এক দিকে, দেশে গত ২১ মাসে সর্বনিম্ন (৩.৩%) শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার। অন্য দিকে, গ্রিসের টালমাটাল অর্থনীতি নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তৈরি হওয়া আতঙ্ক। মূলত এই দু’য়ের ‘অশনি সঙ্কেতে’ই সোমবার বড়সড় পতনের মুখ দেখল শেয়ার বাজার। সপ্তাহের প্রথম দিনেই প্রায় ৩৬৫ পয়েন্ট খোয়াল সেনসেক্স। থিতু হল গত দু’সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অঙ্কে। ৫ হাজারের নীচে নেমে গেল ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফটি-ও।
তবে ইন্ডিকাস অ্যানালিটিকস্-এর মতো আর্থিক সমীক্ষা সংস্থাগুলির মতে, ভারতীয় অর্থনীতির উপর এই ‘ধাক্কা’ সাময়িক। অর্থবর্ষের চতুর্থ ত্রৈমাসিক থেকেই ফের তার চাকা ঘোরার সম্ভাবনা। যে কারণে, অর্থবর্ষ শেষে বৃদ্ধির হার ৮.৫ শতাংশের আশেপাশে থাকবে বলেই এখনও মনে করছে তারা। বৃদ্ধির শ্লথ গতি আর আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি এই দু’য়ের মধ্যে দ্বিতীয়টিই এখনও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ। তাই আগামী শুক্রবার ঋণনীতি পর্যালোচনায় দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফের সুদ বৃদ্ধির পথে হাঁটতে পারে বলে তাঁদের অভিমত।
এ দিন কেন্দ্রের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুলাইয়ে ৩.৩ শতাংশের তলানিতে নেমে গিয়েছে শিল্প বৃদ্ধির হার। অথচ আগের বছর জুলাইয়ে তা ছিল ৯.৯%। এমনকী, গত জুনেও ছিল ৮.৮%। যে কারণে শিল্প বৃদ্ধি কমলেও, প্রত্যাশা ছিল তা থাকবে ৬.১ শতাংশের আশেপাশেই। তাই এক ধাক্কায় শিল্পোৎপাদন সূচকের এতটা নীচে তলিয়ে যাওয়া এ দিন বেসামাল করে দিয়েছে শেয়ার বাজারকে।
বাজারকে বিশেষ ভাবে আতঙ্কিত করেছে মূলধনী পণ্য ক্ষেত্রে সঙ্কোচন (উৎপাদন কমেছে ১৫.২%) এবং ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির হতাশাজনক হার। মূল্যবৃদ্ধি রুখতে লাগাতার সুদ বাড়ানোই এর অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। বাজারকে হতাশ করেছে উৎপাদন শিল্প (২.৩%) এবং খনন শিল্পের (২.৮%) বৃদ্ধির হারও। অর্থবর্ষ শেষে সার্বিক শিল্প বৃদ্ধি বর্তমান পূর্বাভাসের (৭.১%) তুলনায় কমতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রধান আর্থিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন। আর অর্থ মন্ত্রকের প্রধান উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মতে, শিল্প বৃদ্ধির গতি যে ভাবে শ্লথ হচ্ছে, তাতে মূল্যবৃদ্ধি যুঝতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের টানা সুদ বৃদ্ধিও এ বার ফিরে দেখা উচিত।
দেশে শিল্প বৃদ্ধি নিয়ে এই হতাশার পাশাপাশি সূচকের পতনে ইন্ধন জুগিয়েছে গ্রিসের আর্থিক ‘স্বাস্থ্য’ নিয়ে নতুন করে তৈরি হওয়া আতঙ্ক। পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের সিইও এবং এমডি অক্ষয় গুপ্তের মতে, পাহাড় প্রমাণ ধার শোধ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে গ্রিসের পক্ষে। আর তা হলে, প্রথমেই এর প্রভাব পড়বে ফরাসি ও জার্মান ব্যাঙ্কগুলির উপরে। সে ক্ষেত্রে আরও ঘোরালো হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির আর্থিক পরিস্থিতি। যার ছায়া পড়বে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
তাই এক দিকে, দেশে একেবারে ঢিমে হয়ে পড়া শিল্প বৃদ্ধির হার। আর অন্য দিকে, ইউরোপেও আর্থিক পরিস্থিতি জটিল হওয়ায় রফতানির বাজার হারানোর আতঙ্ক। এই দু’য়ের টানেই এ দিন ৩৬৫ পয়েন্ট পড়ে দিনের শেষে ১৬,৫০১.৭৪ অঙ্কে দাঁড়িয়েছে সেনসেক্স। নিফটি-ও ১১২.৬৫ পয়েন্ট পড়ে থিতু হয়েছে ৪,৯৪৬.৮০ অঙ্কে। |