পোস্ত রুখতে জেলায় দু’কোটি
যে সব এলাকায় বেআইনি পোস্ত চাষ হয়, সেখানে চাষিদের বিকল্প চাষে উৎসাহ দিতে সরকারের থেকে ইতিমধ্যেই দু’কোটি টাকা পেয়েছে বর্ধমান। তা নিয়ে শীতের শুরু থেকেই কাজে নামতে চাইছে জেলা প্রশাসন। জেলার বাইরে থেকে দাদন দিয়ে যাতে পোস্ত চাষ করানো না যায়, তা দেখতে ‘টাস্ক ফোর্স’ও গড়া হচ্ছে।
কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী, জামালপুর, গলসি, কাঁকসা, অন্ডাল ফি বছরই ব্যাপক পোস্ত চাষ হয়। গত বছর প্রায় ৮৩৩ একর পোস্ত খেত নষ্ট করেছিল জেলা প্রশাসন। তাতেও চাষ নির্মূল হয়নি। তার একটা বড় কারণ যদি হয়, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া থেকে দাদন এবং বীজ দেওয়া, অপর কারণ অবশ্যই নজরদারির অভাব। সাধারণত আমন ধান উঠে যাওয়ার পরে অক্টোবর-নভেম্বরে ফাঁকা খেতে পোস্ত চাষ করেন কিছু চাষি। সরকার তাঁদের বোরো মরসুমে বিকল্প অথচ লাভজনক চাষের রাস্তা দেখাতে পারেনি, সেটাও অন্যতম কারণ।
তবে জেলা প্রশাসন প্রথমত জোর দিচ্ছে নজরদারির উপরেই। মঙ্গলবার বর্ধমানের টাউন হলে সচেতনতা শিবিরে একটি প্রচারপত্র বিলি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৮৫ সালের চেতনানাশকারী মাদক ও মনোবিকারক পদার্থ আইনের ৪৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, কোনও জমিতে আফিম বা পোস্ত চাষ হচ্ছে জেনেও যদি কোনও সরকারি অফিসার, পঞ্চায়েত সদস্য বা প্রধান পুলিশে খবর না দেন, তা দণ্ডযোগ্য অপরাধ।
বস্তুত, বহু মাদকেরই মূল উপাদান আসে পোস্ত চাষ থেকে। পোস্ত থেকে প্রথমে আফিম, পরে মর্ফিন ও শেষে হেরোইন তৈরি হয়। সভায় আইনের ধারা উল্লেখ করে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা হুঁশিয়ারি দেন, “বিশেষত পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের বলছি, এলাকায় কোথাও পোস্ত চাষ হয়েছে খবর পাওয়া মাত্র পুলিশকে লিখিত ভাবে জানান। আমাদের টাস্ক ফোর্স ডিসেম্বর থেকে এলাকায় এলাকায় ঘুরবে। যদি কোনও পঞ্চায়েত এলাকায় গিয়ে তারা দেখে যে পোস্ত চাষ হয়েছে অথচ পঞ্চায়েত খবর দেয়নি, চাষি ও জমির মালিকের পাশাপাশি আপনাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নারকোটিক কন্ট্রোল ব্যুরোর ইন্টেলিজেন্স অফিসার লক্ষ্মীকান্ত দত্ত জানান, গত বার রাজ্যে প্রায় ৮০০০ একর পোস্ত খেত নষ্ট করা হয়েছিল। তবু চাষ কমানো যায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকারের মতে, পোস্ত চাষ আটকাতে না পারার একটা বড় কারণ এতে প্রচুর টাকা খাটে। নদিয়া-মুর্শিদাবাদের কারবারিরা দাদন ও বীজ দিয়ে পরে শুধু আফিম নিয়ে যায়। তা থেকে তৈরি হেরোইন ছড়িয়ে পড়ে নানা এলাকায়। বর্ধমানও বাদ যায় না। তাই শুধু পোস্ত চাষ নয়, এই বহিরাগত কারবারিদের খবরও পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতে হবে পঞ্চায়েতের সদস্যদের।
সভায় মহকুমাশাসক, বিডিও, আবগারি দফতরের কর্মীদের মতো সরকারি অফিসারদের পাশাপাশি ছিলেন কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধানও। কাটোয়ার শ্রীখণ্ড পঞ্চায়েতের প্রধান দীপক মজুমদার বলেন, “আমাদের এলাকায় বহিরাগত লোকজন এসে পোস্ত চাষের দাদন দিচ্ছে, তার প্রমাণ আমরাও পেয়েছি।” আউশগ্রামের রামনগরের প্রধান সৈয়দ মুজতবা আলির বক্তব্য, “গত বার কয়েক জায়গায় পোস্ত খেত নষ্ট করা হলেও, মোট চাষের তুলনায় তা ছিল নেহাতই নগণ্য। পুলিশ যাতে আমাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঠিক মতো ব্যবস্থা নেয়, সেটাও দেখতে হবে।”
আপাতত ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতি ব্লকে পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সচেতনতা তৈরির কর্মসূচি নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। লিফলেট ও মাইকে প্রচারও চালানো হবে। ব্লক স্তরের সভায় পঞ্চায়েত বা স্থানীয় সরকারি অফিসারেরা হাজির না থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.