প্রেসিডেন্সি নিয়ে সিদ্ধান্ত রাজ্যের
কাউন্সিলে বদল, এলেন মেন্টর গ্রুপের সদস্যরাই
মেন্টর গ্রুপের সঙ্গে কাউন্সিলের বিরোধ বাধছিল পদে পদে। শেষ পর্যন্ত কাউন্সিলের খোলনলচে বদলে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করতে চাইল রাজ্য সরকার। বাম আমলে মনোনীত সব সদস্যকে সরিয়ে কাউন্সিলে এ বার মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের বসানো হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে খবর।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুগত বসুর নেতৃত্বাধীন মেন্টর গ্রুপে এ দিন আরও তিন জনকে সদস্য করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁরা হলেন, টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের প্রাক্তন অধিকর্তা সব্যসাচী ভট্টাচার্য, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপিকা নয়নজ্যোত লাহিড়ি এবং আইআইএম-কলকাতার অধ্যাপক রাহুল মুখোপাধ্যায়। সদস্যরা মোটামুটি ভাবে এক হলেও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল এবং মেন্টর গ্রুপ, দু’য়ের অস্তিত্বই বজায় থাকবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা সচিব সতীশ তিওয়ারি।
আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি প্রণয়ন ও বিধিসম্মত বিভিন্ন কমিটি গঠিত হওয়া পর্যন্ত মনোনীত কাউন্সিলের কাজ করার কথা। কিন্তু রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রেসিডেন্সির উন্নয়নের জন্য একটি মেন্টর গ্রুপ গড়েন। যার মুখ্য উপদেষ্টা হন অধ্যাপক অমর্ত্য সেন। ঐতিহ্যবাহী ওই প্রতিষ্ঠানের হালহকিকত বুঝে তাকে বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে স্থান করে দিতে উপযুক্ত সুপারিশ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় মেন্টর গ্রুপকে।
কিন্তু হাতে-কলমে কাজ করতে গিয়ে একাধিক বার কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের মতের অমিল প্রকাশ্যে আসছিল। স্নাতকোত্তরে নতুন বিষয় খোলা, স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্সি কলেজের পড়ুয়াদের জন্য ৫০ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা এই রকম নানা বিষয়ে দুই তরফের মতের অমিল দেখা দিয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু শীঘ্রই ওই সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সির কাউন্সিল থেকে সরকার মনোনীত সদস্যদের সবাইকে সরিয়ে দিয়ে তাঁদের জায়গায় মেন্টর গ্রুপের সদস্যদের এনে সেই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করল রাজ্য সরকার।
প্রেসিডেন্সির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে যে ভাবে কাউন্সিল ও মেন্টর গ্রুপের বনিবনার অভাব সামনে এসে পড়েছিল, তাতে ওই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পথে বাধা আসতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন। প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে দিতে ২০১৭ সালের সময়সীমা নিজেই ঠিক করে নিয়েছে মেন্টর গ্রুপ। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন, কাজের ক্ষেত্রে তাদের অবাধ স্বাধীনতা। মুখ্যমন্ত্রীও প্রকাশ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অথচ কাজ করতে গিয়ে কাউন্সিলের সঙ্গে বার বারই সঙ্ঘাত তৈরি হচ্ছিল মেন্টর গ্রুপের। তাই এক অর্থে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত অবধারিত ছিল বলে শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন।
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা এ দিন বলেন, “কাউন্সিলের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের সমন্বয়ের অভাব হচ্ছিল। তাই নিজেদের মনোনীত সদস্য প্রত্যাহার করে নিল সরকার।” আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে এই সংক্রান্ত ফাইল পাঠানো হয়েছে। তাঁর ছাড়পত্র পেয়েই সরকার নির্দেশ জারি করবে বলে আশা করছেন দফতরের কর্তারা। মেন্টর গ্রুপের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সরকারি নির্দেশিকাও শীঘ্রই জারি হবে বলে ওই কর্তা জানান।
সরকারের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তাঁর কিছুই জানা নেই বলে জানিয়েছেন মেন্টর গ্রুপের মুখ্য উপদেষ্টা অমর্ত্য সেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে অমর্ত্যবাবু বলেন, “আমি তো এর মধ্যে ঢুকতেই চাইছিলাম না। মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যানকেই এ ব্যাপারে বলতে হবে। বিষয়টি সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। তাই মন্তব্য করা উচিত হবে না।” রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু। তিনি বলেন, “যে হেতু এ ব্যাপারে সরকারি বিজ্ঞপ্তি এখনও জারি হয়নি, তাই কিছু বলব না। তবে প্রেসিডেন্সির উন্নতির জন্য মেন্টর গ্রুপ যথাসাধ্য করবে।”
কিন্তু মেন্টর গ্রুপের বেশির ভাগ সদস্যই ভিন রাজ্যে বা বিদেশে থাকেন। তাঁরা কী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিত্য দিনের কাজকর্ম পরিচালনা করবেন? মেন্টর গ্রুপের সদস্য স্বপন চক্রবর্তী বলেন, “সরকারের উদ্দেশ্য ভাল। কিন্তু যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হল, তাঁদের যেন কাজের সময় পাওয়া যায়।” যদিও উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তার কথায়, “বিশ্বায়ন, উন্নয়নের এই যুগে স্থানের দূরত্বটা কোনও সমস্যাই নয়।”
স্বাভাবিক ভাবেই নতুন সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন বামফ্রন্ট জমানার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সুদর্শন রায়চৌধুরী। তাঁর কথায়, “কাউন্সিলের সদস্য, বিশিষ্ট সব ব্যক্তিদের কালিমালিপ্ত করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাদের সরানো হল অমিয় বাগচী, মুশিরুল হাসান, অনিন্দ্য মিত্র, বিকাশ সিংহ, শঙ্কর পালদের? এ তো নতুন ধরনের আমরা-ওরা। বামফ্রন্ট আমলে যা হয়েছে, তার সব কিছুকেই নিশ্চিহ্ন করতে হবে বলেই যেন এমন সিদ্ধান্ত!” শিক্ষাক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে দাবি করে সরকার নগ্ন ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করল বলেও অভিযোগ সুদর্শনবাবুর। তাঁর কথায়, “মেন্টর গ্রুপের মুখ্য উপদেষ্টা অমর্ত্য সেন কাউন্সিলের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করতে বলেছিলেন। সরকার তো তাঁর উপদেশও মানল না।”
প্রেসিডেন্সির বর্তমান কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য বিকাশ সিংহ বলেন, “চূড়ান্ত অপমানিত বোধ করছি। কোনও কথা নেই, আলাপ-আলোচনা নেই, একেবারে অপসারণ।” প্রেসিডেন্সির প্রতি টানেই তিনি কাউন্সিলের সদস্য হতে রাজি হয়েছিলেন বলে বিকাশবাবু জানান। তাঁর কথায়, “আমাদেরও তো কিছু প্রতিষ্ঠা আছে, অন্য কাজও আছে। গিয়েছিলাম কেবল প্রেসিডেন্সির টানে। প্রেসিডেন্সির জন্য শুভকামনা রইল।” অধ্যাপক মুশিরুল হাসান বলেছেন, “আশা করি মেন্টর গ্রুপ ভাল ভাবে কাজ করবে।”
প্রেসিডেন্সির উপাচার্য অমিতা চট্টোপাধ্যায় জানান, সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা সংবাদ মাধ্যমের কাছে থেকেই তিনি শুনছেন। এ ব্যাপারে সরকারি ভাবে তাঁর কিছুই জানা নেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.