হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও শয্যা থেকে উঠে বালতি হাতে জল ভরতে ছুটছেন!
স্টেথো গলায় ঝুলিয়ে জলের বালতি টানছেন চিকিৎসকেরাও। হাত মিলিয়েছেন হাসপাতালের নার্সরা ও রোগীর আত্মীয়েরাও।
কারণ, হাসপাতালে জল নেই!
জেলা হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করার ব্যাপারে জোর দেওয়ার কথা বারবার বলছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু তাতেও যে ফাঁক থেকে যাচ্ছে, মঙ্গলবার ফের তার প্রমাণ পাওয়া গেল ব্যারাকপুর বি এন বসু মহকুমা হাসপাতালে। এ দিন ভোর সাড়ে ৬টায় হাসপাতালে জল চলে যায়। দু’টি পাম্পের একটিও কাজ করেনি সারা দিন। জলের অভাবে হাসপাতালের কাজকর্ম শিকেয় ওঠে। চরম দুর্ভোগে পড়েন রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, এ দিন সকালে হাসপাতালের চারতলার ট্যাঙ্কে জল তোলার জন্য পাম্প চালাতে গিয়ে দেখা যায়, তা চলছে না। জলাধারে থাকা অবশিষ্ট জলও শেষ হয়ে যায় কিছু ক্ষণের মধ্যেই। ওই হাসপাতালে জল তোলার জন্য দু’টি পাম্প আছে। একটি খারাপ হয়ে গেলে অন্যটি চলার কথা। কিন্তু দ্বিতীয় পাম্পটি চালাতে গিয়ে দেখা যায়, সেটিও অকেজো। হাসপাতালের সুপার মৃদুল ঘোষ বলেন, ‘‘সকাল ৮টায় আমি নিজে খবর দেওয়ার পরেও পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের তরফ থেকে সারা দিনে পাম্প মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ দিনের পর দিন পাম্প দু’টো ঠিক আছে কি না জানতে চাওয়ায় ওঁরা জানান, দু’টি পাম্পই চালু আছে। কিন্তু অন্তত দ্বিতীয় পাম্পটি চালু থাকলে এই দুর্ভোগ হত না।’’
ওই হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা পূর্ত দফতরের বিদ্যুৎ বিভাগের কল্যাণী শাখার এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার পার্থ হালদার বলেন, ‘‘আমি বেলা ২টো নাগাদ বিষয়টি জানতে পারি। তত ক্ষণে আমাদের সব কর্মীই কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা করে সন্ধ্যায় পাম্প মেরামতের জন্য লোক পাঠানো হয়েছে। বিকল্প পাম্পটি যে খারাপ, তা-ও আমাকে জানানো হয়নি।’’
ব্যারাকপুর পুরসভা থেকে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক এনে সাময়িক ভাবে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়। কিন্তু বিকেলের মধ্যে ফুরিয়ে যায় সেই জলও। সন্ধ্যায় ফের বিকল্প জলের ব্যবস্থা করলেও তত ক্ষণে জলের অভাবে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে হাসপাতালে। শৌচাগারগুলি প্রায় নরকে পরিণত হয়েছে। সাফাইকর্মীরা জানান, জল না-থাকায় কিছুই পরিষ্কার করা যায়নি। বাধ্য হয়ে একটু সুস্থ হওয়া রোগীরাই নিজেদের তাগিদে বালতি ভর্তি জল টেনে উপরে তুলেছেন। কেউ কেউ বোতলে ভরে জল উপরে নিয়ে গিয়েছেন। হাসপাতালে এই জলসঙ্কটের কথা তিনি জানতেন না বলে জানান ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক তথা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি অজয় পাল। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কার দোষে গোটা হাসপাতালকে সারা দিন জলশূন্য অবস্থায় কাটাতে হল, খোঁজখবর নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দু’টো পাম্প থাকার পরেও এই অবস্থা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’’ |