আগে দু’-দু’বার পেরেছেন। কিন্তু এ বার পারলেন না। এই আফসোস থেকেই ব্যান্ডেল-দেবানন্দপুরের বাসিন্দা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় চান, হাওড়া স্টেশনে অসুস্থ হয়ে বৃদ্ধের মৃত্যুর ঘটনায় দোষী পুলিশ ও রেলকর্মীদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত তৈরি করুক প্রশাসন। তদন্তে সব রকম সাহায্য করতে তৈরি তিনি।
১৩ বছর আগে কলেজের পড়ার সময় শিয়ালদহ স্টেশনে অসুস্থ হয়ে পড়া এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন সুদীপবাবু। বছর দুয়েক আগে স্টিফেন কোর্টের অগ্নিকাণ্ডের সময়েও গুরুতর আহত এক যুবককে হাসপাতালে নিয়ে যান তিনি। দু’টি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছিল সুদীপবাবুর চেষ্টা। বেঁচে গিয়েছিলেন সেই বৃদ্ধ ও যুবক। এ বারেও বৃদ্ধ অলোক রায়কে সাহায্য করার জন্য পুলিশ ও রেলকর্মীদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলেন সুদীপবাবু। কেউ সাহায্য করেননি। শেষে নিজেই ট্যাক্সি ডেকে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যান সুুদীপবাবু। কিন্তু বাঁচানো যায়নি অলোকবাবুকে।
সেই ব্যর্থতা ব্যথা বাড়িয়ে দিয়েছে পরের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে সদাব্যস্ত সুদীপবাবুর। মঙ্গলবার ঘটনার কথা উঠতেই ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশ আর রেলের একটু সাহায্য পেলে আমি অনেক আগেই ওঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারতাম। জানি না, এই ঘটনার আদৌ তদন্ত হবে কি না! যাঁরা সাহায্য করলেন না, তাঁদের শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত গড়া উচিত প্রশাসনের কর্তাদের।”
পুলিশকর্মীরা কেন সুদীপবাবুকে সহায়তা করল না, তার তদন্ত অবশ্য মঙ্গলবারেই শুরু করে দিয়েছে প্রশাসন। হাওড়ার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) সুকেশকুমার জৈন তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (উত্তর) রূপেশ কুমারকে। তাঁকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট থেকে এ দিনই ফোন করা হয় সুদীপবাবুকে। তদন্তের কাজে তাঁর সাহায্য চেয়েছে পুলিশ। জানানো হয়েছে, যে-কোনও দিন তাঁকে তদন্তকারীদের কাছে ডাকা হবে।
হাওড়া পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, এখন মূলত যে-সব বিষয় দেখা হচ্ছে, সেগুলি হল:
l হাওড়া স্টেশনের সাবওয়েতে ওই বৃদ্ধকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখে সুদীপবাবু প্রথমে ফোন করেন ১০০ নম্বরে। ফোনটি যায় লালবাজারে। কিন্তু সেখান থেকে হাওড়া পুলিশ কন্ট্রোল রুমকে বিষয়টি জানানো হল না কেন?
l যে-সব পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে ছিলেন, তাঁরা বা কেন সুদীপবাবুর অনুরোধে কর্ণপাত করলেন না? হাওড়ার ডিসি (সদর) সুকেশকুমার জৈন বলেন, “ঘটনাটি যদি রেল পুলিশের এলাকায় ঘটে থাকে, তা হলে বিষয়টি রেল পুলিশের কর্তাদের জানানো হবে।” রেল পুলিশ অবশ্য ইতিমধ্যেই পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। রেল পুলিশের ডিজি দিলীপ মিত্র বলেন, “ঘটনাটির তদন্ত করে হাওড়ার এসআরপি-কে রিপোর্ট দিতে বলেছি।” এ দিন ময়না-তদন্তের পরে অলোকবাবুর দেহ তাঁর বোন ডলি দাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ডলিদেবী বলেন, “পুলিশের আরও মানবিক হয়ে ওঠা উচিত। মানবিক হওয়া উচিত পথচলতি মানুষজনেরও।” |