মাদুর কি শুধু পেতে শোওয়ার?
না! জবাব দিচ্ছেন কালনার শিল্পীরা। যাঁদের অসীম যত্নে মাদুরের তৈরি দুর্গা প্রতিমার সাজ এ বার শ্রীলঙ্কার মণ্ডপ মাতাবে।
আপাতত দিন রাত এক করে চলেছে শেষ পর্যায়ের কাজ। মাদুরকাঠি কেটে তাতে দড়ি, ভেলভেট বসিয়ে তৈরি হচ্ছে সাজের মুকুট, চালচিত্র, পোশাক, কানপাশা, চাঁদমালা-সহ হরেক রকমের সামগ্রী। তৈরি করতে সময় লাগছে মাসখানেকেরও বেশি।
বিশ্বকর্মা পুজোর পরেই এই সব কিছুই বাক্সবন্দি হয়ে চলে যাবে কলকাতার কুমোরটুলিতে। সেখান থেকে পাড়ি দেবে শ্রীলঙ্কা। তাই এই সব সাজ তৈরিতে এখন যাঁরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন, কালনার বড়মিত্রপাড়ার শিল্পী অমর পাল তাঁদের অন্যতম।
প্রতিমার সাজ তৈরির জন্য কালনায় বেশ কয়েকটি কারখানা রয়েছে। সারা বছরই এই সব কারখানায় তৈরি হয় বিভিন্ন নকশার সাজ। তবে পুজোর মোটামুটি মাস তিনেক আগে থেকে ব্যস্ততা তুঙ্গে ওঠে। কুমোরটুলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সাজের বরাত আসে।
|
শহরের বড়মিত্রপাড়ায় বিশ বছর ধরে রয়েছে অমরবাবুর কারখানা। এই কারখানার যাবতীয় নকশা তৈরি হয় অমরবাবুর ভাবনায়। শুধু কারখানায় বসেই নয়, বহু শিল্পী জরি, চুমকি, আঠা-সহ নানা উপকরণ কারখানা থেকে নিয়ে গিয়ে নকশার কাজ করেন। অমরবাবুর বিশেষত্ব হল, তিনি বেশির ভাগ সাজে জরি, চুমকি ব্যবহার করলেও প্রতি বারই সাজে কিছু নতুনত্ব আনেন। গত বার তাঁর তৈরি একটি পাটের সাজ গুয়াহাটির মণ্ডপ মাতিয়েছিল।
এ বার কুমারটুলির মাধ্যমে ফের বরাত আসে অন্য ধরনের সাজ তৈরির। শিল্পীর দাবি, এক সময়ে ডাকের সাজের সুনাম ছিল বাংলা এবং তার বাইরে। বর্তমানে অধিকাংশ সাজেই ব্যবহার করা হচ্ছে জরি, চুমকি। প্রতিযোগিতার বাজারে দর্শকদের মন পেতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন উপকরণের সাজও।
এ বার শ্রীলঙ্কার মণ্ডপের জন্য সাজটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে মাদুরকাঠি। এক মাসেরও বেশি সময়ের চেষ্টায় তৈরি হচ্ছে নতুন ধরনের সাজটি। অমরবাবু বলেন, “শ্রীলঙ্কার যে এলাকায় এ বার সাজটি যাচ্ছে, সেখানে প্রচুর বাঙালি রয়েছেন। মূলত সেই প্রবাসীদের আনন্দ দিতেই তৈরি হচ্ছে বিশেষ এই সাজ। পাশাপাশি, কিছুটা একই নকশায় তৈরি মাদুরের অন্য আর একটি সাজ যাচ্ছে ইলাহাবাদে।”
রাজ্যের বিভিন্ন মণ্ডপের জন্যও এ বার অমরবাবুর কারখানায় তৈরি হয়েছে প্রচুর নতুন সাজ। হরেক রং এবং বিভিন্ন দামের বেশ কিছু সাজ ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে কলকাতার নানা জায়গায়।
অভিজ্ঞ এই শোলাশিল্পীর কথায়, “এ বার প্রায় দেড় হাজার সাজ তৈরি হয়েছে। প্রতি সাজই বানানো হয়েছে ক্রেতাদের পছন্দের কথা মাথায় রেখেই।” |