সামনে গিয়ে দাঁড়ালে মনে হতেই পারে পুজোর সন্ধ্যায় ভুল করে বুঝি ঢুকে পড়েছেন কোনও রথের মেলায়। গ্রামগঞ্জে যেমন রথের মেলা হয়, ম্যাটমেটে আলো। দূরে থেকে ভেসে আসছে পাঁপড় ভাজা, আর জিলিপি কেনার আহ্বান। দু’পাশে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে হরেক কিসিমের রথ। মোট ১২টি। কোনওটা চারকোনা তো কোনওটার চেহারা অর্ধগোলাকার। রঙিন কাগজ আর জমকালো রঙের কাপড়ে দিয়ে মোড়া। একপাশে ভেঁপু নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বিক্রেতা। পাশেই দেখা যাবে উড়ছে বেলুন। মূল মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দেখে অবশ্য ভ্রম দূর হবে। স্পষ্ট হবে এ বার শিলিগুড়ির হায়দরপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোর থিমই আসলে রথের মেলা। এমন পরিবেশে অবশ্যই শারদোৎসব মনে একটা অন্য মাত্রা এনে দেবেই বলে দাবি করেছেন ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক নিমাই পাল। তাঁর কথায়, “অতীত আর বর্তমানকে এ বার আমরা মেলাতে চাইছি। এক সময়ে বাঙালির বড় উৎসব ছিল রথের মেলা। এখন শারদোৎসবের কাছে সবই ম্লান। তাই রথের মেলার আদলে পুজো মণ্ডপ সাজানোর পরিকল্পনা হয়েছে।” অভিনব এই পরিকল্পনা কলকাতার এক শিল্পী অনুপ মিত্রের। তিনি বলেন, “ বৈদিক যুগ থেকেই এ দেশে রথের প্রচলন ছিল। কালে কালে তার পরিবর্তন হয়েছে। বদলেছে রথের মেলাও। সেটাকেই তুলে ধরা হচ্ছে।”
মাত্র কয়েক কাঠা জমির উপরেই অভিনব পুজোর আয়োজন করে প্রতি বছরই শিলিগুড়ির এই ক্লাবটি শহরের দর্শনার্থীদের নজর কেড়ে নেয়। এ বারও সেই নজর কাড়ার দৌড়েই ওই ক্লাবের পুজো উদ্যোক্তারা মণ্ডল সাজিয়েছেন রথের মেলার আদলে। নজর কেড়ে নেবে বিগ্রহও। কেননা, পরিচিত দুর্গা মূর্তির বদলে এখানে বিগ্রহের চেহারা হবে অনেকটা পিতলের মূর্তির আদলে। টানা চোখ। অলঙ্কারেও সেই প্রাচীন রীতি। প্রতিমা যেন রথে চড়েই এসেছেন। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, মণ্ডলের মূল গেটেও থাকবে ছোট, বড় নানা আকারের রঙ আর পুতুল। তোরণের চুড়ায় বসানো থাকবে বড় বড় মাটির ঘড়া। ভিতরে প্রশস্ত আঙিনায় সাজানো থাকবে রথ। মাঝে নানা কাপড় দিয়ে জড়ানো গম্বুজ। তার উপরে ঘুরবে চরকি। সেটা পেরিয়ে মূল মণ্ডপে ঢুকে নজরে পড়বে অভিনব প্রতিমা। এ বার হায়দরপাড়ার ওই পুজোর বাজেট প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। এমন একটি থিমকে সাজাতে গত জুলাই মাস থেকেই কাজ শুরু হয়েছে। আলোরও ব্যবহার করা হচ্ছে সচেতন ভাবে। নিমাইবাবু বলেন, “মণ্ডপ অথবা রাস্তা কোথাও জোরালো আলোর ব্যবহার হবে না। মণ্ডলের ভিতরে থাকবে নিভু আলো যাতে রথের মেলার পরিবেশ গড়ে তোলা যায়। একই ভাবে বাইরে রঙিন কাপড়ে জড়িয়ে আলোক স্তম্ভ বসানো হবে। মণ্ডপের লাগোয়া প্রতিটি বাড়ির সামনেটা সাজা হবে রঙিন আলো দিয়ে। নিমাইবাবু জানিয়েছেন, দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধের জন্য এ বারও প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে। একমুখি যান চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে যাতে কোনও ভাবেই মণ্ডলের সামনে দর্শনার্থীদের সমস্যায় পড়তে না-হয়। |