হাজারো ব্যস্ততা। বিধানসভা, মহাকরণ, তৃণমূল অফিস, শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে বৈঠক, সব মিলিয়ে দম ফেলার ফুরসত মেলা মুশকিল। তাতে কী! ‘মায়ের ইচ্ছে’ বলে কথা! তা পূরণ করতে অন্য সমস্ত পরিচয় সযত্নে দূরে সরিয়ে ‘পিএইচডি’ করার লক্ষ্যে আর পাঁচ জন ছাত্রের মতো উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসতে চলেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। যিনি রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, তথ্য-প্রযুক্তি ও পরিষদীয় মন্ত্রী। যিনি বিধানসভায় তৃণমূলের ‘লিডার’ তথা দলের মহাসচিব।
পার্থবাবুর একটাই লক্ষ্য, “মায়ের বড় ইচ্ছে, পিএইচডি করি। সে সাধ পূরণ করতে আমি বদ্ধপরিকর।” মন্ত্রী বলেন, “নানা ব্যস্ততা সত্ত্বেও পিএইচডি করার চেষ্টা অনেক দিন ধরে করছি। বছর দু’য়েক আগে কাজটা শুরুও করেছিলাম। কিন্তু নিয়মের জটিলতায় তা থমকে যায়। এ বার পিএইচডি করতে ফের পরীক্ষায় বসছি। আর পাঁচ জন ছাত্রছাত্রী যে ভাবে পরীক্ষা দেন, সে ভাবেই পরীক্ষা দেব। সকলকেই অনুরোধ করেছি, পরীক্ষার পরে গবেষণা করার জন্য মনোনীত হলে আমাকে যেন শুধু ছাত্র হিসেবে দেখা হয়। আমাকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা যেন না হয়।”
ছাত্র হিসেবে বিনীত হলেও প্রশাসক তথা মন্ত্রী হিসেবে তিনি বেশ কড়া। না হলে পরীক্ষা দিতে যে দিন পৌঁছবেন, সে দিন এনজেপি স্টেশনে যেন কোনও লালবাতি লাগানো সরকারি গাড়ি রাখা না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসনকে। এমনকী, তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য স্টেশনে কোনও সরকারি অফিসার যাতে না যান, সেই ব্যাপারেও কড়া নির্দেশ দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। শুধু তা-ই নয়, স্টেশন থেকে কোনও সরকারি অতিথিশালাতেও তিনি যাবেন না বলে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দিয়েছেন। ‘গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর পক্ষ থেকে তাঁকে পাহাড়ে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হলেও তা এ বার সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছেন পার্থবাবু। একাধিক ব্যবসায়ী সংগঠন, দলীয় নেতাদের নানা অনুষ্ঠানের প্রস্তাব ফিরিয়েছেন। পার্থবাবু জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি স্টেশন থেকে চেনাশোনা কারও বাড়িতে গিয়ে স্নান সেরেই সোজা চলে যাবেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বেলা ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত লিখিত পরীক্ষা। তার পরেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারের কোনও হোটেলে সামান্য কিছু খেয়ে বিকেলের বিমানে কলকাতায় ফিরে যাবেন তিনি।
সব ঠিকঠাক থাকলে আজ, বুধবার পার্থবাবু দার্জিলিং মেলে উঠবেন। কাল, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১,১০০ জন হবু গবেষকের সঙ্গে ‘পিএইচডি’-র ‘এন্ট্রান্স টেস্ট’-এ বসবেন। আইনের স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করলেও পার্থবাবু উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীনে ‘পিএইচডি’ করতে চাইছেন। প্রাথমিক ভাবে তিনি যে বিষয় বেছেছেন তা হল, ‘শিল্প-কারখানার যুগ থেকে তথ্য-প্রযুক্তির দুনিয়ায় রূপান্তরের ক্ষেত্রে মানব সম্পদের ভূমিকা’।
কলকাতাতেই তো ‘পিএইচডি’ করতে পারতেন, তা হলে উত্তরবঙ্গে কেন? পার্থবাবু জানাচ্ছেন, প্রথমে চাকরি ও পরে রাজনীতির কারণে গবেষণা করার কথা তিনি প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন। কিন্তু, তাঁর মা শিবানী দেবী তাঁকে ঘুরেফিরেই ‘পিএইচডি’ করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে থাকেন। সে জন্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন পার্থবাবু তাঁর মা-কে কথা দেন, তিনি ‘পিএইচডি’ করার চেষ্টা করবেন। এ দিকে, বিরোধী দলনেতা থাকার সময়ে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-সদস্য ছিলেন। সে জন্য সেখানে তিনি গবেষণার জন্য আবেদন করেননি।
সেই তুলনায় নানা কাজের সুবাদে বারেবারে উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করার সময়ে সেখানে গবেষণার জন্য আবেদন করেন মন্ত্রী। সেই সময়ে তাঁর নাম নথিভুক্ত হওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু, ইউজিসি-র নির্দেশ মেনে পিএইচডি করার জন্য নতুন নিয়ম চালু হয়। ফলে, দ্বিতীয় দফায় পার্থবাবুকে আবেদন করতে হয়েছে। বিধি অনুযায়ী, আবেদনকারীকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হবে। তার পরে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে রয়েছে ছ’মাসের জন্য ‘কোর্স ওয়ার্ক’। সেই সময়ে মাঝেমধ্যেই পার্থবাবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হবে। |