হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসক নিগ্রহ। ‘তৃণমল নেতা’ গ্রেফতার। এ সব ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক দিকে যখন সিউড়ি সদর হাপসাতালের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে এবং শহরে মিছিল-বিক্ষোভ চলছে, ঠিক তখন ফের ওই হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে পরিষেবায় গাফিলতি ও অন্তঃসত্ত্বা বধূকে চড় মারার অভিযোগ উঠেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকরতলা থানার পেঁচালিয়া গ্রামের বধূ দুর্বা গড়াই রবিবার সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর স্বামী বিদ্যুৎ গড়াই বলেন, “ওই দিন দুপুর ১২টা নাগাদ স্ত্রীকে জরুরি বিভাগে দেখিয়ে ভর্তি করি। সারা দিন কেটে গেলেও কোনও চিকিৎসক তাকে দেখেননি। রাতে সব্যসাচী ভৌমিক নামে এক চিকিৎসক ওয়ার্ডে আসেন।” তাঁর অভিযোগ, “সোমবার স্ত্রী প্রসব যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করছিল। সেই সময় অন্য রোগী, আত্মীয় ও নার্সদের সামনে ওই চিকিৎসক স্ত্রীকে চড় মারেন। সুপারের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। মঙ্গলবার ওই চিকিৎসক আমার স্ত্রীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়েও দেন। বাধ্য হয়ে নার্সিং হোমে ভর্তি করাই। থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছি।” তিনি জানান, নার্সিং হোমে তাঁর একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
হাসপাতাল সুপার মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “চড় মারার অভিযোগ সোমবারই পেয়েছি। তদন্ত করে দেখা হবে। তবে এ দিন ওই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি জানা নেই। যদি ওই রকম ঘটনা ঘটে থাকে বিদ্যুৎবাবুরা সে ব্যাপারে জানালে ভর্তি নিয়ে নিতাম।” যে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সব্যসাচী ভৌমিক অবশ্য বলেন, “রোগীদের সঙ্গে আমি এ রকম আচরণ করি না। মিথ্যা অভিযোগ।” |
অন্য দিকে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সদর হাসপাতালে ভাঙচুর ও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সোমবার দুপুরে ‘তৃণমূল নেতা’ তথা সিউড়ি পুরসভার কর্মী আশিস দে-কে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। এ দিকে, মঙ্গলবার আশিস দে’কে সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক এক দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
আশিতবাবুকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে এই অভিযোগ তুলে এবং ওই হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ দেবাশিস দেবাংশীর শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার সিউড়ি শহরে মিছিল করেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও দেখান। এই কর্মসূচিতে সিউড়ির পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধান-সহ ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলরও যোগ দেন।
সিউড়ির পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রসূতির মৃত্যুর জেরে হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনায় সময় আশিস দে উপস্থিত ছিলেন কি না , তা হাসপাতালের সুপারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ভাঙচুর ও চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনার সময় ওই নেতা উপস্থিত ছিলেন না। চিকিৎসক দেবাশিসবাবু তাঁর বিরুদ্ধে সুপারের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। থানায় অভিযোগ জানানোর সময়ে সুপার ওই চিকিৎসকের অভিযোগপত্রও জমা দেন। তার পরে পুলিশ আশিসবাবুর খোঁজ করলে ওই চিকিৎসক তাঁর বিরুদ্ধে নিগ্রহের অভিযোগ করেন।”
সুপার মানবেন্দ্রবাবু বলেন, “আমি কারও নামে অভিযোগ করিনি। দেবাশিসবাবু অভিযোগপত্র থানায় জমা করেছি। কিন্তু তাতে কী লেখা ছিল জানি না।”
পুরপ্রধানের আরও অভিযোগ, “হাসপাতালে চিকিৎসকদের কর্তব্যে গাফিলতি-সহ যে সব ভুল-ত্রুটি হত, সে ব্যাপারে আশিসবাবু প্রতিবাদ জানাতেন। দিন দু’য়েক আগে হাসপাতালে সাইকেল স্ট্যান্ড করা নিয়ে ওই চিকিৎসকের সঙ্গে আশিসবাবুর বিবাদ বেধেছিল।” এ দিন আদালত চত্বরে আশিসবাবু দাবি করেন, “দেবাশিস দেবাংশী দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসার নামে যা করছেন, তার প্রতিবাদ করাতেই চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” দেবাশিসবাবু বলেন, “কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। আমি নিয়মনীতি মেনেই কাজ করছি।” |