|
|
|
|
দিল্লি বিস্ফোরণ |
কলকাতায় আটক আরও ১, গোয়েন্দারা ধন্দেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে ই-মেলের সত্যাসত্য যাচাই করতে করতেই এক সপ্তাহ কাটতে চলল। কিন্তু বড়াই করে বলার মতো কিছুই পেল না জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
গত বুধবারের দিল্লি বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে এখনও পর্যন্ত চারটি ই-মেল এসেছে। প্রথম মেলটি এসেছিল হুজি-র নামে। তার পরেরগুলি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নামে। এখনও পর্যন্ত একটি ই-মেলটি সম্পর্কেই এনআইএ নিশ্চিত যে, সেটি কোনও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের তরফে পাঠানো হয়নি। সেটি গুজরাত থেকে পাঠিয়েছিলেন মনু ওঝা নামে এক মানসিক অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তি। বাকিগুলির মধ্যে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নামে একটি ই-মেল পাঠানোর জন্য আজ কলকাতা থেকে এক যুবককে আটক করেছে এনআইএ-র অফিসাররা। এনআইএ সূত্রের খবর, ওই যুবকের নাম সানি শর্মা। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দিল্লিতে নিয়ে আসা হচ্ছে।
এর আগেও দিল্লি হাইকোর্টে বিস্ফোরণের সূত্রে পশ্চিমবঙ্গ থেকে তিন জনকে আটক করা হয়েছিল। সে সময় এনআইএ-র তরফে কলকাতা পুলিশকে জানানো হয়, বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে পাঠানো দু’টি ই-মেল পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছে। এনআইএ কর্তাদের বক্তব্য, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের তরফে ছোটু মিঞাঁর নামে পাঠানো ওই দু’টি ই-মেল আবার এসেছিল দু’টি ভিন্ন ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস’ থেকে। যার মধ্যে একটি পাঠানো হয়েছিল মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সেই মোবাইল খুঁজতে গিয়ে তিনটি নম্বরকে সন্দেহের তালিকায় রাখা হয়েছিল। সেই মতো তিন জনকে আটক করা হয়।
কিন্তু কলকাতার স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের পর দিল্লিতে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছে, তাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউই নিজেরা ই-মেল পাঠায়নি। মোবাইল ফোনের সিম-কার্ড ‘ক্লোন’ করে ই-মেল পাঠানো হয়েছিল। ফলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা হয়েছিল, ওই ব্যক্তিদের কারও মোবাইল থেকেই ই-মেল পাঠানো হয়েছে। হুজি-র নামে সর্বপ্রথম যে ই-মেলটি জম্মু-কাশ্মীরের কিস্তওয়ারের একটি সাইবার কাফে থেকে পাঠানো হয়েছিল, তার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একাধিক ব্যক্তিকে আটক করেও বিশেষ লাভ হয়নি। অতএব আজ কলকাতায় যে যুবককে আটক করা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কতটা লাভ হবে সে সম্পর্কে এনআইএ কর্তারা সন্দিহান।
এই ই-মেলের জট ছাড়াতে গিয়ে এনআইএ এখন এতটাই নাস্তানাবুদ যে, আজ এ বিষয়ে যে কোনও তথ্যের জন্য পুরস্কার মূল্য পাঁচ লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে দশ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, একটা বিষয় স্পষ্ট যে, কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে তদন্ত সংস্থাগুলিতে আরও বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। কারণ একটি ই-মেল এমন ভাবে বিভিন্ন ই-মেল আইডি থেকে বাউন্স করিয়ে পাঠানো হয়, যে আসলে কে ই-মেল পাঠিয়েছে, তা-ই জানা যায় না। বৃহস্পতিবার থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (আইবি) আয়োজনে রাজ্য পুলিশের ডিজিদের তিন দিনের সম্মেলন শুরু হচ্ছে। ই-মেলের রহস্য সমাধানই তার অন্যতম আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর। এ দিকে, সত্যি না মিথ্যে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতে না পারায় বাকি তিনটি ই-মেলের কোনওটির দাবি বা হুমকিই উড়িয়ে দিতে পারছে পুলিশ-প্রশাসন। আর সেই ই-মেলের জন্যই আজ ত্রস্ত ছিল গোটা রাজধানী। কারণ, দিল্লি বিস্ফোরণের পরের দিনই ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের নামে পাঠানো একটি ই-মেলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল, আজ, মঙ্গলবার কোনও শপিং-মলে হামলা হবে। তিন বছর আগে এই দিনটিতেই দিল্লিতে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। হুমকি দিয়ে পাঠানো দিল্লির নাম নির্দিষ্ট করে বলা না থাকলেও, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চায়নি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক তথা দিল্লি পুলিশ। কনট প্লেস হোক বা খান মার্কেট, শহরের প্রধান বাজার ও শপিং মলগুলি আজ কার্যত দুর্গে পরিণত হয়েছিল। |
|
|
|
|
|