এ দেশে নিরাপত্তার ছিদ্র বন্ধ করতে পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিতে আগ্রহী ইজরায়েল। সেই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও।
মঙ্গলবার দুপুরে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ভারতে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত অ্যালোন উশপিজ। বৈঠকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র এবং ইজরায়েলের সাম্মানিক কনসাল জেনারেল হর্ষ নেওটিয়া-ও উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়ার প্রস্তাবের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বাড়াতে রাজ্যকে সাহায্য করার কথাও বলেছেন উশপিজ। এই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নিরাপত্তা নিয়ে ভারতকে সাহায্য করার প্রস্তাব ইজরায়েলের এই প্রথম নয়। এর আগে লালকৃষ্ণ আডবাণী কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইজরায়েল সফরেও গিয়েছিলেন আডবাণী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিষয়টি বাস্তবায়িত হয়নি।
অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ইজরায়েলের পরামর্শ যে খুবই কাজে আসতে পারে, সে কথা স্বীকার করেন এ দেশের পুলিশ কর্তারাও। যুদ্ধ ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠার ফলে ইজরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক মজবুত। তাদের গোয়েন্দা সংস্থার খ্যাতি জগৎ জোড়া। এ রাজ্যের ক্ষেত্রেও মোসাদের পরামর্শ কাজে লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে খুব বড় মাপের নাশকতামূলক ঘটনা না ঘটলেও এ রাজ্য যে সন্ত্রাসবাদীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’, সে কথা গোয়েন্দারাই জানিয়েছেন। দিল্লি বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে দু’টি ই-মেল এ রাজ্য থেকে গিয়েছে বলেই তাদের দাবি। তা ছাড়া, বাংলাদেশ ও নেপালের সঙ্গে এ রাজ্যের শতছিদ্র সীমান্ত সহজেই পার হয়ে পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। |
সেই সঙ্গে রয়েছে মাওবাদী সন্ত্রাস। এই মুহূর্তে রাজ্য সরকার অবশ্য মাওবাদীদের সঙ্গে আলোচনারই পক্ষপাতী। সেই লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীদের একটি দলও গঠন করা হয়েছে। তাঁদের মাধ্যমে আলোচনায় আগ্রহও দেখিয়েছে মাওবাদীরা। কিন্তু সেই আগ্রহ কতটা আন্তরিক, সে ব্যাপারে প্রশাসনের একটা অংশের মধ্যে সংশয় রয়েছে। অতীতে অন্ধ্রপ্রদেশে আলোচনার সময় যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে মাওবাদীরা নিজেদের নতুন করে সংগঠিত করেছিল। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটলে তার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই প্রস্তুত থাকতে চায় রাজ্য সরকার। কিন্তু সব রকমের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষমতা যে এ রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর নেই, তা মুখ্যমন্ত্রী বিলক্ষণ জানেন। তাই এ দিন উশপিজ যখন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজি হলে, রাজ্য পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে মোসাদ, তখন বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার কথা বলেছেন মমতা।
নিরাপত্তার পাশাপাশি জমির উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি থেকে শুরু করে শস্য সংরক্ষণ কৃষির প্রায় সব ক্ষেত্রেও বিশ্বে অন্যতম অগ্রণী হিসেবে পরিচিত ইজরায়েলি প্রযুক্তি। এ বার সেই প্রযুক্তি রাজ্যের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায় তারা। এ জন্য সম্ভবত পুজোর পরেই রাজ্যে পা রাখবে তাদের প্রতিনিধিদল। জমি ও আবহাওয়ার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে কী ভাবে ওই প্রযুক্তি ব্যবহার করা সম্ভব, বিভিন্ন জেলায় গিয়ে তা কৃষকদের দেখাতে চান তাঁরা। সামিল হতে চান বৃষ্টির জল সংরক্ষণ বা ‘ড্রিপ ইরিগেশন’ ব্যবস্থার মাধ্যমে সেচের মতো আরও একাধিক প্রকল্পে। উশপিজের দাবি, এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে কৃষি উৎপাদন যেমন বাড়বে, তেমনই এখানকার বাজারে পা রাখতে পারবে তাঁর দেশের বেশ কয়েকটি বহুজাতিক সংস্থা।
কৃষি ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের সাফল্য যাচাই করে দেখতে মুখ্যমন্ত্রীকে ইজরায়েলে আমন্ত্রণ জানান উশপিজ। মমতা জানিয়েছেন, মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ইজরায়েল সফরে যাবেন রাজ্যের কৃষি ও জলসম্পদ সচিব।
ভারতের সঙ্গে ইজরায়েলের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পথে বাধা ছিল প্যালেস্তাইনের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের কারণে কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতা। নরসিংহ রাওয়ের জমানায় নিষেধাজ্ঞা উঠলেও, ইজরায়েল নিয়ে বামপন্থীদের ছুতমার্গ থেকে গিয়েছে বরাবরই। তাই আমন্ত্রণ রক্ষা করে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু সে দেশে পা রাখলেও, বরফ গলেনি। রাজনৈতিক দূরত্ব কিছুটা কমলেও, সে ভাবে ইজরায়েলি লগ্নি আসেনি রাজ্যে।
এ ব্যাপারে মমতার অবশ্য কোনও দিনই ছুতমার্গ ছিল না। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ইজরায়েলের বিভিন্ন সংস্থার প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন তিনি। এর আগে একাধিক ইজরায়েলি সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন অমিতবাবুও। তাই এই ‘জুড়ি’র সঙ্গে উশপিজের রসায়ন ভাল হবে বলে আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে এ রাজ্যের গুরুত্ব স্পষ্ট করে দিয়ে এ দিনই কলকাতায় ‘বিজনেস প্রোমোশন অফিস’ও চালু করল ইজরায়েলের দূতাবাস। |