা নকশা। সেই নক্সা থেকে তৈরি করা হয়েছে দেবী দুর্গার বস্ত্র থেকে শুরু করে অস্ত্র। হাতে আর কটা দিন। তাই রাত জেগে দেবী প্রতিমার কাজ শেষ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন শহরের দুই শিল্পী। |