নেই আলো, মেলে না পানীয় জল
সমস্যা জর্জরিত মুড়িগঙ্গা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র
নাম মুড়িগঙ্গা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিত্য চিকিৎসার জন্য আসেন প্রচুর রোগী। অথচ রোগী বা তার বাড়ির লোকজনের জন্য নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা। নেই আলোর ব্যবস্থা। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকের এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের থাকার জন্য নেই কোনও আবাসন। তবু এ সব নিয়েই চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আর উপযুক্ত পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে রোগীদের।
ছবি: দিলীপ নস্কর।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর ব্লকের মুড়িগঙ্গা-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের মুড়িগঙ্গা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি চালু হয়েছিল একটি টালির ছাউনির ঘরে। এতদিন ধরে ওই ঘরেই চলছিল স্থানীয় মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজ। বছর খানেক আগে স্থানীয় এক বাসিন্দা সাড়ে ৬ বিঘা জমি দান করেন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির জন্য। সেই জমিতেই তৈরি হয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে একতলা ভবন। বর্তমানে সেই ভবনেই চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক আছেন একজন। এবং তাঁর সপ্তাহে তিনদিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার কথা থাকলেও তাঁকে নিয়মিত দেখা যায় না বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। রোগীদের ওষুধপত্র দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনও ফার্মাটিস্ট নেই। নেই সাফাইকর্মী। ফলে রোগী দেখা থেকে ওষুধ দেওয়ার দায়িত্ব বেশিরভাগ সময়েই সামাল দিতে হয় নার্স ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের। সাফাইকর্মী না থাকার কারণে আবর্জনা জমে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বর দুর্গন্ধে ভরে গিয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন উদ্বোধনের সময় নলকূপ বসানো হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। ফলে ১০-১৫ মিনিট হেঁটে বা সাইকেলে করে কিছুটা দূর থেকে পানীয় জল সংগ্রেহ করে আনতে হয় স্বাস্থ্যকর্মীদের।
সাগরে ব্লকে এখনও বিদ্যুৎ না পৌঁছলেও অধিকাংশ সরকারি দফতরে সোলার আলোয় কাজকর্ম চললেও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মতো জরুরি ক্ষেত্রে কোনওরকম আলোর ব্যবস্থা করা হয়নি। স্বাস্ত্যকেন্দ্রেক চিকিৎসক, নার্স-সহ অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার কোনও ব্যবস্থা না থাকায় ট্রেনে বাসে করেই তাঁদের এখানে যাতায়াত করতে হয়। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নিরাপত্তা বলেও কিছু নেই। কোনও প্রাচীর দিয়ে ঘেরা না থাকায় সন্ধ্যার পরে স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে অচেনা লোকজনদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। গোটা গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের বাস। সকলকেই নির্ভর করতে হয় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপরে। কিন্তু স্বাস্ত্যকেন্দ্রের এমন বেহাল পরিষেবা নিয়ে স্থানীয় মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছেন।
একে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবার সমস্যা, তার উপর এলাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা শোচনীয়। খানাখন্দে ভরা রাস্তায় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগী নিয়ে আসার ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়তে হয় বাসিন্দাদের। আবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কোনওরকমে নিয়ে আসা হলে একটু বিপজ্জনক রোগী দেখলেই ডায়মন্ড হারবার বা কাকদ্বীপ মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়। তখন সেই রোগীকে নিয়ে বেহাল রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া আর এক সমস্যা। তা ছাড়া ওই দুই হাসপাতালে যেতে হলে মুড়িগঙ্গা নদী পার হতে হয়। ভাটার সময় চর পড়ে যাওয়ায় ফের পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। তখন রোগী নিয়ে বসে থাকতে হয় জোয়ার আসার অপেক্ষায়। মুমুর্ষূ রোগীকে বাঁচানোও কখনও কখনও দুরূহ হয়ে ওঠে। মুড়িগঙ্গা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্মীরা জানান, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব থাকায় রোগীদের ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। মুড়িগঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান গৌরহরি নাইয়া বলেন, “স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোর সমস্যাগুলির ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরে জানানো হয়েছে। ওঁরা নলকূপটি সারিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমাদের জানিয়েছেন। অন্য সমসাগুলিও সমাধানে চেষ্টা চলছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শিখা অধিকারী বলেন, “অধিকাংশ চিকিৎসক সাগর, পাথরপ্রতিমা প্রভৃতি দ্বীপ এলাকায় যেতে অনিচ্ছুক। যদিও বা তাঁদের পাঠানো হয় তাও কয়েকদিন থেকে ফের ফিরে আসেন। চিকিৎসকদের এই সমস্যা মেটাতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর সমস্ত নতুন চিকিৎসকদের একটি সভা ডাকা হয়েছে। আর অন্যান্য সমস্যার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.