কলকাতা পুরসভার তৃণমূল-পরিচালিত বোর্ডের ‘দুর্নীতি এবং অপদার্থতা’র বিরুদ্ধে এ বার রাস্তায়
নেমে আন্দোলনের ডাক দিল বামফ্রন্ট। সেই সঙ্গে ‘হুঁশিয়ারি’ দেওয়া হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকেও! কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে দাঁড়িয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গৌতম দেব বললেন, “মমতার সঙ্গে আগামী বছর আমাদের রাস্তায় দেখা হবে! তাঁকে আরও কিছু সময় দিতে হবে। কিন্তু
শ্রীমান শোভন চট্টোপাধ্যায় ১৫ মাস সময় পেয়েছেন। এই বার তো লোকে পুরসভার আলমারি খুলে দেখবে, বাড়ির নকশার ফাইল কোথায় আছে!” |
বস্তুত, মহানগরের পুরসভার কাজ নিয়ে সিপিএম তথা বামেরা যে এ বার গুরুত্ব সহকারে আন্দোলনে নামতে চাইছে, কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের বিক্ষোভ সমাবেশে মঙ্গলবার গৌতমবাবুর উপস্থিতিই তার ইঙ্গিত। মেয়র শোভনবাবু কেন দিনের পর দিন পুরসভায় না-থেকে মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশেপাশে ঘুরে বেড়ান, কেন বস্তি উন্নয়নে বরাদ্দ কমিয়ে দিচ্ছে বর্তমান পুরবোর্ড, কেন ৪০০ কোটি টাকা ঋ
ণের বোঝা চাপছে, কেন ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দফতর মেয়রেরই হাতে রয়েছে এই সব প্রশ্ন তুলেছেন পুরসভার
বিরোধী দলনেত্রী, সিপিএমের রূপা বাগচি, আরএসপি-র কল্যাণ মুখোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের প্রবীর দেব, ফরওয়ার্ড ব্লকের
মইনুদ্দিন শামসেরা। আর পুরসভাকে তুলোধোনা করেও প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেছেন, “শোভনের কী দোষ? এই যদি নেত্রী হন! দুর্ভাগ্য আমাদের, তিনি জিতেছেন! আমরা তো হেরে বিদায় নিয়েছি। আমরা চাই, তাঁর সরকার পাঁচ বছর থাকুক! পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পাঁচ বছর দেখুক, কেমন সরকার!”
সমাবেশে রূপা বলেন, “৩৩ জন কাউন্সিলর নিয়ে উন্নয়নের কাজে পুরবোর্ডকে সহযোগিতার কথা বলেছিলাম। ১৫ মাস তা-ই করেছি। কিন্তু পুরবোর্ড যে ভাবে চলছে, পুরসভার ভিতরে-বাইরে এ বার আন্দোলন হবে।” বাম আমলে ৭৫টি ওয়ার্ড কমিটি হলেও এই পুরবোর্ড ১৫ মাসে একটিও কমিটি গড়েনি বলে বিরোধী নেত্রী অভিযোগ করেন। কলকাতাকে লন্ডন বানাতে চাইলে তৃণমূলের পুরবোর্ড কেন শহরের ৮% রাস্তা আর বাড়ানোর চেষ্টা করল না বা সেই খাতে বরাদ্দ বাড়াল না, সেই প্রশ্নও তোলেন রূপা। গৌতমবাবু বলেন, “আমার লোকেরা টাকা চাইলে দেবেন না, মমতার এ কথা বলার মানে কী? তার মানে ওঁর কাছে খবর গিয়েছে, অনেক লোক টাকা চাইছে! এখানে (পুরসভা) কী হচ্ছে, ওই বাড়িতে (মহাকরণ) কি তার খবর যাচ্ছে না?” গৌতমবাবু অবশ্য শুধু পুরসভায় আবদ্ধ থাকেননি। দার্জিলিং বা জঙ্গলমহলে মমতা সস্তায় বাজিমাত করছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, “আমাদের মতো জঙ্গলমহলে তৃণমূলকেও লাশ কুড়োতে হবে!” তবে একই সঙ্গে তিনি এ দিন ফের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, নতুন সরকারকে আরও কিছুটা সময় দেওয়াই তাঁদের নীতি। তিনি জানান, পুজোর পর থেকে দলীয় সম্মেলন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁরা দল সামলে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। যে সব মানুষ বামেদের পাশ থেকে সরে গিয়েছেন, তাঁদের আবার ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন। আর তারই মাঝে পুরসভা এবং অন্যত্র মমতার সরকারকে হুঁশিয়ারি দিতে হবে। গৌতমবাবুর আহ্বান, “মমতাকে সরানোর প্রশ্ন এখনই আসছে না। কিন্তু সতর্ক করে দিন তাঁকে!” |