বামফ্রন্টের পঞ্চায়েত সদস্যদের পদত্যাগ করার যেন হিড়িক পড়েছে বোলপুর মহকুমায়!
ইলামবাজার ব্লকের জয়দেব কেঁদুলি পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ ৭ জন বাম সদস্য মঙ্গলবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। ‘উন্নয়নের গতি বাড়াতে’ তাঁরা দলত্যাগ করেছেন বলে দাবি করলেও বামফ্রন্ট নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূল জোর করে, ভয় দেখিয়ে কিছু সদস্যকে ভাঙিয়েছে। তৃণমূল অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে এই কাজিয়ার মধ্যেও পঞ্চায়েতের দখল কার্যত তাদের হাতে এসে যাওয়ায় খুশি তৃণমূল শিবির। ইলামবাজার ব্লক তৃণমূল সভাপতি মহম্মদ জাফারুল ইসলাম বলেন, “বামফ্রন্টের সময় এই পঞ্চায়েত এলাকার উন্নয়ন প্রায় থমকে ছিল। পঞ্চায়েত সদস্যেরা আমাদের দলে আসায় এ বার উন্নয়ন গতি পাবে।”
প্রায় একই ছবি বোলপুর ব্লকের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতে। সেখানে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে মঙ্গলবার পদত্যাগ করেছেন ওই পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান সোনালি ধীবর। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় সোনালিদেবী-সহ বামফ্রন্টের ৮ জন এবং পিডিসিআইয়ের ১ জন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। ফলে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা তৃণমূলেরই। এ ক্ষেত্রেও সিপিএম তথা বাম নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘সন্ত্রাস’ চালিয়ে ও ‘ভয়’ দেখিয়ে পঞ্চায়েত দখলের অভিযোগ এনেছেন। বোলপুরের বিডিও অমল সাহা বলেন, “প্রধানের পদত্যাগের আর্জি গৃহীত হয়েছে। পরবর্তী প্রধান নির্বাচনের সদস্যদের ঠিক সময়ে জানানো হবে।
২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়দেব কেঁদুলি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট ১১টি আসনের সব ক’টিই পেয়েছিল বামফ্রন্ট। তার মধ্যে সিপিএম পায় ৫টি। তিনটি করে আসনে জিতেছিল শরিক আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক। আরএসপি-র দুর্গা ধীবর প্রধান নির্বাচিত হন। এ দিন যাঁরা দল ছাড়লেন, তাঁদের মধ্যে সিপিএমের ৪ সদস্য, আরএসপি-র ২ জন (প্রধান-সহ) এবং ফব-র এক সদস্য রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, এই তিন বছরে উন্নয়ন করতে ‘ব্যর্থ’ এই পঞ্চায়েত। কারণ দলের নেতাদের অনুমতি না নিয়ে নির্বাচিত সদস্যেরা কাজ করতে পারতেন না। পাশাপাশি এলাকায় জয়দেব কেঁদুলির যে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি রয়েছে এবং যাকে ঘিরে জেলার সবচেয়ে বড় মেলা বসে, সেই মন্দির সংস্কার বা মন্দির সংলগ্ন এলাকার কোনও উন্নয়নই পঞ্চায়েত করেনি বলেও অভিযোগ তৃণমূলের।সদ্য দলত্যাগী প্রধান দুর্গা ধীবর বা ফব-র পঞ্চায়েত সদস্য শেখ সামসুল হোদা, সিপিএমের সদস্য রাহিলা বিবিরা বলেন, “যে উদ্দেশ্য নিয়ে ভোটে লড়েছিলাম এবং মানুষ যে প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের জিতিয়েছিলেন, সে-সব পূরণ না করতে পারার হতাশা থেকেই দল ছেড়েছি। এ বার উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করা যাবে।” দলত্যাগী সদস্যেরা যাই দাবি করুন না কেন, সিপিএমের জয়দেব লোকাল কমিটির সম্পাদক সৈয়দ ইকবালের দাবি, “এ সব বাজে কথা! এলাকায় উন্নয়নের কাজ যথেষ্ট হয়েছে। শুধুমাত্র তৃণমূলের হুমকি, ভয় ও প্রলোভনে পড়ে কিছু সদস্য ওই দলে গিয়েছেন।”
এলাকার ফব নেতা আনারুল হকেরও অভিযোগ, “বলপূর্বক ওই সদস্যদের দল ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, “গত নির্বাচনে ইলামবাজার ব্লকের মোট ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮টিই ছিল বামফ্রন্টের দখলে। কেবল ঘুরিষা পঞ্চায়েত ছিল বিরোধীদের হাতে। কিন্তু গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই তৃণমূল আমাদের বিভিন্ন পঞ্চায়েত সদস্যকে টোপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে নিজেদের দলে টানার কাজ শুরু করে।” যদিও ব্লক তৃণমূল সভাপতির পাল্টা দাবি, কাউকে বলপূর্বক দলে টানার চেষ্টা করা হয়নি। মানুষের ভোটে জিতেও তাঁদের জন্য কাজ করতে না পেরে ‘স্বেচ্ছায়’ দল ছেড়েছেন বামফ্রন্টের সদস্যেরা।
অন্য দিকে, রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতের মোট ১৫টি আসনের মধ্যে গত নির্বাচনে ৬টি করে আসন পেয়েছিল সিপিএম এবং আরএসপি। ২টি আসন যায় পিডিসিআইয়ের ঝুলিতে। ১টি পায় সিপিআই। প্রধান হন সিপিএমের সোনালি ধীবর। উপ-প্রধান আরএসপি-র মিনা বিশ্বাস। সোনালিদেবীর দাবি, সোমবার তিনি-সহ সিপিএমের ৪ সদস্য, আরএসপি-র ৩ জন (উপপ্রধান-সহ) এবং পিডিসিআই ও সিপিআইয়ের ১ জন করে সদস্য তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “বামফ্রন্টের ১১ জন সদ্যস আমাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। আমরা সেই আর্জি বিবেচনা করে দেখছি।”
সিপিএমের বোলপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক উৎপল রুদ্রর অভিযোগ, “আমাদের প্রধানকে পদত্যাগের জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে। সন্ত্রাস করে ওই সদস্যদের দলছাড়া করিয়েছে তৃণমূল। ওই এলাকার বামফ্রন্টের ৬০ জন কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে ওরা। তৃণমূলের সন্ত্রাসে রাইপুর-সুপুর লোকাল কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ বকুল ঘড়ুই ঘরছাড়া।” সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিকাশবাবুর দাবি, বামফ্রন্টের সদস্যেরা স্বেচ্ছায় দল ছাড়তে চাইছেন। |