|
|
|
|
দেখবে কে, ভেবেই বৃদ্ধা স্ত্রীকে মেরে থানায় ফোন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
“একটু আগে বৃদ্ধা স্ত্রীকে খুন করেছি। আপনারা এসে আমাকে গ্রেফতার করুন।”
রাত পৌনে ১০টায় ক্লান্ত, অবসন্ন পুরুষকণ্ঠের ফোনে চমকে উঠলেন খড়দহ থানার ডিউটি অফিসার।
ফোনে জানানো ঠিকানা অনুযায়ী সোদপুর পিয়ারলেস নগর আবাসনের একতলার একটা ফ্ল্যাটে বেল বাজাতে দরজা খুললেন অসুস্থ সত্তরোর্ধ্ব এক বৃদ্ধ। এতটাই অসুস্থ যে, হাঁটতেও কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। তিনিই নিয়ে গেলেন শোয়ার ঘরের খাটের কাছে। সেখানে শুয়ে এক বৃদ্ধা। কাটা গলা দিয়ে রক্ত গড়িয়ে এসে পড়েছে মাটিতে। বৃদ্ধার শরীরে প্রাণ নেই। বৃদ্ধটি পুলিশকে বললেন, “এই আমার স্ত্রী। একটু আগে দাড়ি কাটার ব্লেড দিয়ে আমি ওঁর গলা কেটে ওঁকে মুক্তি দিয়েছি।”
মঙ্গলবার গভীর রাতের এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে বহু অপরাধ ঘাঁটা পুলিশ অফিসারদেরও। ক্রমাগত আত্মকেন্দ্রিক হতে থাকা সমাজে অসুস্থ বৃদ্ধবৃদ্ধাদের একাকীত্ব আর অসহায়তা কোন পর্যায়ে যাচ্ছে, এই ঘটনা এক ঝটকায় সেই মর্মান্তিক ছবির ঢাকনা খুলে দিল। পুলিশকে বৃদ্ধ জানিয়েছেন, তাঁর অবর্তমানে নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা থেকে স্ত্রীকে বাঁচাতে তাঁকে মেরে ফেলার চেয়ে ভাল পথ খুঁজে পাননি!
বৃদ্ধের নাম অমরেশ রায়। বয়স ৭৫। ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ১৫ বছর আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মিনতি রায়। বয়স ৭২। একমাত্র সন্তান তাঁদের মেয়ে মারা গিয়েছেন আট বছর আগে। তার পরে দু’জনেরই অসুস্থতা বাড়তে থাকে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে থাকে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে। জেট যুগে অকেজো, অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকা প্রবীণদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার তাগিদ খুব বেশি নেই সমাজের!
নিঃসঙ্গতা গিলে ফেলেছিল অমরেশ আর মিনতিকে। ইদানীং একটাই চিন্তা তাঁদের কুরে কুরে খেত। দু’জনের মধ্যে কেউ এক জন তো আগে মারা যাবেন। তখন অন্য জনের কী হবে? দেখার তো কেউই নেই। অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে থাকলে এক গ্লাস জল দেওয়ারও লোক মিলবে না। পুলিশকে বৃদ্ধ জানিয়েছেন, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতেন, যেন আগে অন্য জনের মৃত্যু হয়। যিনি আগে যাবেন, তিনি তো অন্তত একা, অসুস্থ অবস্থায় তিলে তিলে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবেন।
এক সময় ভগবানের উপরেও আর ভরসা রাখতে পারেননি বৃদ্ধ। নিজের অসুস্থতা বাড়তেই এই ভয়টা গ্রাস করেছিল যে, আগে যদি মারা যান, অসুস্থ মিনতিদেবী চূড়ান্ত অসহায় অবস্থায় পড়বেন। স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালবাসা থেকে তখনই পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। গত দু’দিন ধরে উইল তৈরি করে বিষয়সম্পত্তির দান করে গিয়েছেন রামকৃষ্ণ মিশনকে। কাজের লোক, ইস্ত্রিওয়ালা-সহ সকলের পাওনা টাকা আলাদা খামে ভরেছেন। তার পরে এল বিদায়ের রাত। মঙ্গলবার মিনতিদেবী খেয়েদেয়ে ঘুমোনোর পরে ব্লেড দিয়ে তাঁর গলা কেটে দেন অমরেশবাবু।
পুলিশের হাতেই উইল আর টাকা ভরা খাম তুলে দেন বৃদ্ধ। তার পরে শান্ত ভাবে বলেছেন, “এ বার আমাকে থানায় নিয়ে চলুন।” পুলিশ তাঁর শারীরিক অবস্থা দেখে তাঁকে খড়দহ বলরাম সেবা সদন হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। |
|
|
|
|
|