|
|
|
|
নির্বাচনী সভাতেই বিক্ষোভ তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
নির্বাচনী সভায় গিয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশের হেনস্থার মুখে পড়লেন বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় মঞ্চে তখন বসে। বসিরহাট উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত হাসনাবাদের মুড়াড়িশা চৌমাথায় ওই সভা ছিল।
সিপিএম বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাসেমের মৃত্যুতে এই কেন্দ্রে ২৫ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচন। তৃণমূল প্রার্থী এটিএম আবদুল্লা-র (রনি) সমর্থনে সভায় এসেছিলেন মুকুলবাবু। দলের আর এক সাংসদের দিকে ছাতা-জুতো নিয়ে জনতাকে তেড়ে আসতে দেখে থতমত খেয়ে যান তিনি। মুকুলবাবু বলেন, “নুরুলের বিরুদ্ধে দলের শ’খানেক লোক বিক্ষোভ দেখিয়েছে। দল বিষয়টি দেখবে।” তবে যাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়, সেই নুরুলের প্রতিক্রিয়া, “টিকিট পায়নি বলে কিছু লোক সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সামনেই এমন ঘটাল। বিষয়টি নিন্দনীয়। দলের কাছে সুবিচার চাইব।”
মুকুলবাবু মঞ্চে ওঠার মিনিট কয়েক বাদে পিছনের সিঁড়ি দিয়ে মঞ্চে উঠতে যান নুরুল। তখনই সামনের সারিতে থাকা তৃণমূলের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক হইহই করে ওঠে। ছাতা-জুতো দেখানো হয়। উড়ে আসে গালিগালাজ। নুরুলকে ‘মঞ্চে উঠতে দেওয়া যাবে না’ বলে চিৎকার করে তারা। অভিযোগ, এলাকায় সাংসদের দেখা মেলে না। তাঁর উদ্যোগের অভাবেই স্থানীয় সংখ্যালঘু মানুষের উন্নয়ন হচ্ছে না। সিপিএম ছেড়ে বেরিয়ে আসা ‘সঘোষিত’ তৃণমূল নেতা হয়ে ওঠা বাবু মাস্টার নামে এক দুষ্কৃতীকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন সাংসদ। এই অভিযোগ মানেননি নুরুল। পুলিশের খাতায় একাধিক অভিযোগ আছে বাবু মাস্টার ওরফে ফিরোজ কামাল মনির নামে। তিনি এখন পুলিশের চোখে ‘ফেরার।’ |
|
মুকুল রায়ের পিছনে বসে তৃণমূল সাংসদ হাজি নুরুল ইসলাম। নিজস্ব চিত্র |
মিনিট দশেক হট্টগোল চলার পরে মুকুলবাবু-সহ দলের নেতাদের ‘অনুরোধে’ পরিস্থিতি শান্ত হয়। দলের কোন্দলের ছবিটা মুকুলবাবুর সামনে স্পষ্ট হলেও মন্তব্য করেননি তিনি। রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে জোট সরকারের কাজের খতিয়ান তুলে ধরেন। নুরুল ইসলাম সভা চলাকালীন সারা ক্ষণই বসেছিলেন মুকুলবাবুর পিছনের চেয়ারে। তবে বক্তৃতা করেননি। সভা শেষে মঞ্চ ছাড়েন। নামার সময় আর এক দফা বিক্ষোভ হয় তাঁকে উদ্দেশ্য করে।
নুরুল বলেন, “তৃণমূলের স্থানীয় নেতা রফিকুল ইসলাম এই আসনে টিকিট না পাওয়ায় কিছু লোক পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটাল। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ, সে সব বিচার করুক দল। দোষী হলে শাস্তি পাব। তবে অন্য কেউ দোষ করে থাকলেও যেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। না হলে পরবর্তী সময়ে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে।” তবে বাবু মাস্টারকে দলে না নেওয়ার জন্য তিনি সরব হন বলেও দাবি করেন নুরুল। রফিকুল সভায় ছিলেন। তিনি বলেন, “কারা এমন করল জানি না।” প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে ক্ষোভ ছিল বলে স্বীকার করেন তৃণমূলের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষ। বলেন, “সভায় ক্ষোভ দেখানো ঠিক হয়নি।”
অবশ্য এই ঘটনা ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই তৃণমূল নেতাদের ধারণা। মুকুলবাবু বলেন, “সভায় যা ভিড় ও মানুষের উদ্দীপনা দেখেছি তাতে আমি নিশ্চিত সিপিএম বড় ব্যবধানে এ বার হারবে।” মুকুলবাবু ছাড়াও সভায় ছিলেন কলকাতা পুরসভার ডেপুটি মেয়র ফারজানা আলম, যুব তৃণমূল নেতা সৌরভ চক্রবর্তী প্রমুখ।
এ দিকে, বসিরহাটের সভা শেষে ফেরার পথে সন্ধ্যায় নুরুল এবং রফিকুলকে নিয়ে খোলাপোতায় আলোচনায় বসেছিলেন মুকুলবাবু। সেখানে মন্ত্রীর উপস্থিতিতেই দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে একপ্রস্ত ধস্তাধস্তি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। |
|
|
|
|
|