পশ্চিমবঙ্গের দাবি টিকল না।
মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই) মেডিক্যাল পাঠ্যক্রমের জন্য সারা দেশে অভিন্ন প্রবেশিকা চালু করতে চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ-সহ বেশ কিছু রাজ্য তাতে আপত্তি তুলেছিল। এ নিয়ে টানাপোড়েনও চলছিল বেশ কয়েক দিন ধরে। শেষমেশ আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই দেশ জুড়ে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজে অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা চালুর পক্ষে রায় দিল কেন্দ্রীয় সরকার।
সোমবার নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক, এমসিআইয়ের বোর্ড অফ গভর্নরস এবং বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তাদের মধ্যে আয়োজিত বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। স্থির হয়েছে, প্রতি রাজ্যে মেডিক্যালে মোট আসনের ৮৫% সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পড়ুয়াদের দিয়ে পূরণ করা যাবে। বাকি ১৫% রাখতে হবে অন্যান্য রাজ্যের ছেলেমেয়ের জন্য।
তবে এ রাজ্যে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র বাংলায় হবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বস্তুত ‘প্রতিবাদী’ বিভিন্ন রাজ্যের দাবি ছিল, সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষাতেও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ দিনের বৈঠকে শুধু হিন্দি ও ইংরেজিতে প্রশ্নপত্র করার সিদ্ধান্ত হলেও বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা আপত্তি তোলায় বিষয়টি ‘পুনর্বিবেচনা’-র জন্য পাঠাতে হয়েছে। আগামী ২৩ তারিখে দিল্লিতে ফের এ নিয়ে বৈঠক বসবে।
এবং আগামী বৈঠকে আঞ্চলিক ভাষায় প্রশ্নপত্রের বিষয়টি স্থির করার পাশাপাশি অভিন্ন প্রবেশিকার পাঠ্যক্রমও চূড়ান্ত হবে বলে সরকারি সূত্রের খবর। পুরো প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)। এমসিআইয়ের বোর্ড অফ গভর্নরসের এক সদস্য জানান, পাঠ্যক্রম ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামত চাওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের পরামর্শও চাওয়া হচ্ছে। মেডিক্যালে অভিন্ন প্রবেশিকা চালু করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক বেশ কিছু দিন ধরেই সরব। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-কর্তাদের মতে, দেশে সরকারি-বেসরকারি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের জন্য একটাই প্রবেশিকা থাকলে মান যেমন বজায় থাকবে, তেমন বিশেষ বিশেষ কলেজের উপরে চাপও কমবে। পরীক্ষার্থীরা স্রেফ একটা পরীক্ষা দিয়েই সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৩৩০টি মেডিক্যাল কলেজে, এমনকী অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইম্স)-এও ভর্তি হতে পারবেন। গত জুলাইয়েই এ বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
অন্য দিকে পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু-সহ বিভিন্ন রাজ্য গোড়া থেকেই এই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি-বেসরকারি কলেজ মিলিয়ে এমবিবিএসে আসন প্রায় ১৭০০। পূর্বতন বাম সরকারের যুক্তি ছিল: অভিন্ন প্রবেশিকা চালু হলে রাজ্যের পড়ুয়াদের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হবে।
অনেকে নিজের রাজ্যে সুযোগ না-পেয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হবেন। তাই রাজ্যে স্বতন্ত্র প্রবেশিকা থাকা বাঞ্ছনীয়। তবে অভিন্ন পরীক্ষা ব্যবস্থা একান্তই এড়ানো না-গেলে প্রশ্নপত্র অন্তত যাতে বাংলায় হয়, সেটা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। নতুন সরকার গঠনের পরে মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলায় একই অনুরোধ জানিয়ে কিছু দিন আগে কেন্দ্রকে চিঠি দিয়েছেন।
এ দিনের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের তরফে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের কার্যনির্বাহী স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “রাজ্যের ‘কোটা’র ব্যাপারে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে আমরা সহমত হতে পারছি না। যেমন, পরীক্ষার মাধ্যম হিসেবে শুধু হিন্দি-ইংরেজির কথা ঘোষণা হওয়ায় আমরা প্রবল আপত্তি তুলেছিলাম। তখন স্থির হয়, বিষয়টি ফের বিবেচনা করা হবে। আমরা অনড় থাকব।”
পাশাপাশি রাজ্যের দাবি, অভিন্ন ওই প্রবেশিকায় ‘নেগেটিভ মার্কিং’ রাখা চলবে না। এবং রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য নির্দিষ্ট ৮৫% আসনে ভর্তির ক্ষেত্রে কাউন্সেলিংয়ের দায়িত্ব রাজ্যের সেন্ট্রাল সিলেকশন কমিটি-র হাতেই দিতে হবে। কমিটির চেয়ারম্যান উৎপল দত্ত বলেন, “রাজ্যের এই সব দাবি আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাবে মেডিক্যাল কাউন্সিলকে জানিয়েছি।”
এ দিকে এমমিবিএস ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ডেন্টাল কলেজে যে প্রায় সাড়ে চারশো আসন, এত দিন সেগুলোও জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মাধ্যমে পূরণ করা হত। এ বার ডেন্টাল কলেজে ছাত্রভর্তির মাধ্যম কী হবে, সে সম্পর্কে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। |