মার্কিন ধাঁচে মাওবাদী এলাকায় ফেলো কর্মসূচি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোয়াইট হাউস ফেলোজ প্রোগ্রাম’-এর ধাঁচে এ বার ভারতেও ‘প্রধানমন্ত্রীর গ্রামোন্নয়ন ফেলো কর্মসূচি’ শুরু করতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচির আওতায় তরুণ পেশাদারদের দুই থেকে তিন বছরের জন্য মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার উন্নয়নের কাজে নিয়োগ করা হবে। তাঁদের যথাযথ সাম্মানিকও দেবে কেন্দ্র।
দেশের ষাটটি মাওবাদী সমস্যা কবলিত জেলার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামো উন্নয়নের গতি বাড়াতে সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের জন্য আজ সংশ্লিষ্ট জেলাগুলির জেলাশাসকদের এক বৈঠকে ডাকেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সামনেই আজ এই নয়া ফেলো কর্মসূচির প্রস্তাব দেন জয়রাম। পরে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “গত পাঁচ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীকে এই ব্যাপারে প্রস্তাব দিয়ে আসছি। তবে এ বার তা বাস্তবায়িত হতে চলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৪ সাল থেকে এই রকম একটি ফেলো প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা-সহ সে দেশের রাজনীতিকদের অধিকাংশই ওই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।”
কেন এই ধরনের ফেলোশিপ শুরুর ভাবনা? জয়রাম বলেছেন, মাওবাদী এলাকার উন্নয়নে পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োজন। এমন পেশাদার প্রয়োজন, যাঁরা ওই সব এলাকায় গিয়ে কাজ করতে আগ্রহী এবং এই দায়িত্ব পালনে আন্তরিক। মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাপিছু দুই থেকে তিন জন এই রকম পেশাদার নিয়োগ করবে কেন্দ্র। মাসে তাঁদের ষাট থেকে সত্তর হাজার টাকা সাম্মানিকও দেওয়া হবে। একই সঙ্গে ওই ৬০টি জেলার প্রতিটি থেকে ৫০০ জনকে ভারত নির্মাণ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। এঁরা স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করবেন।
গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের ডাকা আজকের বৈঠকের মূল উদ্দেশ্যই ছিল মাওবাদী সমস্যা কবলিত জেলাগুলির জেলাশাসকদের কাছ থেকে প্রকৃত সমস্যার কথা শোনা ও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করে উন্নয়নের কাজকে সময় বেঁধে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দিনভর এই কর্মসূচির পরে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে জয়রাম জানান, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাজে যেটুকু নীতিগত পরিবর্তন জরুরি, তা মন্ত্রক করবে। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সাহায্য প্রয়োজন। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র আওতায় তিন বছরের মধ্যে ওই ৬০টি জেলার সমস্ত জনবসতিতে রাস্তা তৈরি। এর জন্য অতিরিক্ত ৩৫ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
জয়রামের মতে, এই টাকা বরাদ্দ হলে যে এলাকায় মাত্র শ’খানেক লোকের বাস, সেখানেও রাস্তা নির্মাণ সম্ভব হবে। তা-ও কংক্রিটের রাস্তা, যাতে মাওবাদীরা সহজে সেই রাস্তার কোনও ক্ষতি করতে না পারে। যথেষ্ট গুরুত্ব পাবে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও। মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস-সহ সরকারি দফতরে স্থানীয় যুবকদের নিয়োগ করা হবে। তবে এর জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব পাশ করাতে হবে। এর পাশাপাশিই, পাঁচ বছরের মধ্যে জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা সংস্থান প্রকল্পের আওতায় এই জেলাগুলির তিরিশ হাজার যুবকের কর্মসংস্থানের বন্দোবস্ত করা হবে।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ ইউপিএ সরকারের এই ‘তৎপরতা’র অন্য ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। সামাজিক প্রকল্প রূপায়ণের মাধ্যমে কংগ্রেস এখন সরকারের ভাবমূর্তি উদ্ধারে সচেষ্ট বলে তাঁরা মনে করেন। তা ছাড়া, তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জয়রাম আজ প্রকল্প রূপায়ণের যে সব সময়সীমা স্থির করেছেন, তার অধিকাংশ আগামী তিন বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালের মধ্যে শেষ করার কথা বলা হয়েছে। তবে এ প্রসঙ্গে সহাস্য জয়রাম বলেছেন, “২০১৪ সালে লোকসভা ভোট জানি। তবে এর সঙ্গে রাজনীতি জোড়া ঠিক হবে না।” সময়সীমার ব্যাপারটা নিছক ‘কাকতালীয় ভাবে’ই মিলে গিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.