এক বিচারাধীনের মৃত্যুতে রহস্য দানা বাঁধছে জলপাইগুড়িতে। সোমবার জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালের পুলিশ সেলে ভর্তি বেলাকোবা বটতলার বাসিন্দা সুভাষ ঘোষের (৪২) মৃত্যু হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সুভাষবাবুকে জেলে মারধর করায় মৃত্যু হয়েছে। চোলাই বিক্রি এবং এলাকায় মদের ঠেক চালানোর অভিযোগে ৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন জেলা আদালতের নির্দেশে ১৪ দিনের জেল হেফাজত হয় তাঁর। জেল সূত্রে জানানো হয়, সোমবার দুপুরে তার শ্বাসকষ্টজনিত এবং স্নায়ুর সমস্যা হওয়ায় জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, মৃতদেহের চোখের ওপরে রক্তের দাগ রয়েছে। মুখ দিয়েও রক্ত বের হয়েছে। শরীরের কিছু জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলেও অভিযোগ। মঙ্গলবার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের পরে পরিবারের সদস্যরা মৃতদেহ নিতে চাননি। তাঁদের দাবি, রিপোর্ট হাতে না পেলে দেহ নেওয়া হবে না। তাঁদের আশঙ্কা, জেলে মারধরের ঘটনাটি চেপে যাওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, মঙ্গলবার বিচারাধীন বন্দির মৃত্যু ঘটনা নিয়ে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রীয় সংশোধোনাগারে এক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্টে বন্দিকে মারধরের প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হয়েছে। জেল সুপার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, “বন্দি মাদকাসক্ত ছিলেন। সাধারণত মাদকাসক্তরা মদ না খেলে এমন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরে তাঁকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। মৃতের এক ভাইও জেলে বন্দি। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মারধরের কোনও রকম ঘটনাই ঘটেনি।”
মৃতের স্ত্রী সুনীতি দেবী অভিযোগ করেছেন, “রবিবারেও দেখা করে গিয়েছি। কোনও রকম অস্বাভাবিকতা দেখিনি। হঠাৎ এক দিনে উনি কী এমন অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে এই ঘটনা ঘটে গেল? জেলে ওঁকে মারধর করা হয়েছে।” মৃতের পরিবারের তরফে আইনজীবী দীপক সাহা বলেন, “মৃতদেহের গায়ে, চোখের ওপরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে শুনেছি। তাই ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমরা মৃতদেহ নেব না।”
পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষবাবু প্রতিবন্ধী ছিলেন। বছর দুয়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় তার একটি পা প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। সম্প্রতি বেলাকোবা বাজারের সোনার দোকানে দিনের বেলায় যে ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তার পরিকল্পনা বটতলার চোলাইয়ের আড্ডায় বসে ছকা হয়েছিল। সে কারণেই বেলাকোবা বটতলা এলাকায় সব অবৈধ মদের ঠেক ও চোলাইয়ের ঠেকে ব্যাপক পুলিশি অভিযান চালানো হয়। সেই অভিযানে এলাকার অন্যতম চোলাইয়ের ঠেকের মালিক সন্দেহে সুভাষবাবুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। |