পুজো সামলাতে ৫০ কোটির কয়লা
মানুষের স্বার্থই দেখছে না ইসিএল, অভিযোগ করলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী
মানুষের যাতে সুবিধা হয়, সে কথা ভেবেই এক সময়ে কোল ইন্ডিয়া-র মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গড়া হয়েছিল। কিন্তু এখন তারাই ‘যে ভাবে’ কয়লার দাম বাড়িয়ে চলেছে, তা মানুষের স্বার্থবিরোধী বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। ক্ষুব্ধ মন্ত্রীর দাবি, কয়লার দাম নির্ধারণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করুক।
কয়লার অভাবে গত ক’দিনে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে একাধিক ইউনিট বসে গিয়েছে। বিপর্যয়ের ছায়া ঘনিয়েছে রাজ্যের বিদ্যুৎ-চিত্রে। আসন্ন পুজোর সময়ে যাতে বিদ্যুৎ সঙ্কট না-হয়, তা নিশ্চিত করতে এ দিন বিভিন্ন বিদ্যুৎ সংস্থা, কয়লা সংস্থা ও রেলের কর্তাদের বৈঠকে ডেকেছিলেন মনীশবাবু। তিনি জানান, ইসিএলের কয়লার দাম এত বেড়েছে যে, রাজ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম দীর্ঘ দিন ধরে তাদের থেকে কয়লা প্রায় কিনতেই পারছে না! অথচ পুজোর দিনগুলোয় প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের অর্ধেকটা নিগমেরই জোগান দেওয়ার কথা। ফলত অবস্থা যথেষ্টই সঙ্কটজনক।
এবং এই সঙ্কটের জন্য কয়লা সংস্থার দিকেই আঙুল তুলেছেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ইসিএলের কয়লার দাম বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লার চেয়েও বেশি! উপরন্তু পুজোর পরে দাম আবার বাড়বে বলে ইতিমধ্যে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। মণীশবাবুর হিসেব অনুযায়ী, যে কয়লার দাম এখন টনপিছু সাড়ে চার হাজার টাকা, তা-ই বেড়ে হবে ছ’হাজার!
এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীর আক্ষেপ, “এক দিকে কোল ইন্ডিয়া হাজার হাজার কোটি টাকা লাভ করছে, অন্য দিকে তারই অধীনস্থ সংস্থা বিআইএফআর থেকে বেরিয়ে মুনাফার লোভে বেপরোয়া দাম বাড়াচ্ছে!” তাঁর দাবি, “ভারত সরকারের উচিত কয়লার দর নির্ধারণে একটা নীতি প্রণয়ন করা।
এ ভাবে দাম বাড়তে থাকলে মানুষ বিদ্যুৎ কিনবেন কী করে? এ ভাবে চলতে পারে না। কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করুক।”
কয়লা সংস্থা কী বলছে?
ইসিএলের তরফে বলা হয়, দাম বেড়েছে শুধু ‘এ’ এবং ‘বি’ গ্রেডের কয়লার। সংস্থার এক কর্তার ব্যাখ্যা, “আমরা দাম বাড়াই কেন্দ্রের অনুমতি নিয়েই। পুরনো লোকসানের বোঝা ঝেড়ে ফেলে লাভজনক হয়ে ওঠার জন্য দাম বাড়াতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই।”
পুজোয় রাজ্যে মোট বিদ্যুৎ চাহিদা ৬৩৭০ মেগাওয়াটে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মধ্যে বণ্টন কোম্পানির এলাকায় চাহিদা হবে ৪৩৫০ মেগাওয়াট, সিইএসসি-এলাকায় ১৭২০ এবং ডিপিএলে ৩০০ মেগাওয়াট। কয়লার অভাবে পুজোর সময়ে বিদ্যুতে কি টান পড়তে পারে?
এই আশঙ্কা মাথায় রেখেই স্থির হয়েছে, পুজোর ক’টা দিনের জন্য নগদ ৫০ কোটি টাকা দিয়ে ইসিএলের থেকে এক লক্ষ টন কয়লা কিনবে নিগম। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে পরের দশ দিনে তারা ৩০ মালগাড়ি বোঝাই কয়লা পাবে। মণীশবাবু জানান, এই বাড়তি কয়লা পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় মালগাড়ি জোগাতে রেলকে বলা হয়েছে। কয়লা সংস্থাদের নিয়মিত কয়লা দিতে এবং বিদ্যুৎ সংস্থাগুলোকে সর্বোচ্চ মাত্রায় উৎপাদন করতে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ সংবহন ও বণ্টন সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে লাইনের সমস্ত ত্রুটি সারিয়ে রাখার।
এ হেন প্রস্তুতির পরে পুজোয় বিদ্যুতের ঘাটতি হবে না বলেই মন্ত্রীর আশা। ৫০ কোটি টাকায় কেনা ওই বাড়তি কয়লা দিয়ে পঞ্চমী থেকে সপ্তমী পর্যন্ত সন্ধেয় ৩৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। সপ্তমীর পরে পুজোর বাকি সময়টা অধিকাংশ অফিস-কারখানা বন্ধ থাকে বলে বিদ্যুতের চাহিদা পড়ে যায় অনেকটা। তাই সপ্তমীর রাত পর্যন্ত সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখাটাই সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় না হয় নগদে কয়লা কেনা হল। কিন্তু পুজোর পরে কী হবে?
নিগমের এক কর্তা পরিষ্কার বলেন, “আমাদের টাকা নেই। মাসুল বাড়াতে না-দিলে আয় বাড়বে না, কয়লাও কিনতে পারব না। তখন লোডশেডিং ছাড়া উপায় কী?”
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.