জলই এখন ওঁদের কাছে আতঙ্ক!
সোমবার সকালে জমি দেখতে বেরিয়েছিলেন বলাই হাঁসদা। গিয়ে দেখেন, পরিস্থিতি এতটুকু পাল্টায়নি। জমির উপরে থইথই করছে জল। কবে নামবে কেউ জানে না। অতএব এই মরসুমের চাষ নষ্ট। খালের ধারে দাঁড়িয়ে বলাই বলছিলেন, “নদীতে জল বাড়লেই এই অবস্থা হয়। তা সে বন্যার জল হোক বা ব্যারাজের ছাড়া জল। এই মরসুমে ৩ বার ধানের চারা লাগিয়েছি। কোনও বারই বাঁচাতে পারলাম না। নদীর জলেই চাষ নষ্ট হল।” একই অবস্থা অরুণ খামরুই, নিমাই মান্নাদের।
জলে ডুবে থাকা জমির অদূরেই শরতের হাতছানি কাশফুলের সারি। দুর্গাপুজোর আর দেরি নেই। জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। চাষিরা ভেবেছিলেন, মরসুমের শুরুতে বৃষ্টি হয়েছে। তাই চাষ ভালই হবে। ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে সমস্যা হবে না। পুজোটা কাটবে আনন্দে। কিন্তু সেই ভাবনায় জল পড়েছে। অরুণের কথায়, “নতুন জামাকাপড় এ বার আর হচ্ছে না। সব জমিই তো জলের তলায়। কী ভাবে সংসার চলবে, এখন তাই ভেবে পাচ্ছি না।” |
ঝাড়খণ্ডের ব্যারাজ থেকে ছাড়া জলে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। নদী উপচে জল ঢুকেছে চাষজমিতে। কেশপুরের জিয়াগেড়্যা, সিরাসতি, মনাগেড়্যা-সহ বহু গ্রামের অধিকাংশ জমিতে জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। জল নামলেও নতুন করে আর চাষ শুরুর সম্ভাবনা নেই। ফলে কৃষকদের মাথায় হাত। এই সব গ্রামেই বাড়ি অরুণদের। বলাই হাঁসদার প্রায় ৩ বিঘা জমি রয়েছে। তাঁর কথায়, “এর আগে বন্যার জলে চাষ নষ্ট হয়েছে। এ বার ব্যারাজের ছাড়া জলে চাষ নষ্ট হল।” নিমাই মান্না’র দুই ছেলে, দুই মেয়ে। তাঁর কথায়,“ এই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে ভাবতেই পারিনি। আমার ২ বিঘা জমি আছে। এ বার চাষের শুরুটা ভালই হয়েছিল। কিন্তু নদীর জলই সব নষ্ট করল। পুজোয় নতুন জামাকাপড় কেনা আর হল না।” এই সব গ্রামে প্রায় ৭০০ পরিবারের বাস। পুজোর দোরগোড়ায় সর্বত্র যখন উৎসবের মেজাজ, তখন এই সব এলাকার মানুষের মুখ ভার। কেন এই পরিস্থিতি? গ্রামবাসীদের বক্তব্য, অদূরেই মেদিনীপুর সদর ব্লকের উদয়পুর এলাকা। পাশেই কাঁসাই নদী। এখানে একটি খাল রয়েছে। নদীতে জল বাড়লে এই খাল ধরেই হু হু করে জল ঢুকতে থাকে একের পর এক গ্রামে। অধিকাংশ জমি নীচু এলাকায় থাকায় সে সব জলের তলায় জলে যায়। এ বারও সেই একই পরিস্থিতি হল। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ঝাড়খন্ড থেকে ছাড়া জলে জেলায় বন্যা পরিস্থিতি না- হলেও বিস্তীর্ন এলাকার ফসল এ ভাবে নষ্ট হয়েছে। জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত’র কথায়,“ নদীর জলস্তর বেড়েছে। বেশ কিছু এলাকায় জল ঢুকেই এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
নদীর জল ওঁদের পুজোর আনন্দটাই যেন মাটি করে ছাড়ল! |