পাঁচ বছর ধরে স্বামী নিখোঁজ। তাই শিক্ষক-স্বামীর আয়ের টাকা আসাও বন্ধ। ফলে, দুই সন্তান নিয়ে প্রবল অনটনে রয়েছেন ওই শিক্ষকের পরিবার। নিখোঁজ শিক্ষকের স্ত্রী তাই পারিবারিক পেনশনের দাবি জানিয়ে শিক্ষা দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন।
মানবাজার থানার মধুপুর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিলেন শ্রীজীব মহান্তি। তাঁর বাড়ি ওই থানার ঝাড়বাগদা গ্রামে। পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০০৭ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁর স্ত্রী মীরা মহান্তি বলেন, “একবার অসুস্থ হয়ে পড়ার পরে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসা চলছিল। মাঝে মধ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। ফিরে আসতেন। কিন্তু, নিয়মিত স্কুলে যেতেন। কিন্তু, সেবার স্কুলে যাওয়ার জন্য তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরলেন না। কোথায় যে গেলেন, কে জানে?” পরিজনদের বাড়ি থেকে সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় সন্ধান করেও শ্রীজীববাবুর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি। মানবাজার থানায় তাঁর নামে নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। কলকাতার ভবানী ভবনে ছবি পাঠানো হয়। কিন্তু, তাঁর খবর কেউ দিতে পারেন নি।
মীরাদেবীর আক্ষেপ, “স্বামীর আয়েই আমাদের সংসার চলত। কিন্তু, তিনি নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে বেতনও বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় আমাদের দুগর্তি। বহুবার জেলা শিক্ষা দফতরের কাছে আমাকে পারিবারিক পেনশন অথবা চাকরি দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি। কোনও সুরাহা হয়নি।” তাঁর দুই ছেলে মৃন্ময় ও তন্ময়। মৃন্ময় জানান, টাকার অভাবে তিনি কলেজের পড়া শেষ করতে পারেন নি। এখন তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে থাকেন। তন্ময়-ও মাধ্যমিক শেষ করতে পারেননি। পেটের দায়ের এখন তিনি ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করতে যান।
মানবাজার ১ চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক ইরা সুবুদ্ধি বলেন, “দফতরের নথি না দেখে ওই শিক্ষকের সম্বন্ধে কিছু বলা সম্ভব নয়। যাবতীয় তথ্য-সহ তাঁর পরিবার যোগাযোগ করলে সাধ্যমত চেষ্টা করা হবে।” জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) অজয় আচার্য বলেন, “নিয়ম মেনে তাঁদের সাহায্য করা হবে।” মীরাদেবীর আর্তি, “স্বামীর চিকিৎসা ও পরে তাঁর খোঁজ করতে গিয়ে সঞ্চিত টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন আমাদের প্রতি সদয় না হলে আমরা শেষ হয়ে যাব।” |