তাঁদের কিছু নেতা-কর্মী ‘অন্যায় ভাবে নাগরিক জীবনে হস্তক্ষেপ’ করছেন বলে গত সপ্তাহেই লিফলেট বিলি করে অনুযোগ করেছিলেন বর্ধমান শহর তৃণমূলের এক নেতা। এ বার সিপিএমও একই অভিযোগ তুলল।
বাড়িতে নানা লোকের নিয়মিত আসা-যাওয়া আছে, স্রেফ এই ধুয়ো তুলে কাঁকসায় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির এক নেত্রীর বাড়িতে চড়াও হয়েছিলেন তৃণমূলের কিছু লোকজন। ওই নেত্রী ও তাঁর মেয়ের শ্লীলতাহানি করা হয়, জামাইকে মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। গড়িমসির অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধেও। তবে পুলিশ বা তৃণমূল, কেউই অভিযোগ মানতে চায়নি।
সোমবার রাতে মহিলা সমিতির ইউনিট কমিটির সদস্য দীপালি মণ্ডলকে নিয়ে কাঁকসা থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন সংগঠন ও সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা। যদিও ঘটনা ঘটে রবিবার গভীর রাতে কাঁকসা থানার পানাগড় বাজারে। কিন্তু ওই রাতে দীপালি দেবী ও তাঁর পরিবারের লোকজন থানায় গেলেও এফআইআর নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার কাঁকসা থানা অবশ্য তা অস্বীকার করে জানায়, অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
পানাগড় বাজারে সিপিএমের জোনাল অফিসের কাছেই প্রায় আড়াই দশক ধরে রয়েছেন দীপালিদেবী। স্বামী প্রভাত মণ্ডল কর্মসূত্রে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁকিনাড়ায় থাকেন। মায়ের সঙ্গেই থাকেন দীপালিদেবীর মেয়ে পার্বতী ও তাঁর গাড়ি-চালক স্বামী সদানন্দ ব্রহ্ম। পরিবারের অভিযোগ, রবিবার রাতে বিরুডিহা থেকে সদানন্দবাবুর বন্ধু আনন্দ কুমার তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। হঠাৎই স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা ডিএসপি কর্মী অসীম মুখোপাধ্যায় পাঁচ সঙ্গী নিয়ে জোর করে বাড়িতে ঢোকেন। তাঁদের বক্তব্য, ওই বাড়িতে নিয়মিত বাইরের পুরুষেরা আসে। তা চলতে দেওয়া হবে না।
দীপালিদেবীর অভিযোগ, প্রথমে তাঁর জামাইকে মারধর করা হয়। মেয়ে বাধা দিতে গিয়ে শ্লীলতাহানির শিকার হন। তিনি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে গেলে তাঁরও শ্লীলতাহানি করেন তৃণমূল কর্মীরা। সিপিএমের কাঁকসা জোনাল কমিটির সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের অভিযোগ, “দীপালিদেবী ওই এলাকার দীর্ঘদিনের বাসিন্দা। শুধু মাত্র বিরোধী রাজনীতির কারণেই বাইরে থেকে এক দল তৃণমূল কর্মী এসে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ তুলে ওঁর বাড়িতে চড়াও হয়েছে।” তাঁর আক্ষেপ, “মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে নিরপেক্ষ হতে বলছেন। অথচ তৃণমূল কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় পুলিশ তা নিতে গড়িমসি করেছে।”
কাঁকসা থানার ওসি পার্থ ঘোষ অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, “অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই তল্লাশি শুরু হয়েছে। দ্রুত অভিযুক্তদের ধরা হবে।” অন্যতম অভিযুক্ত অসীমবাবু অবশ্য দৈহিক আক্রমণের কথা মানতে চাননি। তাঁর দাবি, “মারধর বা শ্লীলতাহানি করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সিপিএম মিথ্যা অভিযোগ করছে। ওই বাড়িতে অসামাজিক কাজকর্ম চলে। আমরা তারই প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম।” সত্যিই ‘অসামাজিক কাজকর্ম’ চললে পুলিশকে খবর না দিয়ে নিজেরা নাক গলাতে গেলেন কেন, তার সদুত্তর অবশ্য তিনি দিতে পারেননি।
তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় বলেন, “কারও ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ আমাদের দল বরদাস্ত করে না। অসীমবাবু কতটা তৃণমূল, সন্দেহ আছে। কেউ আইন হাতে নিলে পুলিশ ব্যবস্থা নিক।” |