লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট
কারাটরা যা-ই বলুন, ‘সন্ত্রাস’ প্রশ্নে বুদ্ধদের ‘ভরসা’ কংগ্রেস
ঙ্গ সিপিএম ‘সন্ত্রাসে’র প্রশ্নেও হাঁটছে তার নিজস্ব পথে!
সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করেন, তৃণমূল এবং কংগ্রেস, জোট সরকারের দুই শরিকের হাতেই রাজ্যে তাঁদের সংগঠন ‘আক্রান্ত’। কিন্তু বঙ্গ সিপিএম চাইছে তৃণমূলের হাতে কংগ্রেসের মার খাওয়ার প্রসঙ্গ সামনে এনে জোট সরকারের মধ্যেই ‘টানাপোড়েন’ তৈরি করতে। কারণ আলিমুদ্দিন জানে, তাদের বিপর্যস্ত সংগঠন নিয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন মোকাবিলা খুবই কঠিন হতে চলেছে। সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের ‘দূরত্ব’ তৈরি হলে তা থেকে যা ফায়দা ওঠানো যায়, তাতেই সিপিএমের লাভ! কংগ্রেসের আক্রান্ত হওয়া নিয়ে তাই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে এখন সরব রাজ্য সিপিএম। ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়েও বুদ্ধবাবুই কংগ্রেস-তৃণমূল ‘বিভাজনে’র তত্ত্বের অন্যতম প্রবক্তা ছিলেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বঙ্গ সিপিএম কংগ্রেসের ‘যন্ত্রণা’য় সরব হচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন লোকপাল বিল থেকে শুরু করে কে জি বেসিন কেলেঙ্কারি একের পর এক প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্তরে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রকাশ কারাটদের বিরোধ তুঙ্গে। ইউপিএ-১ থেকে বামেরা সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে গড়িয়েছে, তার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস-বিরোধী ‘লাইন’ই আগামী বছর সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসেও গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা। বৃহত্তর নীতিগত প্রশ্নে কংগ্রেসের বিরোধিতায় সহমত হয়েও ‘সন্ত্রাস’ প্রসঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকে খানিকটা ‘উস্কে’ই দিতে চাইছেন বুদ্ধবাবুরা। যে কারণে ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে এ রাজ্যের কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদলের রাহুল গাঁধীর কাছে দরবার করতে যাওয়ার খবর মঙ্গলবার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে সিপিএমের দৈনিক মুখপত্রে!
এমনিতেই তিস্তা জলচুক্তি বা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রতিরোধ বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ঈষৎ সংঘাতের পথে আছেন মমতা (যদিও প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বিরোধ সামাল দিতে তৎপর)। এই অবস্থায় ‘সন্ত্রাস’ প্রশ্নে দুই জোট শরিকের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি হলে পঞ্চায়েত ভোটে তার প্রভাব পড়ার সম্ভাবনার হিসাব কষছে আলিমুদ্দিন।
কলকাতায় দলের শেষ কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে গৃহীত রিপোর্টে কিন্তু ‘সন্ত্রাসে’র প্রশ্নেও কংগ্রেসকে কোনও ‘ছাড়’ দেওয়া হয়নি। পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘আমাদের দলের এবং গণসংগঠনের সাংগঠনিক ভিত্তি ধ্বংস করার লক্ষ্যে তৃণমূল এবং কিছু জায়গায় কংগ্রেস তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এই হিংসা বন্ধে এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার্থে প্রচার চালিয়ে যেতে হবে’। কিন্তু আলিমুদ্দিন এখন মূল ‘অপরাধী’ হিসাবে দোষারোপ করছে তৃণমূলকেই। তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে তাদের ‘বিভাজনে’র কৌশল সিপিএম অবশ্য কখনওই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকার করে না। এই ক্ষেত্রেও বলা হচ্ছে, তৃণমূলের হাতে কংগ্রেসের মার খাওয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আসলে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের বোঝাতে চাওয়া হচ্ছে, পরিস্থিতি কতটা ‘ভয়াবহ’। এর মধ্যে কংগ্রেসের প্রতি কোনও ‘নরম’ মনোভাবের ইঙ্গিত খোঁজা ঠিক নয়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, ২০১৩ সালের নির্ধারিত পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আনতে। এইখানেই সব চেয়ে বেশি চিন্তায় পড়েছে আলিমুদ্দিন। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের ধাক্কা তো সামলে ওঠা যায়ইনি। উপরন্তু যেখানে ওই ভোটের পরেও সংগঠন তুলনামূলক ভাবে শক্তিশালী ছিল, সেখানেও লাগাতার ‘আক্রমণ’ হচ্ছে। কিছু দিন আগে পর্যন্ত ‘লাল দুর্গ’ বর্ধমান জেলায় (যেখানে এই বিপর্যয়ের মধ্যেও ৯ জন বাম বিধায়ক) এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৭৩টি দলীয় কার্যালয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলাতেও আক্রমণের প্রাবল্য বেশি। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “যেখানে আমাদের শক্তি এখনও আছে, খুব পরিকল্পিত ভাবে সংগঠন ভাঙার জন্য সেখানে হামলা হচ্ছে। হয়তো প্রাণে মারা হচ্ছে কম। কিন্তু মেরে হাত-পা ভেঙে দেওয়া, বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা, জমিতে নামতে না-দেওয়া এবং সর্বোপরি জরিমানা এই সব চলছে। আমাদের ৬ হাজারের বেশি কর্মীকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “পরিকল্পিত ভাবে এই সন্ত্রাস চলছে বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলে। যেখানে শহরের মতো সঙ্গে সঙ্গে খবর এখনও ছড়ায় না। আক্রান্তেরা অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন বলে তদন্তেও কিছু ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম।” পঞ্চায়েত ভোট হবে গ্রামাঞ্চলেই এবং সেখানেই সংগঠনের উপরে আঘাত নেমে আসায় উদ্বিগ্ন আলিমুদ্দিন। খানিকটা ‘মরিয়া’ হয়েই তাই ‘ভরসা’ করতে হচ্ছে সেই কংগ্রেসের উপরে!
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.